প্রক্টরের কি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা

‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থীকে পেটানোর পর 'প্রলয় গ্যাংয়ের' নাম সামনে এসেছে। এ ঘটনার পর ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'এ ধরনের একটি গ্যাং সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি৷ অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।'

কারও কাছে এ সংশ্লিষ্ট কোনো সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার অনুরোধ জানান তিনি।

প্রশ্ন উঠেছে, এ ধরনের ঘটনায় প্রক্টরের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কি না?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরি গায়েন এবং ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের সঙ্গে।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, 'প্রক্টর অফিসের যে দায়িত্ব, সেটা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পালন হয় না। তাদের দায়িত্ব পালনের সুনির্দিষ্ট পরিসর আছে। সেই পরিসরে যা কিছু আছে, সেটার সমাধান করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রক্টর অফিসের দায়িত্ব। সেটার জন্য কোনো লিখিত অভিযোগের প্রয়োজন হয় না।'

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাবি ক্যাম্পাসে এ ধরনের অপরাধমূলক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তার ভাষ্য, 'ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যদি এই গ্রুপের কোনো সম্পর্ক না থাকত, তাহলে আমার ধারণা প্রক্টর অফিস থেকে এটাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হতো। যেহেতু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা আছে, সেজন্যই শিক্ষকসূলভ ভাষা আমরা পাচ্ছি না। এই ধরনের ভাষা রাজনৈতিক কর্মী বা থানার ওসির হতে পারে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ভাষা এমন হতে পারে না।'

অধ্যাপক ড. কাবেরি গায়েন বলেন, 'কোনো শিক্ষার্থী আক্রমণের শিকার হলে প্রথমেই আমাদেরকে ওই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রক্টর যদি এ কথাটি বলে থাকেন, তিনি কেন বলেছেন আমি জানি না, কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য না। প্রক্টর পরে আরও বলেছেন যে, সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যেন অবহিত করা হয়। তার কথার এই অংশ আমি সমর্থন করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিজেরও দায় রয়েছে অভিযুক্তদের খোঁজার ব্যাপারে। যেহেতু অভিযুক্তরাও ঢাবির বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও দায় আছে অভিযোগ ওঠার পর নিজ উদ্যোগে তদন্ত করা ও প্রমাণ খুঁজে নেওয়া। কাজেই এ জায়গাটা আমাদের বুঝতে হবে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বটা কী। যাদের নাম উঠেছে, তাদের খুঁজে বের করার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও আছে। সেগুলো তাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থাকে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যদিও ঢাবি ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, কিন্তু কেন এ ধরনের ঘটনা এখানে ঘটবে, প্রশ্নটা খুব যৌক্তিক। এগুলো ঘটে নানা কারণে। একটা সময় প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের মধ্যে মারামারির কারণে এগুলো হয়েছে। একটা সময় হয়েছে—একই সংগঠনের ২ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে। এখন যেটা হচ্ছে, যেহেতু রাজনীতি অনুপস্থিত, ডাকসু অনুপস্থিত, একটা ছাত্র সংগঠন দীর্ঘকাল ধরে ক্যাম্পাস আছে, ফলে দেখা যায় তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে দায় তাদের ওপর এসে পড়ে। প্রায়ই আমরা তাদেরকেই এগুলোতে জড়িত হতে দেখি।'

'একইসঙ্গে যখন প্রশাসন সে জায়গাগুলোতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে না, দেখা যায় কারও কারও ক্ষেত্রে প্রকাশে এনে শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনীহা কাজ করে, যখন এটা হয়ে থাকে, তখনই এই ঘটনা বাড়ে। যখন অভিযোগগুলো ওঠে, তখন তদন্ত করে দোষীদের যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয় না। এর আরেকটা কারণ হলো—যারা এ ঘটনাগুলো ঘটায়, তারা যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তাদের প্রত্যক্ষ মদদ বা অংশগ্রহণেই এই কাজগুলো হয়। ফলে দুঃখের বিষয় হলো—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় না। ফলে এ জাতীয় ঘটনা বার বার ঘটে এবং তা বাড়ছে, যা খুবই অন্যায় ও অনাকাঙ্ক্ষিত', বলেন অধ্যাপক কাবেরি গায়েন।

আগের বক্তব্য বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, 'এই ঘটনার পর গত পরশু রাতে অভিযুক্ত ২ জনকে আইনে সোপর্দ করার পর আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে। সেই ব্যবস্থা আমরাই নিয়েছি। আজকে এই ২ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। আমাদের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অভিযোগ পরে এসেছে। অভিযোগ আসার আগেই আমরা থানায় যে অভিযোগ দাখিল হয়েছে, যিনি হামলার শিকার শিক্ষার্থীর অভিভাবক, তার সঙ্গে ২৬ মার্চ রাতে আমাদের ৩ ঘণ্টা মিটিং হয়েছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতিতে। পরে আমরা কার্যপ্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছি।'

'ওই অভিভাবকের ফোন পেয়ে ২৬ মার্চ অফিস বন্ধ থাকলেও আমি তা খুলেছি। সহকারী প্রক্টরদের দ্রুত মিটিংয়ের আমন্ত্রণ জানাই। তারা দ্রুত চলে আসেন। আমরা বসে কার্যপ্রণালী এবং অভিভাবক কী চান, তা জানতে চেয়েছি, এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী দায়িত্ব আছে, এ ধরনের ঘটনায় ইতোপূর্বে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, ভবিষ্যতে কী নেওয়া হবে, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। সবকিছু আমলে নিয়েই আমরা আজ ২ জনকে বহিষ্কার করি। পরবর্তীকে কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জানাতে বলা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে', বলেন তিনি।

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'লিখিত অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় আমরা থাকিনি। আমরা গত পরশু জেনেছি। যখনই আমরা পত্রিকায় দেখে জেনেছি, রাতেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রক্টরকে বলা হয়েছে, পত্রিকায় নাম প্রকাশ হয়েছে এবং বিষয়গুলো আরও দেখেন। সেগুলো দেখে শিগগিরই ব্যবস্থা নেন। আমাদের এখানে বখাটেপনার কোনো স্থান নেই। বিষয়গুলো আমরা এভাবেই দেখছি। আজ আমরা ২ জনকে বহিষ্কারও করেছি।'

'আমরা গত পরশুই ঘটনাটি শুনলাম, এর আগে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে "গ্যাং" শব্দটি শুনিনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সময় নানা ধরনের অপ্রীতিকর বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। কিন্তু গত পরশু থেকে এই "গ্যাং" শব্দটার প্রচলন শুরু হলো', যোগ করেন ভিসি।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

6h ago