প্রক্টরের ‘অপসারণ’ দাবি, শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও ঢাবির ‘সম্মান’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দায়িত্বপালনে 'ব্যর্থ' উল্লেখ করে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এরপর ঢাবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খানের বিভাগীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই দিন সন্ধ্যায় তার স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ দিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমঞ্চ। সেখানে মত-দ্বিমত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক থাকবে। যে কেউ যেকোনো দাবিও জানাতে পারে। কিন্তু, তার পরিপ্রেক্ষিতে যে ধরনের ঘটনা ঘটল, সে ধরনের আচরণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারে কি? এ ধরনের ঘটনা কী বার্তা দেয়? এ বিষয়ে শিক্ষকরা কী ভাবছেন?

অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খানের বিভাগীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু আমি অবসর নিয়েছি, তাই ভেতরের খবর জানি না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়ভাবে আছেন, তারা হয়তো বিষয়গুলো ভালোভাবে বলতে পারবেন। পত্রিকায় পড়ে যা বুঝেছি যে, যা ঘটেছে তা যৌক্তিক না। একজন শিক্ষকের তথ্য জানতে চাইলে সেটা প্রশাসন থেকেই জানার কথা। তার জন্য বিভাগে বা বাড়িতে লোক পাঠানো, এটার কোনো প্রয়োজন পড়ে বলে মনে হয় না।'

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

যা ঘটেছে তা যৌক্তিক না। একজন শিক্ষকের তথ্য জানতে চাইলে সেটা প্রশাসন থেকেই জানার কথা। তার জন্য বিভাগে বা বাড়িতে লোক পাঠানো, এটার কোনো প্রয়োজন পড়ে বলে মনে হয় না।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক উপাচার্য, ঢাবি

এ ধরনের ঘটনা কী বার্তা দেয়? জানতে চাইলে সাবেক এ উপাচার্য বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। সেটা তো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী যে কেউই দিতে পারেন। উপাচার্যও সে স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন পত্রিকায় দেখলাম। সৃষ্টির প্রথম থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র। সেখানে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটবে, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি না। আবার মুক্তবুদ্ধি প্রকাশ করার কারণে কারও ওপর আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ-নির্যাতন-নিপীড়ন বা তার বাসা কিংবা অফিসে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করাটা যৌক্তিক না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের সবকিছু প্রশাসনিক অফিসে আছে। এখন উপাচার্য বা প্রক্টর, যারই দরকার হোক, তারা সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করাটাই সমীচীন ছিল। কিন্তু, কেন সেটা না করে তাকে হয়রানির মধ্যে ফেলা হলো, তা বুঝতে পারছি না।'

অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খানের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা খুবই অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে উপাচার্যের কাছে। আমি শুনেছি যে, উপাচার্য তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলেছেন। তারা বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন এবং উপাচার্য সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান তো একা যাননি। সংগঠনটির বেশকিছু শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, লক্ষণীয় যে, অধ্যাপক তানজীমউদ্দিনের ব্যক্তিগত নথি বিভাগে লোক পাঠিয়ে দেখা হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ-নীতি-সংস্কৃতি-প্রশাসনিক রুলের মধ্যে পড়ে না।'

এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ঘটনাটি যদি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হতো, তাহলে আমরা অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে প্রক্টর তার ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে নিয়েছেন। এখানে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। প্রক্টরের একটা মন্তব্য আমি পত্রিকায় পড়েছি, তিনি বলেছেন, "আমি একজন কর্মকর্তা পাঠিয়েছিলাম এবং এটাকে ড. তানজীম অতিরঞ্জিত করেছেন"। কিন্তু, প্রশাসনেও তো আমাদের শিক্ষকরাই আছেন। শিক্ষকদের বাইরে তো কেউ প্রশাসনের দায়িত্বে নেই। সুতরাং একজন শিক্ষকের সঙ্গে আরেকজন শিক্ষকের এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। যদি ড. তানজীম সম্পর্কে কিছু জানারই থাকে, তিনি তো দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষকতা করছেন, সেটা জানা যায়। কিন্তু, লোক পাঠিয়ে এ ধরনের কাণ্ডকারখানা আসলেই অনাকাঙ্ক্ষিত।'

এ ধরনের ঘটনা কী বোঝায়? বিশ্ববিদ্যালয়ে কি মুক্তমত প্রকাশ করা যাবে না? জানতে চাইলে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, 'ভীতি সঞ্চারের মতো একটা ঘটনা তো ঘটেছে। কিন্তু, আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষকরা মুক্তমনা। তাহলে কেন আমরা মুক্তচিন্তার প্রকাশ ঘটাব না। আমরা দ্বিমত পোষণ করতেই পারি।'

অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

ভীতি সঞ্চারের মতো একটা ঘটনা তো ঘটেছে। আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষকরা মুক্তমনা। তাহলে কেন আমরা মুক্তচিন্তার প্রকাশ ঘটাব না। আমরা দ্বিমত পোষণ করতেই পারি।

অধ্যাপক সাদেকা হালিম, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের কাজ এটাই প্রথম উল্লেখ করে ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো আইন দিয়ে কাউকে আটকে রাখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের কাজ করতে পারে কি না, সেটা নৈতিকতার বিষয়। যেমন: ইংল্যান্ডে লিখিত কোনো সংবিধান নেই। কিন্তু, প্রত্যাশিত একটা আদর্শিক নিয়ম তাদের সমাজে আছে যে, এসব কাজ করা যাবে, এসব করা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঐতিহ্য আছে যে, আমাদেরও কী করা যাবে, কী করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরের ইতিহাসে এরকম কাজ করা হয়নি। অর্থাৎ খারাপের যে দিক আমাদের আছে, সেটাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেওয়া হলো। অর্থাৎ এখন থেকে এটাই হয়ে যাবে নিয়ম। কিছু হলে তার খোঁজ-খবর নেওয়া হবে, বাবা-মার খোঁজ খবর-নেওয়া হবে। এর উদাহরণ এতদিন আমরা বাইরে দেখেছি। একই জিনিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ে আসা হলো। এর মানে হলো কেউ যেন সত্য কথা না বলে, প্রতিবাদ না করে। আমরা যা ইচ্ছা তাই করব। আপনি কে? এরকমভাবে শাসিয়ে দেওয়া হলো। এখন এই শাসিয়ে দেওয়া তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না। এই প্রক্টর-প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য নষ্ট করছে। যে ঐতিহ্য নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন, সেটাই তারা নষ্ট করছেন।'

এ ধরনের কর্মকাণ্ড এখনই থামাতে হবে উল্লেখ করে ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যত অর্জন আছে, সেগুলো কেন হয়েছে? কারণ শিক্ষকরা অন্যায় কিছু মানেননি। আজকে সেই অন্যায়কে না মানার কারণেই যদি এরকমভাবে খড়গ নেমে আসে, তাহলে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানির কাজ। এটা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ প্রথম যা শুরু হলো, এর মাধ্যমে পরবর্তীতে অন্যান্যদের সঙ্গে একই কাজ করা হবে। অর্থাৎ এটাকেই স্বাভাবিক কাজ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অটুট রাখতে হলে এখনই এটাকে থামাতে হবে। এর মাধ্যমে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।'

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

এর মানে হলো কেউ যেন সত্য কথা না বলে, প্রতিবাদ না করে। আমরা যা ইচ্ছা তাই করব। আপনি কে? এরকমভাবে শাসিয়ে দেওয়া হলো। শাসিয়ে দেওয়া ঢাবির ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি

গত সোমবারের ঘটনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে আমরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেই। এরপর সেদিন সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় আমার স্থায়ী ঠিকানায় একজন এসআই গিয়ে জানান যে তিনি আমার সম্পর্কে ভেরিফিকেশনের জন্য গেছেন। সেখান থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হলে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একটা তালিকা করা হচ্ছে। সেজন্য গিয়েছেন! আবার জানালেন, তার বস বলতে পারবেন আসল কারণটা কী?'

এই অধ্যাপকের ভাষ্য, 'পরের দিন অফিসে গিয়ে শুনি প্রক্টর অফিস থেকে ২ জন কর্মচারী আমার বিভাগীয় অফিসে এসেছিলেন। তাদের একজনের নাম রেজাউল করিম। তারা এসে আমার ব্যক্তিগত নথি চেয়েছিলেন, আমার স্থানীয় ও বর্তমান ঠিকানা সংক্রান্ত। তখন আমি খুব অবাক হই। কারণ, প্রক্টর অফিস থেকে এসে তো কেউ এভাবে আমার তথ্য চাইতে পারে না। তখন আমি প্রক্টর অফিসে গিয়ে দেখি তিনি সেখানে নেই। পরে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বাবার নাম জানার জন্য লোক গেছে। এটা করতে পারেন কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, তাকে না জানিয়েই তার অফিস থেকে ওই ২ জন গিয়েছিলেন। কিন্তু, ডেইলি স্টারের কাছেও রেজাউল বলেছেন যে তিনি প্রক্টরের নির্দেশে সেখানে গিয়েছেন এবং অফিসে গিয়েও তিনি প্রক্টরের রেফারেন্স দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রক্টর মিথ্যা বলছেন।'

ড. তানজীমউদ্দিন বলেন, 'সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে যা ঘটল তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বৈশিষ্ট্য-বিরোধী। আর পরবর্তীতে বিষয়টি অস্বীকার করতে গিয়ে তিনি আমার সম্পর্কে যেসব শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা অসংলগ্ন। তিনি একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন যে, আমি বাকসন্ত্রাসী। এই যে শব্দটা তিনি ব্যবহার করেছেন, সেটাই তার মানসিকতার প্রকাশ। মূল ঘটনা তিনি যতই অস্বীকার করুক, এ শব্দগুলোর মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে তিনি আসলে এ ধরনের মানসিকতাই ধারণ করেন। একজন প্রক্টর, যিনি নিজেও শিক্ষক, অপর একজন শিক্ষকের প্রতিবাদের ভাষাকে তিনি বাকসন্ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন? বিষয়টি আমি ভিসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ভিসিও আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যে, কারো সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্য এটা কোনো প্রক্রিয়া হতে পারে না।'

অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।

সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে যা ঘটল তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বৈশিষ্ট্য-বিরোধী। আর পরবর্তীতে বিষয়টি অস্বীকার করতে গিয়ে তিনি আমার সম্পর্কে যেসব শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা অসংলগ্ন।

অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাবি

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন যা বলেছেন, সেটা সত্য কি না, বের করুন। একটা অসত্য তথ্য তিনি পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। আমার অফিস থেকে একজন গিয়েছিলেন, আমি তাৎক্ষণিকভাবে তা জেনেছি এবং ‍তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে একটি তথ্য চেয়ে অনুরোধ করেন। কিন্তু, নথি দেখার কথা অসত্য। পরিকল্পিতভাবে মিডিয়ার সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য হয়তো তিনি এ কাজটি করেছেন।'

কিন্তু প্রক্টরের কার্যালয়ের সেকশন অফিসার রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে, তিনি প্রক্টর গোলাম রব্বানীর নির্দেশেই তানজীমউদ্দিন খানের বিভাগীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। এ বক্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোলাম রব্বানী বলেন, 'তাকে সেখানে যেতে বলা হয়নি। একটা তথ্য প্রয়োজন, এটা তাকে বলা হয়েছিল। তিনি যাওয়ার পর সেটা আমি জেনেছি।'

অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী।

অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন যা বলেছেন, সেটা সত্য কি না, বের করুন। একটা অসত্য তথ্য তিনি পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। নথি দেখার কথা অসত্য এবং কল্পিত একটা অভিযোগ।

অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী, প্রক্টর, ঢাবি

সেই তথ্যের জন্য তাকে কোথায় যেতে বলা হয়েছিল? জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর বলেন, 'তাকে বলা হয়েছিল একটি তথ্য প্রয়োজন। সে আমাকে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমরা কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা করি, সেটা বিভাগে অনুরোধ করি। প্রকাশ্যে গিয়ে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে। এখানে নথি দেখার কথা অসত্য এবং কল্পিত একটা অভিযোগ, যেটাকে আমি বলেছি শব্দসন্ত্রাস।'

এ বিষয়ে জানতে গতকাল ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে ফোন করলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তোমাদের উদ্দেশ্য কী? আবার কী নিয়ে নেমেছ বলো তো? তোমরা তো একেকটা উদ্দেশ্য নিয়ে নামো এবং তারপর নেতিবাচক বিষয় কী থাকে সেগুলো করে একটা বিভ্রান্ত তৈরি করতে চাও।'

প্রক্টরের অপসারণের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের দেওয়া স্মারকলিপি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কটা কী? এটা কী? এটা কাদের? দৈনিক কত স্মারকলিপি আসে। এটা তো বলতে পারব না। আজকেও ২-৩টা স্মারকলিপি এসেছে।'

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

এগুলো কোনো বিষয় না। এগুলো হলো জল ঘোলা করা। কত ভালো ভালো বিষয় আছে। খবরের খুব আকাল পড়লে এগুলো হয়। এগুলো আননেসেসারি সিন ক্রিয়েশন।

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, উপাচার্য, ঢাবি

স্মারকলিপি দেওয়ার পর অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের বিভাগীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, 'এগুলো কোনো বিষয় না। এগুলো হলো জল ঘোলা করা। কত ভালো ভালো বিষয় আছে। খবরের খুব আকাল পড়লে এগুলো হয়। খবরের তো এত আকাল পড়েনি। খবরের খুব আকাল পড়েছে বলে এসব ছোটখাট বিষয় নিয়ে, কে কার বাবার নাম জানতে চেয়েছে, কী নাম জানতে চাচ্ছে... সুতরাং এগুলো কোনো বিষয় না। এগুলো আননেসেসারি সিন ক্রিয়েশন। এটা একটা পাবলিক নুইসেন্স ক্রিয়েশন।'

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

2h ago