৪৬ কোটি ডলার জরিমানা পরিশোধে অপারগ ট্রাম্প, বন্ধক বা বিক্রি হতে পারে সম্পত্তি

নির্বাচনী প্রচারণায় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স (৯ মার্চ, ২০২৪)
নির্বাচনী প্রচারণায় জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স (৯ মার্চ, ২০২৪)

 

নিউইয়র্কে একটি প্রতারণা মামলার রায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে ট্রাম্প এ পরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমানের বন্ড দিতে অপারগ বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে। 

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তবে যতদিন আপিল আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ট্রাম্পকে জরিমানার অর্থ নগদে অথবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ নেওয়া বন্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ পরিমাণ অর্থের সমতুল্য বন্ড দিতে আগ্রহী কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাচ্ছেন না সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেছেন, এত বড় আকারের বন্ড জোগাড় করা 'প্রায় অসম্ভব'।

যদি তিনি এই অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে আদালত তার আবাসন ব্যবসার কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে সে অর্থের যোগান দিতে পারে।

বন্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ একটি ফির বিনিময়ে আদালতকে জরিমানার অর্থ পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্প যদি আপিলে হেরে যান এবং নিজে সেই অর্থ পরিশোধ করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে বন্ডদাতা প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে, ট্রাম্পের বিষয়টি বিমা প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানান, তাকে যে বন্ড দিতে বলা হয়েছে, তা 'যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রায় অসম্ভব বিষয়। এমন কী, আমার নিজের প্রতিষ্ঠানের মতো সফল প্রতিষ্ঠানের জন্যেও অসম্ভব।'

'বন্ডদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এত বড় পরিমাণের বন্ডের কথা কস্মিনকালেও শোনেনি', যোগ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দেওয়া আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, তারা 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চালিয়েছে।'

কিন্তু ওই পরিমাণ অর্থ পরিশোধে কেউ রাজি হয়নি।

আইনজীবীরা আরও জানান, তারা মোট ৩০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেও সফল হননি।

এই মামলায় ট্রাম্পের বড় দুই ছেলেকেও লাখো ডলার ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি, নিউইয়র্কের বিচারক আর্থার এনগোরান ট্রাম্পকে এই অঙ্গরাজ্যে তিন বছরের জন্য যেকোনো ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করেছেন। বিচারে প্রমাণ হয়েছে, ট্রাম্প ভালো ঋণ পাওয়ার জন্য নিউইয়র্কে তার কিছু ভৌত সম্পদের দাম বাড়িয়ে বলেছেন, যা এক ধরনের প্রতারণা।

অপর এক বিচারক এই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করলেও বন্ডের পরিমাণ কমিয়ে ১০ কোটি ডলার করার আবেদন নাকচ করেন।

আদালতে জমা দেওয়া সর্বশেষ নথিতে সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা একটি বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পাওয়া একটি মুচলেকা যুক্ত করেছেন। সেখানে সেই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, 'এত বড় আকারের বন্ড অত্যন্ত বিরল।'

সাবেক ফেডারেল কৌসুলি ডায়ানা ফ্লোরেন্স মন্তব্য করেন, ট্রাম্পের আইনি পরিস্থিতি নজিরবিহীন এবং সামনে কি হবে, তার পূর্বাভাষ দেওয়া খুবই ঝামেলার।

'নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল খুব শিগগির ট্রাম্পের সম্পত্তিগুলোকে বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে জরিমানার অর্থ আদায় করা শুরু করতে পারে', যোগ করেন ফ্লোরেন্স।

তিনি আরও জানান, যদি কোনো আদালত তাকে আরও সময় দিতে রাজি হয়, তবেই ট্রাম্প কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।

অপরদিকে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল অঙ্গীকার করেছেন, জরিমানা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি ট্রাম্পের সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দিবেন।

যতদিন ট্রাম্প এই জরিমানা পরিশোধ না করছেন, এর বিপরীতে দৈনিক এক লাখ ১২ হাজার ডলার করে সুদ যোগ হচ্ছে।

ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের আইনজীবীরা জানান, বন্ডদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো 'আবাসন বা এ ধরনের ভৌত সম্পদকে' গ্যারান্টি হিসেবে গ্রহণ করতে চান না। তারা এমন সম্পদের বিপরীতে বন্ড দিতে আগ্রহী, যেগুলো 'তরল', অর্থাৎ খুব সহজে নগদ অর্থে রূপান্তর করা যায় এমন বিনিয়োগ।

ফর্বস এর হিসাব মতে, ট্রাম্পের সম্পদের মোট মূল্যমান ২৬০ কোটি ডলার, যার মধ্যে তরল সম্পদ ৪০ কোটি ডলার।

৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার জরিমানাই ট্রাম্পের একমাত্র মাথাব্যথার কারণ নয়। এর আগে জানুয়ারি ই জন ক্যারলের কাছে মানহানি মামলায় হেরে যাওয়ার পর আদালত তাকে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার পরিশোধের নির্দেশ দেয়।

Comments

The Daily Star  | English
Gen Z factor in geopolitics

The Gen Z factor in geopolitics and the Bangladesh-US dynamics

Gen Z should keep in mind that the US cannot afford to overlook a partner like Bangladesh given the country’s pivotal position in South Asia’s economic landscape.

10h ago