লাল না সাদা কোন চাল ভালো

লাল চাল, সাদা চাল,
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভাত ছাড়া বাঙালির একদিনও চলে না। বাজারে নানা জাতের চাল পাওয়া যায়। এর মধ্যে লাল নাকি সাদা—কোন চাল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই আছে।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি।

লাল ও সাদা চালের পুষ্টিগুণ

পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, লাল চাল বা সাদা চাল উভয়ই কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস। তবে লাল চাল ফাইবার বা আঁশ ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে ভরপুর। লাল চালে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৬, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও জিঙ্ক পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। এ ছাড়া লাল চালে অ্যানথোসায়ানিন, সেলেনিয়াম নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। ভিটামিন ই ও পটাশিয়ামও রয়েছে।

বর্তমানে আমরা দেখি সাদা চালের ভাত বেশি খাওয়া হয়। সবসময় হয়তো লাল চাল নেওয়া হয় না। সাদা চালেও যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে তবে লাল চালের তুলনায় সাদা চালে ভিটামিন বি এর পরিমাণ কম পাওয়া যায়। সাদা চাল অতিরিক্ত পলিশড হওয়ার কারণে ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ নেই বললেই চলে। এ ছাড়া পটাশিয়ামের পরিমাণও কম থাকে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স লাল চালের তুলনায় সাদা চালে কম থাকে।

লাল চাল কেন খাবেন

সাদা চালের তুলনায় লাল চালের উপকারিতা অনেক বেশি। লাল চালে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় শরীরকে দূষণমুক্ত রাখে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া শরীরের ওজন কমানোর জন্য যারা ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেন, তারা অনেক সময় ভাত খেতে চান, কিন্তু ভাত খেলে ওজন বেড়ে যায় এমন ভাবনার কারণে হতাশাবোধ করেন। সেক্ষেত্রে সাদা চালের পরিবর্তে পরিমাণমতো লাল চালের ভাত খেতে পারবেন। কারণ লাল চাল ওজন কমাতে সাহায্য করে। অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাদের জন্য ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উপকারী। সেক্ষেত্রে লাল চালে প্রচুর পরিমাণে আঁশ পাওয়া যায়, যা মলত্যাগ স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

এ ছাড়া হার্টের সুস্থতা রক্ষা করতে এবং যারা উচ্চ ডায়াবেটিসসম্পন্ন বা যাদের ডায়াবেটিস অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, তাদের জন্য লাল চাল বেশ উপকারী। লাল চাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে অবশ্যই পরিমাণ ঠিক রেখে লাল চালের ভাত খেতে হবে।

লাল চালে সতর্কতা

পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, লাল বা সাদা চাল—যাই হক না কেন, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সবকিছুই পরিমিত হতে হবে। পরিমাণে বেশি খেলে লাল চালের ভালো গুণগুলো নষ্ট হয়ে যায়। লাল চালে পটাশিয়াম অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে। কিডনি রোগীদের শরীরে যেহেতু পটাশিয়াম বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের লাল চালের ভাত না খাওয়াই ভালো।

এ ছাড়া যাদের ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার অনেকের শরীরে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যেমন: আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম যাদের রয়েছে, তারা একটু বেশি ফাইবার, বারবার ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে অনেক সময় লুজ মোশন বা পেট খারাপ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাদের লাল চাল না খাওয়াই উত্তম। আবার অনেক সময় ডায়রিয়া, পেট খারাপ হলে রুটি খাওয়া বন্ধ করে ভাত খান অনেকে। এ অবস্থায় কখনই লাল চালের ভাত খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ এতে ডায়রিয়ার পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে।

লাল চালে ফাইটিক অ্যাসিড থাকে। সেক্ষেত্রে আয়রন জাতীয় খাবারগুলো শরীরের যে শোষণ সেটি কমিয়ে দেয়। যাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীদের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় লাল চাল না রাখাই ভালো। তারা মাঝেমধ্যে খেতে পারবেন লাল চালের ভাত।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus opens second round of talks to strengthen national unity

'Beautiful July Charter' would be unveiled following discussions, he says

1h ago