কোন ব্যথায় গরম সেঁক, কোন ব্যথায় ঠান্ডা

গরম নাকি ঠান্ডা সেঁক
ছবি: সংগৃহীত

ব্যথা উপশমে সেঁক খুব উপকারী। কিন্তু জানা জরুরি, কোন সেঁক কখন দিতে হবে। এই সম্পর্কে জানিয়েছেন ফেলোশিপ অন অ্যাডভান্স বায়োলজিক থেরাপি মাসকুলোস্কেলেটাল আল্ট্রাসনোগ্রাম, কেটিপিএইচ, সিংগাপুর এবং এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের রিউম্যাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিব ইমতিয়াজ আহমাদ।

ব্যথা কমাতে সেঁক

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, সেঁক দেওয়া বলতে বোঝায় তাপমাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। ব্যথা কমাতে সেঁক দেওয়ার এই পদ্ধতিটি অতি প্রাচীন, বিজ্ঞানসম্মত এবং ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে অনেক দিন থেকেই বিবেচিত। সেঁক দেওয়ার পদ্ধতি দুই ধরনের—গরম সেঁক ও ঠান্ডা সেঁক।

ব্যথার রোগীরা তাদের ব্যথা উপশমের জন্য গরম সেঁক নিতে হবে নাকি ঠান্ডা সেঁক নিতে হবে এটি নিয়ে অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে পারেন। তাই যেকোনো ব্যথায় সেঁক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গরম সেঁক কখন ও কীভাবে নিতে হয়

দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা, বাতের ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, মাংশপেশিতে ব্যথা, লিগামেন্ট ইনজুরিসহ বিবিধ কারণে গরম সেঁক দেওয়ার কথা বলেন ডা. হাবিব ইমতিয়াজ। ব্যথা আক্রান্ত স্থানে গরম সেঁক দিলে সেখানে যে রক্তনালী আছে সেটিকে প্রসারিত করে এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়। এর ফলে রোগীর আক্রান্ত স্থানে ব্যথা কমে এবং আরাম বোধ হয়।

বাতের একটি অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির স্টিফনেস বা শক্ত হওয়া। দীর্ঘসময় যদি অস্থিসন্ধির কোনো ব্যবহার না হয় তখন সেটি শক্ত হয়ে যায়, আর এই স্টিফনেস কমিয়ে আনার একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে গরম সেঁক দেওয়া।

একজন রোগী কিভাবে গরম সেঁক নেবেন সেটি জানা খুব জরুরি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে গরম সেঁক নেওয়া যেতে পারে। যেমন-

১. হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে ব্যথা আক্রান্ত স্থানে গরম সেঁক দিতে পারেন। 

২. জেল ওভেনে রেখে গরম করে সেঁক নেওয়া যেতে পারে। জেল প্যাকে থাকা নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে সঠিকভাবে।

৩. কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড়, গামছা বা তোয়ালে ভিজিয়ে এবং নিংড়ে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে গরম ভাপ দিতে পারেন।

৪. শুকনো কাপড় কোনো একটি গরম সারফেসে রেখে গরম করে নিয়ে সেঁক নিতে পারেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে গরম সেঁক নেওয়ার সময় সর্তক থাকতে হবে। যেমন- যাদের ত্বকে প্রদাহ আছে, ত্বকে চর্মরোগ, ক্ষত আছে তাদের গরম সেঁক নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। যাদের ত্বকে বোধশক্তি কম, দীর্ঘমেয়াদী নিউরোপ্যাথিতে ভুগছেন এবং ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীরা গরমের মাত্রা বুঝতে পারেন না। গরম বেশি না কম সেটি বুঝতে না পারার কারণে সেক্ষেত্রে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ঘুমানোর আগে গরম সেঁক না নেওয়াই ভালো, ঘুমিয়ে পড়লে অসর্তকতায় ত্বক পুড়ে যেতে পারে।

ঠান্ডা সেঁক কখন ও কীভাবে নিতে হয়

সাধারণত হঠাৎ কোনো ব্যথা পেলে বা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো আঘাত পেলে সেই ধরনের ব্যথার ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক নেওয়ার কথা বলেন ডা. হাবিব ইমতিয়াজ। আঘাতপ্রাপ্ত বা ব্যথার স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিলে রক্ত সঞ্চালন হ্রাস পায় এবং রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে আক্রান্ত স্থান বা মচকে যাওয়ার পর যে ফুলে যাওয়া সেটি বিলম্বিত হয় এবং ব্যথা কমে আসে। ঠান্ডা সেঁক সাধারণত অ্যাকিউট ইনজুরির ক্ষেত্রে দিতে পারি। বিভিন্নভাবে নেওয়া যায় ঠান্ডা সেঁক। যেমন-

১. আইস প্যাক বা ঠান্ডা পানি ভর্তি ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে আক্রান্ত স্থানে।

২. বরফের টুকরো কাপড়ে মুড়িয়ে আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা সেঁক নিতে পারেন।

৩. ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ঠান্ডা সেঁক নেওয়া যেতে পারে।

৪. জেল হিসেবে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন, জেল প্যাকের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

ঠান্ডা সেঁক নেওয়ায় ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। যেমন- ঠান্ডার প্রতি সংবেদনশীল এমন রোগী, অ্যালার্জি আছে, যাদের রক্ত সঞ্চালনজনিত কোনো সমস্যা আছে, পায়ের ধমনীতে ব্লক আছে তাদের ঠান্ডা সেঁক নেওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। সরাসরি ত্বকে বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যাবে না, এতে আইস বার্ন, ত্বকে ব্লিস্টার এবং আলসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Riyad-led gang forcibly took cheques of Tk 5cr from another ex-AL MP

The cheques police recovered from the house of Riyad worth around Tk 2.25 crore belonged to former AL lawmaker Abul Kalam Azad

1h ago