সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কেন বিক্রি হচ্ছে না ডিম-মুরগি

ডিম, ব্রয়লার মুরগি, ডিমের দাম, টিসিবি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর,
অলঙ্করণ: বিপ্লব চক্রবর্তী

সেপ্টেম্বরে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু রাজধানীর বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও ব্রয়লার। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভূগতে থাকা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে আরও চাপ বেড়েছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতি ডজন ডিম ১৪২ টাকা ও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকায় কেজি দরে বিক্রির ঘোষণা দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

তারা জানিয়েছিল, পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই দাম ঠিক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন এবং অ্যাগ্রো ফিড ইনগ্রেডিয়েন্টস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়।

তবে কোনো হিসাবের ভিত্তিতে তারা দাম নির্ধারণ করেছে তা জানায়নি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীতে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০ টাকা।  ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, যা আগে ছিল ১৭০ টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও এখনো ৯ শতাংশের ওপরে আছে।

সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও কেন বাজারে সেই দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি হচ্ছে না, খাত সংশ্লিষ্টদের কাছে এ কথা জানতে চেয়েছিল দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক। তাদের মধ্যে ছিলেন তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ ও দেশের অন্যতম বৃহৎ ডিম উৎপাদনকারী ডায়মন্ড এগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আহমেদ।

তারা দুজনেই এর পেছনে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতের কথা বলেন। এজন্য তারা সাম্প্রতিক বন্যা ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে উত্পাদন কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

সাম্প্রতিক বন্যা দেশের পূর্বাঞ্চলে প্রভাব ফেলেছে। তবে রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চল যেমন টাঙ্গাইল, যশোর, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, পঞ্চগড়, রাজশাহী এবং নরসিংদী ও গাজীপুরের মতো আশপাশের অঞ্চল থেকে ডিমের সরবরাহ বেশি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে গড় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বাপন দে বলেন, লেয়ার মুরগির জন্য ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কিছুটা বেশি ছিল, তবে বাজারজাত বয়সের ব্রয়লার মুরগির জন্য তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকা প্রয়োজন।

চাহিদা-জোগানে ঘাটতি ধারণার বিরোধিতা করেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার।

তিনি বলেন, 'বর্তমানে সারাদেশের খামারগুলোতে প্রতিদিন সাড়ে চার কোটি ডিম উৎপাদন হয় এবং চাহিদা প্রায় চার কোটি। কিন্তু বন্যা ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ২০ থেকে ২৫ লাখ উৎপাদন কমতে পারে, যার প্রভাব বাজারে পড়ার কথা নয়।'

তার ভাষ্য, 'ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে কৃষকের কাছ থেকে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত মধ্যস্থতাকারী থাকায় দাম বেড়েছে।'

১৫ দিন পরপর দাম পর্যালোচনার সুপারিশ করেন তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ। তিনি মনে করেন, মাছ ও শীতকালীন সবজির উৎপাদন বাড়লে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমবে।

ডায়মন্ড এগের কায়সার আহমেদ অভিযোগ করেন, সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের খুশি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ফীত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো ডিমের দাম নির্ধারণ করে।

তার ভাষ্য, 'একমাত্র সমাধান ছিল উৎপাদন বাড়ানো।'

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, 'এখানে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে।  উৎপাদন খরচ অনেক বেশি এমন অজুহাত দেখিয়ে সিন্ডিকেটগুলো তাদের খেয়ালখুশিমতো দাম বাড়ায়।'

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাজারে অভিযানের সময় দাম কমে যায় ও পরে আবার বাড়ে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

বৈঠকে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি হারুন অর রশীদ খামারি থেকে শুরু করে পাইকারি গুদাম ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর সরকারের নজরদারির পরামর্শ দেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড ল্যাবরেটরি) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ল্যাপস মনিটরিংয়ের সুযোগ নিচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Spirited Bangladesh down India to retain title

The bowlers showed great character in defence of a paltry total of 198 runs as they dismissed India for 139 runs in 35.2 overs.. 

51m ago