যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় হামাস, গাজায় তাদের ভূমিকা কী

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় হামাস
হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালিয়েছে হামাস। হামলায় হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও শতাধিক সামরিক-বেসামরিক মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় লাগাতার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

হামাস কী

ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সংগঠনটি ২০০৭ সাল থেকে ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজার শাসন ক্ষমতায় আছে। ইসরায়েলকে ধ্বংস করার মতবাদে বিশ্বাসী হামাসকে অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে ইরান।

গাজার শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সংঘাতে জড়িয়েছে হামাস। প্রত্যেকবারই ইসরায়েল লক্ষ্য করে হাজারো রকেট হামলা চালানো হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার মাধ্যমে হামাসের জবাব দিয়েছে ইসরায়েল।

হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

যেভাবে ক্ষমতায় আসে হামাস

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে মিসরকে পরাজিত করার পর গাজা এবং পশ্চিম তীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইসরায়েল। দখল করা ভূমিতে অবৈধভাবে ২১টি ইহুদি বসতি নির্মাণ করে ইসরায়েল। গাজার সঙ্গে ইসরায়েলের ৫৮ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই কংক্রিট ও স্টিলের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মিসরের সঙ্গে গাজার আরও ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। ভূমধ্যসাগরের তীরে গাজার উপকূলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ইসরায়েলি নৌবাহিনী কোনো জাহাজকে এই উপকূলে আসতে দেয় না।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন করে গাজা ও পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় সীমিত স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়।

২০০৫ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর গাজা থেকে সেনা ও ইহুদি বসতি সরিয়ে নেয় ইসরায়েল। এর দুই বছর পর নির্বাচনে গাজার শাসন ক্ষমতা পায় হামাস। এর পর থেকে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।

হামাস ক্ষমতায় আসার পর গাজা অবরুদ্ধ করে ইসরায়েল। এ কারণে গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগার বলা হয়। গাজার জনগণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।

ইসরায়েলে কেন হামলা করল হামাস

আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রবেশ এবং দখল করা জমিতে ইহুদি বসতি নির্মাণকে হামলার কারণ হিসেবে জানিয়েছে হামাস। এই হামলা আকস্মিক হলেও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল না।

মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদি—তিনি ধর্মের মানুষই আল-আকসা কমপাউন্ডকে পবিত্র মনে করে। এই মসজিদে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ইহুদিদের প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে বহুবার সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। এ ধরনের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০২১ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল হামাস। সাম্প্রতিক সময়ে উগ্র ইসরায়েলি জাতীয়তাবাদীরা ঘন ঘন আল-আকসা কমপাউন্ড পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন।

গত সপ্তাহে ইহুদিদের ফসল তোলার উৎসব 'সুকত'-কে কেন্দ্র করে কয়েকশ অতি রক্ষণশীল ইহুদি ও ইসরায়েলি অ্যাক্টিভিস্ট আল-আকসা পরিদর্শনে যান। হামাস অভিযোগ তুলে বলে, আল-আকসায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চুক্তি লঙ্ঘন করে ইহুদিরা সেখানে প্রার্থনা করতে গিয়েছিল। ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ এই উত্তেজনায় নতুন করে ঘি ঢালে। গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।

গাজায় ১৭ বছরের অবরোধ শিথিল করতে কাতার, মিসর ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা ছিল হামাসের। ২০০৯ সাল থেকে সমুদ্রপথে গাজার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। এ কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপে আছে গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হামাসের হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য হতে পারে বলে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

No place for Islamic extremism in Bangladesh

Islamic extremism will never find a place in Bangladesh again, said Chief Adviser Muhammad Yunus recently.

7h ago