ইসরায়েল বনাম হামাস

ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাতের তৃতীয় দিনে গাজায় বিমান হামলার পর ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের ভূখণ্ডে নজিরবিহীন ও তীব্র হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলার প্রত্যুত্তরে ইতোমধ্যে গাজা উপত্যকায় পালটা হামলা ও অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। আপাতত বিমান হামলা ও কামানের গোলার হামলা চললেও শিগগির স্থল বাহিনী এতে যোগ দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের সামরিক শক্তি নিয়ে তুলনামূলক চিত্র দেখিয়েছে এনডিটিভি।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, হামাস ও ইসরায়েলের সামরিক শক্তির সরাসরি তুলনা কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক, কেননা হামাসের লড়াইয়ের ধরন প্রথাগত সামরিক বাহিনীর মতো নয়।

হামাস ড্রোন ও গ্লাইডারের মতো অপেক্ষাকৃত নতুন অস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করেই যুদ্ধে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

চলমান পরিস্থিতিতে যে বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী বলে মনে হচ্ছে, তা হলো, গাজায় স্থল হামলা পরিচালনা করলে ইসরায়েল তাদের উন্নত ও প্রথাগত অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করবে।

হামাসের সামরিক সক্ষমতা

হামাসের গত শনিবারের হামলাটি ছিল পুরোপুরি সামরিক অভিযানের মতোই। এখানে তারা ব্যবহার করেছে নতুন ধাঁচের অস্ত্রশস্ত্র। কয়েকটি অস্ত্রের ব্যবহার এর আগে কোনো সরাসরি সংঘাতে দেখা যায়নি।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য চেকপোস্ট এড়িয়ে ইসরায়েলে প্রবেশের জন্য ইঞ্জিনচালিত 'পাওয়ার্ড গ্লাইডার' ব্যবহার করছেন।

ইসরায়েলের সবচেয়ে উন্নতমানের ট্যাংক 'মেরকাভা ফোর' ধ্বংস করতে সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করেছে হামাস।

আগেও বহুবার রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। কিন্তু এবারের হামলায় এমন কিছু দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার হয়েছে যা ৭০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে তেল আবিবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। এই রকেটগুলোতে অত্যাধুনিক গাইডেন্স ও প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে।

বহুমুখী হামলার অংশ হিসেবে জলপথে ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল হামাস। তবে তাদের বেশকিছু নৌযান থামিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর আগে এ ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেডে। এই সামরিক ব্যাটালিয়নটিই হামাসের বেশিরভাগ সশস্ত্র অভিযানের নেতৃত্ব দেয়।

এবারের হামলার অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে 'মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করা। এমনকি, হামাসের যেসব যোদ্ধা গ্লাইডার বা অন্য পথে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে, তাদেরকে এক ধরনের আত্মঘাতী অভিযানে পাঠানো হয়েছে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা। অর্থাৎ, তাদের যেহেতু বেঁচে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই, তারা প্রাণপণ যুদ্ধ করবেন।

ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধরা হয়৷ তাদের রয়েছে নানা ধরনের আধুনিক অস্ত্র। এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু অস্ত্র ও সরঞ্জাম উল্লেখ করা হল:

·     রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম স্টেলথ এফ-৩৫ ফাইটার জেট।

·     স্মার্ট বোমা, যা মূল লক্ষ্যবস্তু ছাড়া আশেপাশের অন্যান্য স্থাপনার তেমন কোনো ক্ষতি করে না।

·     উচ্চমানের নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক সেন্সর ব্যবস্থা, যা খুব সহজেই লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত ও নির্মূল করার কাজে ব্যবহার হয়।

·     প্রায় ৫০০ মেরকাভা ট্যাংক।

·     রকেট হামলা ঠেকাতে আছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা 'আয়রন ডোম'।

·     ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে আছে মিসাইল বোট। এটি সামুদ্রিক ড্রোন ও লক্ষ্যের দিকে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুততম সময়ে প্রতিহত করতে পারদর্শী।

·     ইসরায়েলের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে ধারণা করা হয়। যদিও হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে এ বিষয়টি প্রাসঙ্গিক নয়, তবুও, প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোকে এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে পারমাণবিক অস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

গ্রন্থনায়: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

Fishermen lost at sea: Authorities install plaque while families await aid

At least 188 fishermen have gone missing in the past three decades in Barguna's Patharghata upazila

1h ago