ডিমের কুসুম খাবেন নাকি খাবেন না

ডিম
ছবি: সংগৃহীত

শরীরের কোষ গঠনকারী পুষ্টি উপাদান আমিষ বা প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিম। সহজলভ্য ও পুষ্টিকর হওয়ায় দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় এটি সাধারণত থাকে। নিয়মিত ডিম খেলে তা দেহের দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। এ ছাড়া ডিম একটি আদর্শ খাদ্য। এতে প্রোটিন ছাড়াও অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কিন্তু ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন অনেকের ভাবনায় আসে যে, ডিম কুসুমসহ খাওয়া ভালো নাকি কুসুম ছাড়া।

চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদানকল্প প্রতিষ্ঠান গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগমের থেকে।

তিনি জানান, একজন ব্যক্তি ডিম কুসুমসহ খাবেন নাকি কুসুম ছাড়া খাবেন, সেটা নির্ভর করে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। একজন সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিদিন কুসুমসহ ডিম খাওয়ায় কোনো বাধা নেই।

ডিমের দুই-তৃতীয়াংশ সাদা অংশ আর এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে হলুদ অংশ বা কুসুম। সাদা অংশে থাকে প্রোটিন এবং হলুদ অংশ বা কুসুমে থাকে ফ্যাট বা স্নেহ, প্রোটিন ও কোলেস্টেরল। আরও আছে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে,  ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফলেট, লুটেইন, জিয়াজেন্থিনসহ বিভিন্ন উপাদান।

ফ্যাট ও কোলেস্টেরল থাকার কারণে ডিমের কুসুম খাওয়া নিয়ে যত দ্বিধা। ধারণা করা হয়, ডিমের কুসুম খেলেই কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়। কুসুমে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ভালো কোলেস্টেরল, যা হার্টের জন্য উপকারী। এ ছাড়া কুসুমে থাকা অন্যান্য উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এজন্য একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন একটি করে কুসুমসহ ডিম খেলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমবে। এ ছাড়া চাইলে একদিনে সর্বোচ্চ দুটি কুসুমসহ ডিম খাওয়া যেতে পারে।

কখন ডিমের কুসুম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুম আসলে দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তখন তা শরীরের জন্য ক্ষতি হয়।

ডিমের স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সঙ্গে স্যাচুরেটেড ফ্যাটও থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার কুসুমে ভালো কোলেস্টেরল থাকলেও প্রয়োজনের থেকে বেশি গ্রহণ করলে কোলেস্টেরল হাই হয়ে যেতে পারে। রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কুসুমসহ ডিম নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে পরিমাণমতো খেলে কোনো সমস্যা নেই, বরং শরীর সুস্থ থাকবে।

বয়স ৪০ বছর হলে সতর্কতার জন্য সপ্তাহে চার দিন ডিমের কুসুমসহ এবং তিন দিন ডিমের কুসুম ছাড়া খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত, তাদের কুসুমসহ ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ রয়েছে। যেমন:

হার্টের রোগী

রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, করোনারি আর্চারিতে প্লাক বা চর্বি জমার কারণে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফলে রোগীর করোনারি আর্টারি ডিজিজ হয়। যেহেতু ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল আছে, এটি রক্তের সঙ্গে মিশে আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে। হার্টে খারাপ ফ্যাটও জমতে পারে। তাই হার্টের রোগ থাকলে ডিমের কুসুম নিয়মিত না খাওয়াই ভালো।

ডায়াবেটিক রোগী

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি ডিম খেতে পারেন যেহেতু এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু যেসব ডায়াবেটিক রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি, তাদের জন্য ডিমের কুসুম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডিম খাওয়া উচিত।

হাই-কোলেস্টেরলের রোগী

সাধারণত শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকলে ডিমের কুসুম কম খেতে বলা হয়। যাদের হাই কোলেস্টেরল আছে, তারা যদি ডিম তেলে ভেজে বা মাখনে বেক করে খান, তখন ডিমে কোলেস্টেরলের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এ ছাড়াও নিয়মিত কুসুমসহ ডিম খেলে হাই কোলেস্টেরলের রোগীদের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কুসুম খাওয়ার জন্য।

কিডনি রোগী

কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও ডিমের কুসুম গ্রহণের পরিমাণ নির্ভর করে শারীরিক অবস্থার ওপর। কিডনি রোগীদের সাধারণত ডিমের কুসুম খেতে নিষেধ করা হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে, যেমন ডায়ালাইসিস চললে কুসুমসহ ডিম খেতে বলা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Attack on Bangladesh mission in Agartala

India must protect Bangladesh's diplomatic missions

Hostile rhetoric, mobilisations by Hindutva groups fuelling unrest

18h ago