কোথায় যাব আমরা

হামাস ইসরায়েল যুদ্ধ
গাজা শহরের বিচ রিফিউজি ক্যাম্প থেকে ধ্বংসস্তুপের মধ্য দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

শনিবার রাতে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ যখন চলছে,  সেসময় আমের আশর তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে কাছের একটি হাসপাতালে ছুটছেন। সে রাতে তার স্ত্রী এক ছেলের জন্ম দেন। এটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান। তবে নবজাতককে নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখেন কোথাও তাদের ঘরের কোনো চিহ্ন নেই। বোমার আঘাতে সব গুড়িয়ে গেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস শনিবার ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর গাজা সিটির পশ্চিমে আল-নাসর এলাকায় ওই দম্পতির ১১ তলা ভবনে বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী।

আশর আল জাজিরাকে বলেন, ক্রমাগত বোমা বর্ষণের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে কীভাবে হাসপাতালে যাব এটা নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলাম। তবে কখনও ভাবিনি বোমায় আমাদের ঘর এভাবে ধুলায় মিলিয়ে যাবে।

গাজা শহরের ওই ভবনে প্রায় ৮০টি পরিবার বসবাস করত।

গত শনিবার হামাসের আকস্মিক হামলার পর রোববার ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সেইসঙ্গে নেওয়া হয় উল্লেখযোগ্য সামরিক পদক্ষেপ। দুই পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় গাজায় এরই মধ্যে নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে, দুই পক্ষে নিহত হয়েছে ১১শ এর বেশি মানুষ

ধ্বংসস্তূপ থেকে জিনিসপত্র বের সময় আশর বলেন, 'আজ শিশু, নারীসহ আমরা সবাই গৃহহীন। এই কঠিন সময়ে আমরা কোথায় যাব?'

বিমান হামলায় বাড়ির পেছনের ভবন ভেঙে নিজেদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাড়ি ছাড়েন পূর্ব গাজার শাদি আল-হাসি এবং তার বড় ভাই। তারা গাজা শহরের আল-ওয়াতান টাওয়ারে তাদের বাবা-মায়ের অ্যাপার্টমেন্টে আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিলেন।

'ভোর চারটার দিকে আমাদের বলা হয় ইসরায়েল বোমা হামলা করবে এখনই ভবন খালি করে দেওয়ার জন্য,' আল জাজিরাকে আল হাসি।

ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধ
গাজার আল ওয়াতান টাওয়ার গত শনিবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ছবি: এএফপি

বোমা হামলার কয়েক মিনিট আগে সিভিল ডিফেন্সের যানবাহন এবং অ্যাম্বুলেন্স ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে আসে, যার ফলে সেখানে বসবাসকারী পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আমি এখনও বিপর্যস্ততা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। একটি আবাসিক ভবন যেখানে একটি ক্লিনিক কিছু কোম্পানি আর একটা বিউটি সেন্টার আছে এরকম একটি বেসামরিক ভবন বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু হলো? কোথায় ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতার দাবি, আল জাজিরাকে বলেন আল হাসি।

'মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমি আমার ভাই আমার পরিবার সবাই গৃহহীন হয়ে পড়েছি এবং আমরা জানি না আগামীতে কী ঘটবে।'

আল-ওয়াতান টাওয়ারের বিপরীতে একটি ভবনে বসবাসকারী ইউসুফ আল-বাওয়াব আল জাজিরাকে বলেন, তারা স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় ইসরায়েলি বাহিনীর কাছ থেকে তাদের বাড়ি খালি করার জন্য একটি সতর্কতা পেয়েছিলেন।

'আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম। টাওয়ারটি আমাদের থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে এবং এটি একটি বেসামরিক টাওয়ার। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী আমরা সেখানে কোনো প্রতিরোধমূলক কার্যকলাপ লক্ষ্য করিনি।'

তিনি বলেন, ইসরায়েল বলছে তারা হামাসের মালিকানাধীন ভবন, সামরিক স্থাপনা ও হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তু করছে। তবে আমি মনে করি হামাসের ওপর চাপ তৈরিতে ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে। কিন্তু আমাদের দোষ কোথায়? আমরা কোথায় যাব?

আল-বাওয়াব সেখানে আরও ১৫০ জন লোকের সাথে যে ভবনে থাকতেন তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোমা হামলার পর আল-ওয়াতান টাওয়ারের আশেপাশের আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি ও ভবনও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া এলাকার মোহাম্মদ সালাহ বলেন, তিনি তার বাড়ি ছেড়ে ওই এলাকার অন্যান্য পরিবারের সঙ্গে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, 'গত রাতে আমাদের এলাকায় ইসরায়েলি বিমানগুলো এলোপাতাড়ি বোমা বর্ষণ করেছে। পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক ছিল, তাই আমি অন্যান্যদের সাথে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।'

ইসরায়েলি বোমা বেসামরিক ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। প্রতিটি যুদ্ধে নির্বিচারে বোমা বর্ষণের কারণে আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে আসতে হয়।

'আমরা বছরের পর বছর ধরে এখানে বাস করছি, কেউ আমাদের পক্ষে দাঁড়ায়নি বা রক্ষা করেনি। আমাদের দখলদারদের প্রতিহত করার অধিকার আমাদের আছে,' বলেন সালাহ।

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

10h ago