ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দিয়ে ২২ পদ্মা সেতু বা ১৩ মেট্রোরেল তৈরি সম্ভব

শ্বেতপত্র
ছবি: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশের ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ ছয় লাখ ৭৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে পদ্মার ওপর অন্তত ২২ সেতু বা ঢাকায় ১৩ মেট্রোরেল তৈরি করা সম্ভব।

গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া অর্থনীতির শ্বেতপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এই টাকা খেলাপি ঋণ, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠিত ঋণ এবং বকেয়া অবলোপিত ঋণের সমষ্টি এবং গত জুন পর্যন্ত মোট ব্যাংক ঋণের ৩১ দশমিক সাত শতাংশ।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতার জন্য এই আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে—এটা অর্থনীতি নয়, বোকামি। দেশের আর্থিক খাতের এই দুর্দশা অর্থনৈতিক বিপর্যয় বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে সৃষ্টি হয়নি।

স্বীকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠিত ঋণ দুই লাখ ৭২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। অবলোপিত ঋণ ৭৫ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টে ৩৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা ও আদালতের নির্দেশে ৭৬ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা ঋণ বকেয়া আছে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের হিসাব করলে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ আরও বেশি।

শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অপরাধীরা সবাই প্রভাবশালী। খেলাপি ঋণের কেন্দ্রীভূতকরণ সামগ্রিক ঋণের কেন্দ্রীকরণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি গভীর ও পদ্ধতিগত সমস্যার প্রকাশ।

প্রভাবশালীরা প্রচুর টাকা পাচার করেছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বা যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই কয়েকটি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বড় ঋণগ্রহীতারা।

বিশেষ করে ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী বহিরাগতদের যোগসাজশে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আপস করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের জন্য জরিমানা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও ট্রেড লাইসেন্সের ওপর বিধিনিষেধ খুবই কম এবং অকার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যাংকের বোর্ড সদস্য ও তাদের আত্মীয়দের জামানতের বিপরীতে ঋণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এটি সুশাসন ও জবাবদিহিতা কমিয়ে দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেসরকারি ব্যাংকের নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিবেচনা ও অন্যান্য অংশীদারদের উদ্বেগকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রায়ই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মালিকানা দেওয়া হয়েছে।

শ্বেতপত্রে নতুন বিত্তবানদের শোষণকে চিরস্থায়ী করা থেকে বিরত রাখতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

রাজনীতিতে জড়িত মালিক ও পরিচালকদের সরিয়ে দেওয়া পর ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সামনের পথটি এখনো সংকটময়। কায়েমি স্বার্থে পরিচালিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে শক্তিশালী কর্পোরেট গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্ক, বর্ধিত নিয়ন্ত্রক স্বায়ত্তশাসন ও ব্যাংকের নিবন্ধনে বিরাজনীতিকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

শ্বেতপত্রে সংকটাপন্ন ১০ ব্যাংককে, এর বেশিরভাগই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে ব্যবহারিকভাবে দেউলিয়া ও অপ্রচলিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থা সংকটময় পরিস্থিতিতে মূলধন ও তারল্যের মাধ্যমে সুরক্ষিত হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

4h ago