ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাবে

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেলের দাম যে পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে তাতে ভোক্তা পর্যায়ে অসহনীয় ব্যয়বৃদ্ধি ঘটবে বলে মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তার মতে, মূল্যস্ফীতিজনিত যে চাপ এখন জনগণের ওপর রয়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে। ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাবে। ফলে, ন্যুনতম জীবনমান ধরে রাখার বিষয়টি আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।

সরকার এর আগে গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল। তখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল লিটারপ্রতি ৮০ টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর বাসভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ, যা তেলের দাম বাড়ানোর হারের চেয়ে অনেক বেশি। একইভাবে তখন লঞ্চভাড়া বাড়ানো হয় ৩৫ শতাংশ।

জ্বালানি তেলের দাম একলাফে যে পরিমাণ বাড়ানো হলো তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবের বিষয়ে আজ শনিবার খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন দাতা দেশ শর্ত দিয়েছে সামনে বড় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে, তার একটা প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে হয়তো এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে মনে করি, জ্বালানির ক্ষেত্রে ভোক্তার ওপরে বা ব্যবহারকারীর ওপরে এই চাপটি না দিয়ে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনাটি অন্যভাবে করা যেত।'

তার মতে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে পরিবহন, কৃষি, শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের ওপর।

তিনি বলেন, 'ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খাতে হয়তো ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু কৃষিতে সেচের কাজে ডিজেলের ব্যবহার হয় উল্লেখযোগ্য হারে, সুতরাং আগামী বোরো মৌসুমে সেচের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ধানের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং তার কারণে হয়তো চালের ক্ষেত্রেও মূল্যের একটা প্রতিক্রিয়া থাকবে '

সম্প্রতি সারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সামনে এনে গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে বলেন, 'ইউরিয়ার মূল্য বৃদ্ধিজনিত প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় সার্বিকভাবেই কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে।'

শিল্পখাতে এর প্রভাবের বিষয়ে তার ভাষ্য, 'শিল্পখাতে যেখানে ডিজেল ব্যবহার হয়, বিশেষ করে ক্যাপটিভ পাওয়ারভিত্তিক যে শিল্প কারখানাগুলো, সেখানে শিল্পপণ্যের ওপরেও এর প্রতিক্রিয়া থাকবে। ডিজেলচালিত যেসব জেনারেটর ব্যবহার হয় লোডশেডিংয়ের সময়, দোকানপাটেও এর একটা প্রতিক্রিয়া থাকবে।'

সব মিলিয়ে গোলাম সিপিডির গবেষণা পরিচালকের বক্তব্য, '(জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য) সার্বিকভাবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটবে। মূল্যস্থীতির যে চাপটি এই মুহেূর্তে রয়েছে জনগণের ওপরে, সাধারণ ক্রেতার ওপরে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে সেটা আরেক দফা বাড়বে।'

জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে এই খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, 'আমরা মনে করি এই ধরনের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা যদি দাতাতের শর্তের অংশ হিসেবেও হয়, তাহলেও এইভাবে তা ভোক্তার ওপরে না চাপিয়ে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার আওতায় করা উচিত ছিল।'

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'যেমন ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রতিবছর বিপিসির কাছ থেকে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে নিয়েছে (সরকার)। সেই অর্থটি যদি (সরকার) না নিতো, তাহলে বিপিসির জন্য এই মুহূর্তে ভর্তুকির জন্য সরকারের ওপর নির্ভর করতে হতো না এবং বিপিসি তার নিজের অর্থ দিয়েই হয়তো তার জ্বালানি ব্যয় পরিশোধ করতে পারত।'

তিনি আরও বলেন, 'ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু সেটি জনগণের ওপরে না চাপিয়ে দিয়ে বরং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার উদ্যোগগুলোর আলোকে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া উচিত ছিল।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Build national unity to tackle ongoing challenges: BNP

Fakhrul, after meeting chief adviser, says govt should hold discussions with all political parties, calls for swift polls following reforms

1h ago