চট্টগ্রামে ফলমুন্ডিতে অভিযান

কম দামে খেজুর কিনে চড়া দামে বিক্রি, ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

দেশের বৃহত্তম ফলের বাজার চট্টগ্রামের ফলমুন্ডিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। ছবি: স্টার

খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণ ও কারসাজি রোধে দেশের বৃহত্তম ফলের বাজার চট্টগ্রামের ফলমুন্ডিতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ শনিবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।

আজকের অভিযানে খেজুর আমদানি থেকে শুরু করে পাইকারি বাজার ও কমিশন এজেন্টদের ব্যাপক অনিয়ম ভ্রাম্যমাণ আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। এসময় ৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেন তারা।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪০ হাজার ২৪ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এগুলোর গড় মূল্য কেজিতে ৮৯ টাকা ৩৬ পয়সা।

কিন্তু জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ফলমুন্ডির আড়তে গিয়ে দেখতে পান পাইকারি বাজারে বিভিন্ন জাতের খেজুর চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে আজওয়া ৭৫০-১০০০ টাকা, মাবরুম ১২০০-১৩০০ টাকা, মরিয়ম ৫০০-৮০০ টাকা, দাবাস ৪০০-৬০০ টাকা, জাহিদি ২০০-২৫০ টাকা, মেজডুল খেজুর ১২০০-১৩০০ টাকা, আলজেরিয়া খেজুর ২৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি তথ্য ও বর্তমান বাজার দরে বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

আমদানি তথ্যমতে, ফলমুন্ডি বাজারে খেজুরের আমদানিকারক আছেন ১২ জন। তবে ফলমুন্ডি বাজারে আজকের অভিযানে গিয়ে ৩ আমদানিকারকের সন্ধান মেলে।
 
এদের মধ্যে আল্লাহর রহমত স্টোর গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন খেজুর মোট ৩৩টি এলসির মাধ্যমে আমদানি করেছে। যেখানে একটি 'এইচএস কোড' দেখিয়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এসব খেজুরের কেজিপ্রতি গড় আমদানি মূল্য ৭০ টাকা ১৪ পয়সা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আল্লাহর রহমত স্টোর জাহিদি, নাসার, আল মাদাফ, ফারাহ মধ্যম জাতের খেজুর আমদানি মূল্যের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের দায়ে আল্লাহর রহমত স্টোরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আলী জেনারেল ট্রেডিং ১৬৮ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছে ১০৪ টাকা কেজি মূল্যে। কিন্তু জাহিদি জাতের খেজুর ২৫০-৩০০ টাকা দরে বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। এই প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ ছাড়া, ফ্রেশ ফ্রুট গ্যালারিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই পাইকারি দোকানটি ঢাকা-ভিত্তিক বাংলাদেশের বৃহত্তম খেজুর আমদানিকারক অ্যারাবিয়ান ফ্রুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড এবং মদিনা ট্রেডিংয়ের হয়ে চট্টগ্রামে চড়া দামে খেজুর বিক্রি করছিল।

আমদানি তথ্যমতে, অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেড মোট ৯ হাজার ২১১ দশমিক ৭৫২ মেট্রিক টন খেজুর কেজিপ্রতি ৮৪ টাকা ৬৪ পয়সা দরে আমদানি করেছে। একটি 'এইচএস কোড' দেখিয়ে অ্যারাবিয়ান ফ্রুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড ২৫-৩০ জাতের খেজুর বাংলাদেশে আমদানি করেছে। আজওয়া, মেজডুল, মাবরুক, সাফওয়া, মরিয়ম প্রভৃতি উন্নত জাতের খেজুর আমদানি করলেও সেগুলোর কম দাম দেখিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। এরপর এই খেজুর চড়া দামে বিক্রি করছে। জাত ভেদে খেজুরের দাম ৫০০ থেকে হাজার টাকার উপরেও  বিক্রি হচ্ছে। মদিনা ট্রেডিংও একইভাবে স্বল্প মূল্যে খেজুর আমদানি করে চড়া মূল্যে বিক্রি করছে। 

পাইকারি ফল ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম চড়া দামে খেজুর বিক্রি করতে পাইকারি ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্টদের বাধ্য করছেন। এসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের মালিক এবং তিনি সাথী ফ্রুটসেরও সত্ত্বাধিকারী। এ ছাড়াও, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুর উদ্দিনও রমজান এলেই দেশি-বিদেশি ফল চড়া দামে বিক্রি করতে আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে একটি চক্র গড়ে তোলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

2h ago