মানুষের প্রতি অবজ্ঞা থেকেই জ্বালানি তেলের দাম এতটা বাড়ানো হলো: বদরূল ইমাম

বদরূল ইমাম
বদরূল ইমাম। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমতির দিকে, তখন বাংলাদেশে দাম বৃদ্ধি করা হলো। ডিজেল ও কেরোসিনে প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। ৮০ টাকা লিটারের ডিজেল ও কেরোসিন এখন ১১৪ টাকা। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এক ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ১৪০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। যা এখন কম বেশি ৯০ ডলারে নেমে এসেছে। ৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজার এক ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ৮৯-৯৫ ডলারের মধ্যে।

বাংলাদেশে প্রতি লিটার অকটেনে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ ও পেট্রলে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। সাধারণত অকটেন ও পেট্রল আমরা আমদানি করি না। মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণ আমদানি করা হয়। যদিও গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'অকটেন এবং পেট্রল কিন্তু আমাদের কিনতে হয় না। এটা আমরা যে গ্যাস উত্তোলন করি, সেখান থেকে বাই প্রডাক্ট হিসেবে পেট্রল ও অকটেন পাই। বরং অকটেন আমাদের যতটুকু চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি পেট্রল ও অকটেন আমাদের আছে। আমরা অনেক সময় বাইরে বিক্রিও করি।'

এ বিষয়ে আজ শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম দ্য ডেইলি স্টারকে টেলিফোনে বলেন, রাতের অন্ধকারে ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে বাড়ানো হলো তেলের দাম। কোনো প্রস্তুতি নেই, জনগণের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা নেই। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় গণশুনানি হয়। সকলে জানতে পারে যে, দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে কিনা। যদি যৌক্তিকতা থাকে তাহলে তা কতটা। এ সব জিনিস বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করে গণশুনানি হয়।

কিন্তু তেলের দামের ক্ষেত্রে এই লুকোচুরিটা কেন? হঠাৎ করে গভীর রাতে ভোক্তা পর্যায়ে কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে হুট করে ইচ্ছে মতো একটা দাম নির্ধারণ করে দিলাম। এটাকে আমি মোটেও সুষ্ঠু একটা ব্যবস্থাপনার মনে করি না।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম এখন নিম্নমুখী। আর এই যে সমন্বয়ের কথা ওনারা বারবার বলেন, কিন্তু তেলের দাম যখন দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম ছিল আমরা তো কম দামে তেল কিনিনি। ওই টাকা যদি হিসাব করা হয়, তাহলে লাভের কত টাকা জমা আছে বিপিসির কাছে। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সেই টাকাটা কি সমন্বয় করা যায় না?

সেটা না করে এতোটা বাড়াল কেন? লিটার প্রতি ডিজেলে বাড়িয়েছে ৩৪ টাকা। ১ লিটারে ৩৪ টাকা দাম বৃদ্ধি করা যেনতেন ব্যাপার না। অকটেনে বাড়িয়েছে ৪৬ টাকা, পেট্রলে বাড়িয়েছে ৪৪ টাকা। এটা কোনো বিবেচনাতেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। পেট্রল, অকটেন আমাদের খুব একটা আমদানিও করতে হয় না। তবুও দাম বাড়ানোর সময় সব তেলের দামই বাড়ানো হয়। তাই বলে এতটা বাড়ানো হবে?

আমি বলব, মানুষের প্রতি অবজ্ঞা থেকে এসেছে এমন সিদ্ধান্ত। মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে জ্বালানি তেলের মূল্য এতটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব ছিল না।

বিশেষ করে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের অবস্থা আর্থিকভাবে যে কতটা সংকটপূর্ণ সেটাতো সরকারের বিবেচনায় থাকা দরকার ছিল। কিন্তু, তেলের দাম বৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তাতে মনে হয় না যে তাদের এই বিবেচনাটা খুব একটা আছে।

দাম বাড়ানোর এই বিষয়টাই তো আমরা দেখছি যে ঘোলাটে করে দিয়েছে সরকার। প্রথম কথা এই প্রশ্ন করাই যায় এতোটা দাম বৃদ্ধি কেন? বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ১৪০ ডলার থেকে কমে ৯০ ডলারে চলে এসেছে। দাম আবার হয়ত বাড়তে পারে। কিন্তু দাম আগামীতে যদি আরও কমে যায়? সরকার তো একবার দাম বাড়িয়ে দিলে বিশ্ব বাজারে দাম কমলেও আর দেশের বাজারে দাম কমান না।

তেলের দামের কারণে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে। মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

Comments

The Daily Star  | English

NBR revises VAT, SD on 9 items following public outcry 

NBR said it has slashed VAT on ready-made clothes, restaurants, sweets, non-AC hotels and motor workshops and mostly restored to the previous levels

1h ago