গাজার পানি বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ১০

নুসেইরাত শিবিরের পানি বিতরণকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ঘটনাস্থলে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স
নুসেইরাত শিবিরের পানি বিতরণকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ঘটনাস্থলে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স

গাজার একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। এই ঘটনায় আরও ১৭ জন আহত হয়েছেন।

আজ রোববার স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স ও সিএনএন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ দাবি করেছে, তারা সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদের একজন জঙ্গি সদস্যের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় হামলা পরিচালনা করেছিল। কিন্তু কারিগরি বিভ্রাটের কারণে ক্ষেপণাস্ত্রটি 'লক্ষ্যবস্তু থেকে বেশ খানিকটা দূরে আঘাত হানে।'

বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনা জানায়, 'বিভ্রাটের কারণে নিরীহ বেসামরিক মানুষের কোনো ক্ষতি হয়ে থাকলে সেজন্য আইডিএফ অনুতপ্ত।'

আইডিএফ আরও জানিয়েছে, কেন এই বিভ্রাট দেখা দিলো, সে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

আল-আওদা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আহমেদ আবু সুফিয়ান এএফপিকে জানান, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে ছয় শিশু নিহত ও আরও ১৭ জন আহত হন।

নুসেইরাত শিবিরের পানি বিতরণকেন্দ্রে হামলায় আহতরা আল-আওদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
নুসেইরাত শিবিরের পানি বিতরণকেন্দ্রে হামলায় আহতরা আল-আওদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

সিএনএন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানায়, মোট নিহতের সংখ্যা ১০।

হামলার পর পানি বিতরণ কেন্দ্রে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও ফুটেজে শিশুসহ একাধিক মানুষের মরদেহ, রক্তাক্ত বালতি ও পানির কনটেইনার মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। 

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজায় খাওয়ার পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সঙ্গে জ্বালানি সংকট যোগ হওয়ায় লবণাক্ত পানি পরিশোধন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। যার ফলে, এ মুহূর্তে গাজাবাসীদের একমাত্র বিকল্প এ ধরনের বিতরণ কেন্দ্র থেকে প্লাস্টিকের কনটেইনারে করে পানি সংগ্রহ করা।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার হাসপাতালগুলোতে ১৩৯টি মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে। এই সংখ্যা পানি বিতরণ কেন্দ্রে হামলার আগে প্রকাশ করা হয়েছিল।

এখনো আরও বেশ কয়েকজন মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। ২ জুলাইয়ের পর এক দিনে এতজন মানুষ নিহত হয়নি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

আজকের নিহতদের সহ গাজায় মোট নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮,০২৬।

যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা

অপরদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস-ইসরায়েলের পরোক্ষ আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ এখনো একমত হতে পারেনি।

৬০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কাতারের দোহায় আলোচনা চলছে। কিন্তু গত সপ্তাহে 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি' চালুর যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল, তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে বলে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা জানান।

উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অবাস্তব শর্ত জুড়ে দিয়ে চুক্তি 'ঝুলিয়ে দেওয়ার' অভিযোগ এনেছে।

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

'দুই দিনের নিবিড় আলোচনার পর চারটি সমস্যার মধ্যে মাত্র একটির সমাধান হওয়া বাকি আছে।'

নুসেইরাত শিবিরের পানি বিতরণকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রক্তমাখা পানির কনটেইনার। ছবি: রয়টার্স
নুসেইরাত শিবিরের পানি বিতরণকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রক্তমাখা পানির কনটেইনার। ছবি: রয়টার্স

সেদিনই হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে দীর্ঘ সময় গাজার যুদ্ধ নিয়ে আলাপ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, 'ওই সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করতে হবে।'

শনিবার সিএনএনকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাস কর্মকর্তা বলেন, আলোচনা 'স্থবির' হয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল নতুন কিছু শর্ত নিয়ে এসেছে।

'যুদ্ধবিরতি চালু হলেও গাজার বিভিন্ন অংশে সেনা মোতায়েন রাখার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে ইসরায়েল,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments