ইসরায়েলি সাংবাদিকের বিশ্লেষণ

গাজায় ৪ সমস্যার মুখে পড়তে পারে ইসরায়েল

হামাস ইসরায়েল যুদ্ধ
দক্ষিণ ইসরায়েলের এসেডরট শহরে বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত থানা, ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন। ছবি: রয়টার্স

১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর আরব দেশগুলোর একটি জোট ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে আকস্মিক আক্রমণ করেছিল। ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম দিন 'ইয়ম কিপুর' এর দিনে এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছিল ইসরায়েল।

এ বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের আকস্মিক হামলায় ইয়ম কিপুর যুদ্ধের ছায়া দেখছেন ইসরায়েলের অনেক নেতা।

'আজ আমাদের ইহুদিদের ছুটির দিনে ২০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি বেসামরিক লোককে হত্যা করা হলো। এই গণহত্যার পরে আমরা বসে থাকব না,' তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের আইনপ্রণেতা ড্যানি ড্যানন আল জাজিরাকে জানিয়েছিলেন।

ক্ষোভ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'হামাসের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ হবে। গাজার জনগণকে এখন বিবেচনা করতে হবে, তাদের মূল্য দিতে হবে। হামাসকে জবাব দিতে গিয়ে বেসামরিক মানুষের ওপর আঘাত করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই। তবে আমরা যখন হামাসকে আক্রমণ করব তখন শক্তি নিয়েই করব, দক্ষতার সঙ্গেই করব এবং তাদের ধরার জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব।'

ইসরায়েলের ক্ষমতাধর নেতাদের একটি বড় অংশ এই হামলার জবাবে গাজায় নির্বিচারে ব্যাপক অভিযান চালানোর পক্ষে। তবে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলি সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকরা। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে অভিযান চালানো হলে তাতে বহু হতাহত, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের জড়িয়ে পড়া ও দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত শুরুর আশঙ্কা রয়েছে।

ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকার সাংবাদিক আমোস হারেলের মতে, ইসরায়েলের হাতে বিকল্প আছে এখন ৪টি।

প্রথমত, বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে হামাসের সঙ্গে জরুরি আলোচনা। এই আলোচনায় ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি যারা হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত তাদের মুক্তি দাবি করতে পারে হামাস, যা ইসরায়েলের মেনে নেওয়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে।

দ্বিতীয়ত, গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে আকাশপথে ব্যাপক অভিযান চালানো, যেখানে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক লোক নিহত ও আহত হবে।

তৃতীয়ত, গাজা উপত্যকা ধরে কঠোর প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানে অবকাঠামোগত ক্ষতি হবে, মানবিক বিপর্যয় ঘটবে।

চতুর্থত, স্থলপথে ব্যাপকভাবে অভিযান চালানো, যেখানে দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। গোটা অঞ্চল রণক্ষেত্রে পরিণত হবে।

এদিকে পাল্টাপাল্টি আক্রমণের মধ্যে ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে লেবাননের সংগঠন হিজবুল্লাহ। ইসরায়েল গাজায় নির্বিচারে অভিযান চালালে হিজবুল্লাহ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়বে। শনিবার হামাসের আক্রমণের পর তাদের সমর্থন জানিয়ে ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে মিছিল হয়েছে। গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্কের যে পথ এতদিন ধরে তৈরি হয়েছে সেখান থেকেও সৌদি নেতাদের পিছু হটতে হতে পারে।

ইসরায়েলের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র গবেষক মার্ক হেলার বলেন, 'হামাসের আক্রমণের জবাবের পরে কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রায় প্রতি বছরই এই অঞ্চলে ছোট-বড় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান হয়েছে। কিন্তু এতে কোনো সমাধান আসেনি। হামাসকে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য নেতাদের ওপর চাপ রয়েছে, তবে আমি মনে করি না যে এটি দীর্ঘমেয়াদে কোনো সমাধান দেবে।'

তবে ভিন্ন মত দিয়েছেন সাবেক সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল বিল্ড। তিনি বলেন, 'গাজায় একটি বড় ইসরায়েলি হামলা প্রায় অনিবার্য, বিশেষ করে যখন ইসরায়েলি সৈন্যরা হামাসের হাতে জিম্মি। যদি হামাস ইসরায়েলি সৈন্যদের বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায়, তাহলে গাজায় পূর্ণ মাত্রায় ইসরায়েলি অভিযানের সম্ভাবনা বেশি।'

চলমান পরিস্থিতিকে 'আরেকটি যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা' বলে মন্তব্য করছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

36m ago