উপাচার্যদের এমন দুর্নীতিপ্রবণ মানসের কারণ কী

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যে বিবিধ সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, সেসব সংকটের প্রায় সবগুলোর কেন্দ্রে আছেন উপাচার্যরা। নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ আছে অনেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে।

এসব কারণে ২০২১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সোবহানকে তার বিদায়বেলায় পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছিল। একইভাবে রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হককেও কার্যত বিদায় নিতে হয় আন্দোলনের মুখে। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শহীদুর রহমান খান অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করে নিজের ছেলে, মেয়ে, শ্যালক-শ্যালিকার ছেলে, ভাতিজাসহ নয় আত্মীয়-স্বজনকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

নিকট অতীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়া নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধেও দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার এমন অনেক অভিযোগ ছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে উন্নয়নকাজের জন্য ছাত্রলীগকে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছিল। পাশাপাশি 'দুর্নীতি'র খতিয়ান প্রকাশসহ তার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনও সে সময় গণমাধ্যমে খবর হয়েছিল।

আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী উপাচার্য শিরীণ আখতারও তার মেয়াদের পুরোটা সময় এত অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন যে তার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ১৯ মার্চ তার দায়িত্বের শেষ দিনে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে অন্তত ৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দেন। পরদিন 'চাকরির জন্য' এক ছাত্রলীগ নেতা তার পায়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।

প্রশ্ন হচ্ছে—দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে উপাচার্যদের এমন দুর্নীতিপ্রবণ মানস ও স্বেচ্ছাচারি মনোভাবের কারণগুলো ঠিক কী কী?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের সঙ্গে।

এই শিক্ষকদের ভাষ্য, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এমনভাবে তৈরি যে উপাচার্যই হয়ে ওঠেন সর্বেসর্বা। গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত তারা নিজের দিকে টেনে নিতে পারেন। আর যেহেতু উপাচার্যের নিয়োগ নিশ্চিত হয় 'রাজনৈতিক বিবেচনায়', তাই তাদের ওপর সরকার-সমর্থক শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ও চাহিদার চাপ সামাল দেওয়ার চাপও থাকে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বার্থ উপেক্ষা করে দল ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা থাকে তাদের ভেতর। থাকে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের তাড়না।

এ ব্যাপারে ২০০৯ থেকে টানা ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'উপাচার্যদের এসব অনিয়মের বিষয়ে কথা বলাটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। একজন উপাচার্যের নিয়োগের আগে তো বোঝা যায় না যে তিনি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কীভাবে নানা ধরনের অসৎ কাজে লিপ্ত হয়ে যাবেন।

'কিন্তু তিনি যখন দায়িত্ব নিলেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন কাজের ভেতর দিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম-অসঙ্গতি আমরা লক্ষ্য করি, তখন সেটা নিশ্চয়ই সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজরে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিকমতো চলছে কি না সেটা দেখা সরকারেরই দায়িত্ব। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আছে। এগুলো দেখা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।'

এক্ষেত্রে একজন উপাচার্যকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ার পর এই সময়সীমার মধ্যে যদি অনিয়ম-অসঙ্গতির কোনো ঘটনা ঘটে, যা সত্যিকার অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করার কারণ হয়, তাহলে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন আরেফিন সিদ্দিক। বলেন, 'নিয়োগপত্রে একটা ক্লজ লেখা থাকে—সরকার চাইলে তাকে সরিয়ে দিতে পারে। সেই ক্লজটা এখানে কার্যকর করা দরকার।

'যে অনিয়ম করছে, নিয়োগ-বাণিজ্য করছে, এগুলো যখন পত্র-পত্রিকায় আসছে, মানুষ জানতে পারছে, তদন্ত কমিটি হচ্ছে—এগুলোর পর তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর সিদ্ধান্তে যাওয়া দরকার। যদি দুয়েকটা জায়গায় অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কাউকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তাহলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জন্যও একটা স্ট্রং মেসেজ যাবে যে কোনো অনিয়ম করা যাবে না। করলেই বাদ পড়ার সম্ভাবনা আছে।'

আরেফিন সিদ্দিকের ভাষ্য, 'চার বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়ার পর যেহেতু কাউকে সরানো হয় না, তখন তারা সব ধরনের অনিয়ম করতে করতে এমন অবস্থায় যান যে শেষ দিন পর্যন্ত সেটা করতে থাকেন। তাদের বিদায়টাও অসম্মানের হয়। এমন অবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্ত রাখার জন্য মেয়াদ থাকা অবস্থায় এ ধরনের অনিয়ম-অন্যায়ের তদন্ত করে তাতে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে তখনই অপসারণ করে নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে হবে।'

উপাচার্যদের এমন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরেও পড়ে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই উপাচার্য। বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো মানুষ তৈরির কারখানা। এখানে আমরা গ্রাজুয়েট তৈরি করি, যেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকে সেই গ্রাজুয়েট যেন সত্যিকার অর্থে সৎ-দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ব্যক্তি যদি অনিয়ম-দুর্নীতি-বাণিজ্য এগুলোতে লিপ্ত হয়ে যান, তাতে একটা খারাপ বার্তা যায়। তিনি যে মোরাল ইন্টেগ্রিটি নিয়ে ছেলে-মেয়েদের গড়ে তুলবেন সেই জায়গাটা দুর্বল হয়ে যায়। মোরাল ইন্টেগ্রিটি না থাকলে তার যত ধরনের অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স থাকুক না কেন, সেটা দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না।'

আর রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে আরেফিন সিদ্দিকের বক্তব্য, 'একটা রাজনৈতিক দল যখন সরকার গঠন করে তখন তারা যাদের নিয়োগ দেবেন তারা নিশ্চয়ই বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাউকে নিয়োগ দেবেন না। তাদের দলের কাউকেই দেবেন। কিন্তু তাদের দলেই অনেক যোগ্য লোক আছেন, ভালো লোক আছেন, সৎ লোক আছেন। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

'তাদের (ক্ষমতাসীন দলের) চিন্তাধারা ও আদর্শের মাঝ থেকেই সঠিক মানুষটিকে খুঁজে নিতে হবে। ১৭ কোটি মানুষের দেশ। লোকের যে খুব অভাব হয় তা না। কিন্তু যেটা হয় যে অনেকে তদবির করে নানা সম্পর্কের কারণে হয়তো (উপাচার্যের পদ) পেয়ে যান। সেগুলো অনানুষ্ঠানিক। এর ফর্মুলা আমি বলতে পারব না। কিন্তু এটুকু বলতে পারব, যোগ্য লোকটিকে যদি খুঁজে নেওয়া যায় তাহলে এই অসংগতিগুলো হওয়ার কথা না।'

বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের বক্তব্য, 'বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন স্বৈরাচারি ব্যবস্থা নাই। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি স্বৈরাচারি ব্যবস্থা থাকে রাষ্ট্রে তার প্রতিফলন পড়বেই।'

বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন উপাচার্যের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, 'কেমব্রিজ কিংবা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষক হয়তো তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে চিনবেনও না। অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগের সমস্ত শিক্ষক নিয়োগ কিংবা পদোন্নতিতে ভূমিকা রাখেন। যেকোনো ছোটখাট অনুষ্ঠান হলেও তাকে দিয়ে উদ্বোধন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছের একটা পাতাও যেন নড়ে না ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমতি ছাড়া।

'কেন উপাচার্য এত ক্ষমতাধর? কারণ উপাচার্যকে যত বেশি ক্ষমতাধর করা যায় সরকারের পক্ষে তত বেশি সহজ হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করার। এখানে একজনকে নিয়ন্ত্রণ করলেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। একজনকে নিয়ন্ত্রণ করলে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জেতা যায়, শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছু দলীয়করণ করা যায়।'

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, 'আমি যখন দলীয়করণ করব এবং দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগ দেবো, তখন তো তার কাজই হবে নিয়োগদাতাকে খুশি করা। অর্থাৎ তখন যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকে তাহলে ছাত্রদলের সব অপকর্মকে দায়মুক্তি দেওয়া, যার কোনো বিচার হবে না। কিংবা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগের সব কাজকে জাস্টিফাই করা। অথবা বিএনপি করা কোনো শিক্ষক যদি কোনো অন্যায় করেন তার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগপন্থী কোনো শিক্ষক অন্যায় করলে তার বিচার হবেই না।

'এমন একটা পরিস্থিতিতে যত রকমের অন্যায়, যত রকমের খারাপ কাজ এই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। এগুলো না হওয়াটাই আশ্চর্যের বিষয়। কারণ আমরা পুরো সিস্টেমটাকেই একনায়ককেন্দ্রিক করে ফেলেছি। সরকারটাও একনায়ককেন্দ্রিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও একনায়ককেন্দ্রিক।'

অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানও বলেন, 'যে প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়, সেখানে প্রশাসনিক কিংবা অ্যাকাডেমিক দক্ষতার চাইতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। যারা এই উপাচার্য হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন, তারা অন্য যেকোনো কিছুর চাইতে তাদের দলীয় আনুগত্যটা নিশ্চিত করতে চান। সেক্ষেত্রে তাদের আদর্শগত যে চর্চা কিংবা অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স—সেটা নিশ্চিত থাকে না। এবং এই ধরনের দলীয় আনুগত্য থাকলে সাধারণত দেখা যায় যে যেকোনো ধরনের অন্যায় করেও দায়মুক্তি পাওয়া যায়।

'এ ধরনের অন্যায় কিংবা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এটা (দায়মুক্তি) তাদের (উপাচার্যের) অনেক সাহসী করে তোলে। মুশকিল হচ্ছে দলীয় আনুগত্যকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে যারা তাদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন, তারা এসব দুর্নীতি ও অপকর্মকে আড়াল করে রাখেন। কারণ ওনাদের (উপাচার্য) একমাত্র পরিচয় হচ্ছে তারা দলের লোক। ফলে দলের লোক হওয়ার কারণে তাদের সুরক্ষাটাও নিশ্চিত হয়। এটাই সংকটের মূল।'

দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন 'অনিয়ম ও দুর্নীতিপ্রবণ' সংস্কৃতির বিকাশ ও এর প্রভাব নিয়েও কথা বলেন এই অধ্যাপক। বলেন, 'সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ছে তাদের আর্থিক সক্ষমতা কম। যাদের এটা বেশি তারা এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই পছন্দের এক নম্বর তালিকায় রাখে না। সাধারণত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যার ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন মেধাবী শিক্ষার্থী পাওয়ার কথা সেটাও আমরা হারাচ্ছি।

'উপরন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসলে জ্ঞানচর্চা কিংবা জ্ঞান উৎপাদনের পক্ষে কাজ করার কথা। কিন্তু দিনের শেষে এগুলোও রাজনৈতিক দলের আদল নিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকশিত না হয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আদলে একেকটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকশিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।'

এই সংকটের সমাধান কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, 'এই সংকটের সমাধান নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। যারা ক্ষমতাসীন হয়, সেটা যে দলই হোক না কেন, তারা দলীয় রাজনীতিকরণের প্রভাব থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্ত রাখবেন কি না, এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটা সবার আগে নিতে হবে। এটা না নিতে পারলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান আরও তলানিতে পৌঁছাবে।'

এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেন এই অধ্যাপক। বলেন, 'উপাচার্য ছাড়াও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাজে দশা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। দেখা যাচ্ছে অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম হয়ে দেশের বাইরে থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেও কেউ কেউ নিয়োগ পাচ্ছেন না। নিয়োগ পাচ্ছেন পেছনের সারির এমন কেউ, যার দলীয় পরিচয় আছে কিংবা ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার হিসেবে কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখনকার সংকট ও অস্থিরতার এটাও একটা বড় কারণ।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

3h ago