বাকি জিম্মিদের কফিনে ফেরত পাঠানো হবে: হামাস

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়ির কাছে ইসরায়েলি পতাকায় মোড়ানো খালি কফিন নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসরায়েলিরা। ছবি: রয়টার্স
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাড়ির কাছে ইসরায়েলি পতাকায় মোড়ানো খালি কফিন নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসরায়েলিরা। ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকলে গাজায় আটক বাকি জিম্মিরা 'কফিনে করে' ইসরায়েলে ফিরবেন। সংগঠনটি হুশিয়ারি দেয়, যেসব যোদ্ধা জিম্মিদের পাহারা দিচ্ছেন, তাদেরকে 'নতুন নির্দেশনা' দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

হামাসের কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেন, 'নেতানিয়াহু চাচ্ছেন যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির পরিবর্তে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করতে। এর অর্থ হল, জিম্মিদের পরিবারের কাছে শুধু তাদের কফিনগুলোই পৌঁছাবে। এখন পরিবারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা তাদের আপনজনকে মৃত না জীবিত, কীভাবে ফিরে পেতে চান।'

ছয় ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ উদ্ধার ও গণবিক্ষোভ

শনিবার গাজার দক্ষিণে রাফার একটি ভূগর্ভস্থ সুরঙ্গে ছয় ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এই ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ইসরায়েলিরা। এই ঘটনার দুই দিন পর এলো হামাসের এই বক্তব্য।

ওবেইদা আরও বলেন, 'জিম্মিদের মৃত্যুর জন্য নেতানিয়াহু ও তার সেনাবাহিনী পুরোপুরি দায়ী। তারা ইচ্ছা করে বন্দি বিনিময় চুক্তি চূড়ান্ত করছে না।'

এর আগে নেতানিয়াহু দাবি করেন, এই ছয় জিম্মিকে 'ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে' হামাস।

এক বিক্ষোভকারীকে আটক করছে ইসরায়েলি পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
এক বিক্ষোভকারীকে আটক করছে ইসরায়েলি পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, 'তাদেরকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে না পারার জন্য আমি ক্ষমা চাই।'

'আমরা কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম, কিন্তু সফল হতে পারিনি। এ কাজের জন্য হামাসকে চড়া মূল্য দিতে হবে', যোগ করেন তিনি।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশেক জানান, ছয় জিম্মি ইসরায়েলি বিমানহামলায় নিহত হন।

ইতোমধ্যে, ইসরায়েল নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে।

নিহত জিম্মিদের পরিবারের সদস্য, এখনো যারা বেঁচে আছেন তাদের পরিবার এবং ইসরায়েলের সাধারণ জনগণ গত দুইদিন বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মূল বক্তব্য, নেতানিয়াহুর সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সাক্ষর করলে উল্লেখিত ছয়জনের এমন করুণ পরিণতি হোত না।

বাইডেনের বক্তব্য

অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করেন, নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্ত করার চুক্তি করতে যথেষ্ঠ উদ্যোগ নেননি।

এক নিহত জিম্মির শেষকৃত্যে অংশ নেন হাজারো ইসরায়েলি। ছবি: রয়টার্স
এক নিহত জিম্মির শেষকৃত্যে অংশ নেন হাজারো ইসরায়েলি। ছবি: রয়টার্স

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেতানিয়াহু চুক্তি চূড়ান্তের জন্য যথেষ্ঠ উদ্যোগ নিয়েছেন কী না, এ প্রশ্নের জবাবে বাইডেন 'না' বলেন।

বেশ কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও এতে ফল আসেনি। সর্বশেষ মে মাসে নতুন একটি প্রস্তাব দেন বাইডেন, যা হামাস মেনে নিলেও ইসরায়েল নতুন কিছু শর্ত আরোপ করে ঘোলাটে করে তুলেছে।

নেতানিয়াহুর অবস্থান

সোমবার দেশটির সবচেয়ে বড় শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে দিনভর ধর্মঘট পালিত হয়। তবে আদালতের নির্দেশে ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে ইউনিয়নটি।

তা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলডার মত দেন, ইসরায়েলে দেশব্যাপী ধর্মঘট ও দেশের মানুষের বাড়তে থাকা ক্ষোভ গাজার পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

এলডার জানান, 'অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নেতানিয়াহুর কাছে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবন বাঁচানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

'তবে বড় আকারে বিক্ষোভ দেখা দিলেও, এখনো ইসরায়েলি ডানপন্থি ও কট্টর ডানপন্থিদের সমর্থন হারায়নি সরকার। যার ফলে এখনো শক্তিশালী অবস্থানে আছেন নেতানিয়াহু', যোগ করেন তিনি।

প্রাক্তন ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ও সরকারি উপদেষ্টা অ্যালন পিনকাস আল জাজিরাকে বলেন, নেতানিয়াহুর 'যুদ্ধবিরতি বা বন্দি বিনিময় করার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই।'

'এতে বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। শুধুমাত্র তার (নেতানিয়াহুর) অনিচ্ছার কারণে এখনো চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি', যোগ করেন পিনকাস।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Govt Logo

All 64 DCs protest deputy secy promotion proposal

The Bangladesh Administrative Service Association (Basa) has also issued a statement protesting the proposal

17m ago