কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

কাঁচা পেঁয়াজ
ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজ আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত একটি সাধারণ উপকরণ। তবে কাঁচা পেঁয়াজে আছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। পেঁয়াজ শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, কাঁচা পেঁয়াজ একাধারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও রোগপ্রতিরোধক উপাদানে ভরপুর। প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থায় পেঁয়াজকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।

চলুন জেনে নেই কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা। এ বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মি

তিনি জানান, পেঁয়াজ আমাদের খাবারে যেমন স্বাদ আনে, তেমনি শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে ও প্রতিদিনের সুস্থতায় অবদান রাখে। নিয়মিত পরিমাণমতো কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হজমজনিত সমস্যা ও ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

পুষ্টিগুণ

১০০ গ্রাম কাঁচা পেঁয়াজে সাধারণত যে পুষ্টি উপাদান থাকে তা হলো:

শক্তি: ৪০ ক্যালোরি

কার্বোহাইড্রেট: ৯ দশমিক ৩৪ গ্রাম

প্রোটিন: ১ দশমিক ১ গ্রাম

ফাইবার: ১ দশমিক ৭ গ্রাম

ভিটামিন সি: ৭ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম

এছাড়াও রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, কোয়ারসেটিন, অ্যান্থোসায়ানিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি খনিজ পদার্থ।

উপকারিতা

১. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

কাঁচা পেঁয়াজে থাকা ভিটামিন সি এবং কোয়ারসেটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি শরীরকে ঠান্ডা, ফ্লু ও ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

পেঁয়াজে থাকা সালফার যৌগ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়াতে সাহায্য করে। এতে করে রক্তনালী শক্ত হওয়া ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। ফ্ল্যাভোনয়েড-সমৃদ্ধ খাবার হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পেঁয়াজ তার মধ্যে অন্যতম।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

পেঁয়াজে থাকা পটাশিয়াম রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ উপকারী।

৪. ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে

কোয়ারসেটিন ও সালফার যৌগগুলো কোষে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং ক্যানসার কোষ গঠনের সম্ভাবনা কমায়। বিশেষ করে কোলন, ব্রেস্ট ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

৫. হজম শক্তি বাড়ায়

কাঁচা পেঁয়াজে থাকা ফাইবার ও প্রিবায়োটিক উপাদান অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। এটি হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা

পেঁয়াজে থাকা সালফার যৌগ ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়ক। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উপকারী।

৭. ঠান্ডা, কাশি ও গলাব্যথায় উপকারী

প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকায় কাঁচা পেঁয়াজ ঠান্ডা, কাশি ও গলাব্যথা কমাতে সহায়তা করে। আয়ুর্বেদ মতে, মধু ও পেঁয়াজ একসঙ্গে খেলে শ্বাসতন্ত্রে উপশম আনে।

৮. হাড়ের স্বাস্থ্যে সহায়ক

ক্যালসিয়াম ও সালফার যৌগ হাড় মজবুত করে। দীর্ঘমেয়াদে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে হাড় ক্ষয় ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ সম্ভব।

৯. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী

কাঁচা পেঁয়াজে থাকা সালফার ত্বকের কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে। পেঁয়াজ রস চুলে ব্যবহার করলে খুশকি ও স্ক্যাল্প ইনফেকশন কমে।

১০. রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে

পেঁয়াজে থাকা উপাদান রক্ত পরিষ্কার করে এবং টক্সিন দূর করে। ফলে ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ির সমস্যা কমে।

১১. ডিটক্সিফিকেশন

কাঁচা পেঁয়াজ লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।

কীভাবে খাবেন

কাঁচা পেঁয়াজকে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করার সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় উপায় হলো সালাদ ও ভাতের সঙ্গে খাওয়া। তবে খাবারের বৈচিত্র আনতে স্যান্ডউইচ, বার্গার বা চাটনিতে ব্যবহার করলেও এর পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।

সতর্কতা

যদিও কাঁচা পেঁয়াজের উপকারিতা অনেক, তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে, যেমন: গ্যাস, অম্বল বা বদহজম; মুখে দুর্গন্ধ; অ্যালার্জি বা চর্মরোগ (সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে)। যাদের পাকস্থলীর সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাঁচা পেঁয়াজ খাবেন।

Comments