মরদেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালের মর্গে

ইসরায়েলের হামলায় মাটির সাথে মিশে গেছে গাজা উপত্যকা। অন্তত ১৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এ পর্যন্ত। নিহতদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী ও শিশু বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহতদের মরদেহের দেখে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: এপি

গত শনিবার ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের হামলার পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার বোমা ফেলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মরদেহ নেওয়া হচ্ছে গাজা শহরের শিফা হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েল-হামাস চলমান সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে এসে এত মরদেহের ভার নিতে পারছে না গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটি।

গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১ হাজার ৫৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০০ জন শিশু ও ২৬৭ জন নারী। আহত হয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ৬১২ জন।

জাবালিয়া রিফিউজি ক্যাম্পে হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করছে স্থানীয়রা। ছবি: এপি

বৃহস্পতিবার গাজা শহরের উত্তরে শাতি শরণার্থী শিবিরে ভারী বোমা হামলায় অসংখ্য মানুষ ক্ষতবিক্ষত হয়। শিফা হাসপাতালের আইসিইউ ভরে যায়। হাসপাতালের করিডোরে রাখা হয় আহতদের।

এদিন হামলায় নিহতদের মধ্যে ইয়াসের আল-মাসরি, তার স্ত্রী ও শিশুকন্যার মরদেহ একসঙ্গে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎকরা মাসরি ও তার মেয়ের ছবি তুলে স্বজনের খোঁজ করছিলেন।

বার্তাসংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ২৩ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজায় ইসরায়েলের ভারী বোমা হামলায় যত দ্রুত মানুষ নিহত হচ্ছে, অত দ্রুত স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করতে পারছেন না।

শিফা হাসপাতালের মর্গে একসঙ্গে ৩০টি মরদেহ রাখা যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন অসংখ্য ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন। বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে আনলেও রাখার জায়গা হচ্ছে না।

এ অবস্থায় হিমঘরের বাইরে তিনটি স্তূপে মরদেহ রাখতে হয়েছে। হাসপাতালের পার্কিং লটেও রাখতে হয়েছে বেশ কিছু মরদেহ।

হাসপাতালের নার্স আবু ইলিয়াস শোবাকি বলেন, 'লাশ আসছেই। হাসপাতাল এখন কবরস্থান মনে হচ্ছে। আমি মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে ক্লান্ত।'

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এবারের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা এর আগের অন্তত ৪টি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের চেয়ে ছাড়িয়ে গেছে।

এমনিতেই অবরুদ্ধ গাজার হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তার ওপর এখন গাজায় পানি-খাদ্য-বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রবেশ আটকে দিয়েছে ইসরায়েল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা বলেন, 'আমরা সংকটময় পরিস্থিতিতে আছি। আহতদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো যায় না, তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, মৃতদের মর্গে নেওয়া যাচ্ছে না।'

ইসরায়েলের হামলায় মাটির সাথে মিশে গেছে গাজা উপত্যকা। ঘর হারিয়েছে অন্তত ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা হামাসের জঙ্গি অবকাঠামোতে হামলা করছে এবং বেসামরিক নাগরিকরা যেন আহত না হয়, সেভাবে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করছে। আর এত এত নিহত ও আহতের কথা উল্লেখ করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।

'হামলা এবং অবরোধের কারণে গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে' উল্লেখ করে শিফা হাসপাতালের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবু সেলিম বলেন, 'কোনো অবস্থাতেই সেবাদান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আহতরা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে রয়েছে। তাদের জন্য একটি বেডের ব্যবস্থা করতে পারছি না।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Army given magistracy power

In order to improve law and order, the government last night gave the power of magistracy to commissioned army officers for 60 days.

52m ago