‘ব্রেডক্রাম্বিং’ কী, আপনার সঙ্গে হচ্ছে না তো?

প্রতীকী ছবি | সংগৃহীত

কাউকে পছন্দ হওয়া বা না হওয়া—এ দুটোই মানুষের নিজস্বতার ওপর নির্ভর করে। তাই যে কাউকে প্রত্যাখ্যানের অধিকার সবারই আছে। রোমান্টিক প্রস্তাবের উত্তর 'না' বলে দেওয়াকে আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ঠুর মনে হয়। কিন্তু এর চেয়েও নির্দয় আচরণও কিন্তু আছে এবং দিনের পর দিন তার শিকার হয়েও অনেকেই ভেবে নেন—'ভালোই তো চলছে!'

প্রেমের ব্যক্ত কিংবা অব্যক্ত প্রস্তাবে পুরোপুরি 'হ্যাঁ' বা 'না' না বলে, বরং এক ধরনের আগ্রহ জিইয়ে রেখে সেই মানুষটি থেকে ইচ্ছেমতো সময় ও মনোযোগ এবং ক্ষেত্রবিশেষে অন্যান্য সুবিধা আদায় করে নেওয়ার বিষয়টিকে বলা হয় 'ব্রেডক্রাম্বিং'। এটি এক ধরনের মানসিক শোষণ এবং এর শিকার অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন নন বলে দিনের পর দিন ব্রেডক্রাম্বিং চলতে থাকে।

কীভাবে জানবেন আপনিও ব্রেডক্রাম্বিংয়ের শিকার হচ্ছেন কি না?

অনিয়মিত যোগাযোগ

যারা ব্রেডক্রাম্বিং করে থাকে, তারা কখনোই নিয়মিত যোগাযোগ করবে না। এটা তাদের কাছে বেশ বড় দায়িত্ব বলে মনে হয়। কিন্তু হুট করে উদয় হয়ে বেশ কিছু আবেগী কথাবার্তা বলে আপনাকে ঝুলিয়ে রাখার কাজটাও তারা খুব ভালোভাবে করবে। কেননা এজন্য নিয়মিত যোগাযোগের প্রয়োজনও নেই।

পোস্টে রিঅ্যাক্ট করা

এমন মানুষ প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন ছবি, পোস্ট ইত্যাদিতে প্রায় সবার আগে রিঅ্যাক্ট করবে, যাতে আপনার মনে হয় যে সে আপনার প্রতি আগ্রহী। কিন্তু যখন যোগাযোগের সময় আসবে, তখন ম্যাসেজের উত্তরে খুব একটা আগ্রহী ম্যাসেজ আসবে না। যদি না তাদের সময় একঘেয়ে কাটে।

কোনো পরিকল্পনাই ধোপে টেকে না

কোথাও ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া কিংবা অন্তত একবার দেখা করার মতো সহজ-সাধারণ পরিকল্পনাগুলোর জন্য আপনি যখন তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন, তখন অপরপক্ষ প্রতিবারই এ পরিকল্পনায় সাড়া দেবে। কিন্তু সেই সাড়াদান কখনোই বাস্তবে রূপ নেবে না। একেবারে শেষ মুহূর্তে কিংবা কিছু আগেই তারা হাজির হবে অজুহাতের ঝুলি নিয়ে। অতঃপর আরও অপেক্ষা, আরও ব্রেডক্রাম্বিং।

একমুখী চাহিদা

অপরপক্ষ যদি কখনোই আপনার ইচ্ছে, অনুভূতির মূল্য না দিয়ে শুধুমাত্র যখন নিজের ইচ্ছে, তখনই দেখা করে এবং এমন একটা ভাব দেখায় যে এটুকুই যথেষ্ট—তবে সমূহ সম্ভাবনা আছে যে আপনি ব্রেডক্রাম্বিংয়ের শিকার। কেননা কোনো সুস্থ সম্পর্কে একমুখী চাহিদার স্থান নেই।

কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি

যোগাযোগের মতোই এই ব্যক্তিরা অন্যান্য সব বিষয়েই বেশ অনিয়মিত। এদের আবেগ আছে। কিন্তু সেই আবেগের দেখা আপনি সবসময় পাবেন না। ঠিক যে সময়ে তাদের মনে হবে, আপনাকে তাদের দরকার—তখনই অনেক বেশি মিষ্টি কথা আসবে ওই প্রান্ত থেকে। আর এ ধরনের অনিয়মিত ব্যবহারে আপনার মস্তিষ্কে সৃষ্টি হবে এক ধরনের ঘোর ও জটিলতা। সেই জটিলতা থেকে বের হওয়াও বড় চ্যালেঞ্জ।

কী করবেন

ব্রেডক্রাম্বিংয়ের মতো বিষয় আমাদেরকে নিজেদের যোগ্যতা সম্পর্কে দ্বিধান্বিত করে তোলে। দিনের পর দিন কোনো মানুষের কাছ থেকে যেকোনো ধরনের শোষণের শিকার হলেই এটা ঘটে থাকে। তখন মনে হয়, 'আমি হয়তো খুব একটা যোগ্য নই' কিংবা 'আমার জন্য এটুকুই যথেষ্ট' ইত্যাদি। কিন্তু এভাবে ভাবলে চলবে না। নিজেকে এমন বিষয় থেকে বের করে নিয়ে সুস্থ মন উপহার দেওয়াটা নিজেরই দায়িত্ব। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনার সঙ্গে যে ব্রেডক্রাম্বিং হচ্ছে, সেটা নিশ্চিত হওয়া এবং এরপর নিজেকে প্রশ্ন করা যে, এমন আচরণ আপনি আসলে কেন মেনে নিচ্ছেন? কারণটা চিহ্নিত করুন এবং অপরপক্ষের সঙ্গে সামনা-সামনি আলোচনায় যান। প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের মতো মানসিক পরিষেবার সাহায্য নিন।

অনেকক্ষেত্রে যারা ব্রেডক্রাম্বিং করে, তারাও সেটি বুঝতে পারে না। এর পেছনে থাকে তাদের নিজস্ব একাকিত্ব এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা। যে কারণে একটি অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য তারা প্রস্তুত থাকে না। অনেকে আবার ইচ্ছে করেও করে। এতে কোনোভাবে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি হয় বলে একটা ধারণাও প্রচলিত আছে। কারো সঙ্গে আবেগীভাবে না জড়িয়ে তাদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়া বেশ স্মার্ট একটি বিষয়—এমন বিশ্বাসও আছে অনেকের মাঝেই।

'সে আমাকে ভালোবাসে, নাকি বাসে না?'

গোলাপের পাঁপড়ি ছিঁড়ে ছিঁড়ে এমন বোকা বোকা প্রেমে কখনো না কখনো সবাই মজে। এতে বয়সের সীমারেখা কিংবা জীবনের জটিলতা, কিছুই খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু ভালোবাসার মতো মিষ্টি-মধুর বিষয়টি যাতে কোনোভাবেই আমাদেরকে শোষণের কাতারে না নিয়ে যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকাটাও জরুরি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, টাইমস অব ইন্ডিয়া, মাইন্ড বডি গ্রিন

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago