সম্পর্কে গোস্টিং কেন হয়, কী করবেন

গোস্টিং
ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় ভূতের গল্প বা গোস্ট স্টোরি পড়ে রাতের ঘুম হারাম করেনি এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। তাই বড়বেলায় এসে গোস্টিংয়ের নাম শুনে মনে হতেই পারে, এও বুঝি ভূত সম্পর্কিত কোনো বিষয়! তবে এ ভূতের বিষয় নয়, বরং নিজেই এক ধরনের ভূত হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার।

রোমান্টিক বা অন্যান্য সম্পর্কে এক পক্ষ থেকে হুট করে কোনো কারণ না দেখিয়েই যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া বা একেবারেই সাড়া না দেয়ার বিষয়টিকেই শহুরে আলাপনে নাম দেওয়া হয়েছে গোস্টিং। ঠিক ভূতের মতোই উধাও হয়ে যাওয়ার কিংবা হুট করে 'ভূত' বা অতীত হয়ে যাওয়ার জন্যই এমন নামকরণ। অধুনা প্রেমের গল্পে এই গোস্টিং শব্দটি এবং ব্যাখ্যা না দিয়ে হুট করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার আচরণটি অপরিচিত নয়।

গোস্টিং কখন করা হয়

সম্পর্ক যেমনই হোক, বন্ধুত্বের বা প্রেমের– বা শুধুই সামাজিক কুশল বিনিময়ের হাই-হ্যালোর, কখনো কখনো সেই সম্পর্ককে বোঝা বলে মনে হতেই পারে। যে মানুষটাকে একসময় ভালো লাগত বলেই মিশেছিলেন, তার সঙ্গে হয়তো আর জমছে না ঠিক আগের মতো। কিন্তু বিষয়টা একেবারে পিনপয়েন্ট করে বলা বা সেই মানুষের সঙ্গে আলাপে জড়ানো আরও চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে।

এ ধরনের ক্ষেত্রে অনেকেই বেছে নেন গোস্টিংয়ের মতো উপায়। অনেকের কাছে সম্পর্ক বিচ্ছেদের জন্য গোস্টিংই বেশ সদয় একটি কৌশল। কিছু না বলে-কয়ে, একেবারে নেই হয়ে যাওয়ার এই বিষয়টি যিনি গোস্ট করেন, তার জন্য আপাতদৃষ্টিতে বেশ সুবিধাজনক মনে হলেও অন্য পক্ষের জন্য তা নিয়ে আসে একধরনের অনিশ্চিত অপেক্ষা ও নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতার পাহাড়।

'আমি কি কোনো দোষ করেছি?'

'আমার সঙ্গে এমন কেন করল?'

'বলেও তো যাওয়া যেত, তাই না?'

এমন সব প্রশ্নবাণে তারা তখন নিজেকে জর্জরিত করে তোলেন।

মজার বিষয় হচ্ছে, এই গোস্টিং বিষয়টা কিন্তু সামনাসামনি করা কঠিন। কেউ সামনে আছে কিন্তু তার কাছ থেকে হুট করে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা না দিয়ে চলা যাওয়ার ঘটনা হরহামেশা ঘটে না, যেমনটা ঘটছে ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যমে। ফোন নম্বর, সামাজিকমাধ্যম ইত্যাদি পরিসরে ব্লক করে দেওয়া বা শুধু মেসেজ বা কলের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিলেই কাউকে গোস্ট করাটা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু যদি প্রযুক্তি এভাবে আমাদের জীবনের সবটা জায়গা জুড়ে না থাকত, তাহলেও কি অন্যের অনুভূতির একেবারেই তোয়াক্কা না করে কিংবা বেশ জোর করেই নিজেকে সদয় ব্যক্তির তকমা দিয়ে গোস্টিং সম্ভব হতো? তখন প্রয়োজন হতো একটি ভালো রকম ব্যাখ্যার। প্রযুক্তিই গোস্টিংকে করে তুলেছে এতটা সহজ ও দিনে দিনে স্বাভাবিকও।

 

যেকোনো কঠিন বিষয়ের সম্মুখীন হওয়া বা কোনো বিষয়ে সোজা কাউকে 'না' বলে দেওয়া অনেকের জন্যই কঠিন। আর গোস্টিংয়ের মতো 'বাইপাস টেকনিক'গুলো একে করে তুলেছে পানির মতো সহজ।

তবে সবসময় গোস্টিং মানেই যে একবারে উধাও হওয়া, তা কিন্তু নয়। কেউ আবার ধীরে ধীরে নেই হওয়ার প্রক্রিয়াতেও ধরে রাখেন বন্ধু বা প্রেমিক-প্রেমিকাটিকে। চূড়ান্ত উদাসীনতা এই ধীরগতির গোস্টিংয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। কোনো ধরনের পরিকল্পনার সাড়া না দেওয়া, ফোনকল বা মেসেজ এড়িয়ে যাওয়া, কথোপকথনে একেবারেই আগ্রহ না দেখানো ইত্যাদিও গোস্টিং ব্যামোর উপসর্গ।

কিন্তু এক পক্ষের যোগাযোগের ব্যর্থতা গোস্টিংয়ের মাধ্যমে অন্য পক্ষকে করে তোলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যেকোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠে এক ধরনের নির্ভরতার ওপর ভিত্তি করে। আধুনিক রোমান্টিক জীবনকে গোস্টিংয়ের মতো বিষয়গুলো এতটাই অনিশ্চিত করে তোলে সবকিছুকে যে, কারো সঙ্গে কথা জমার পর তাকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় যে কবে আবার সেও হয়ে যায় 'ডিজিটাল ভূত'!

কেউ গোস্ট করলে কী করবেন?

যেকোনো সম্পর্কই দুই হাতে তালি বাজার মতো। এক পক্ষ তা ধরে রাখতে পারে না এবং অনেকাংশে তা ঠিকও নয়। ভাগ করে নেওয়া আগ্রহই যেখানে সম্পর্ক শুরুর মূল ভিত্তি ছিল, সেখানে যদি এক পক্ষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে থাকে– তবে তাকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে অনেকটা ছেড়ে দেওয়াই ভালো। তবে গোস্টিংয়ের মতো ব্যাখ্যাহীন বিদায়ে আপত্তি থাকলে সেটি নিয়ে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করা যায়। যদিও এই সময়টাতে কথা বলার চেষ্টা মানেই হিতে-বিপরীত হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা।

তাই যদি কেউ আপনাকে গোস্ট করে, তাহলে সেক্ষেত্রে নিজের মনকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে সে পথ থেকে সরিয়ে নেওয়াই হবে বিচক্ষণের কাজ। কারণ সব সম্পর্ক ঠিক হয় না, হতেও নেই। ঠিক রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সেই কবিতার মতোই-

'আঁকড়ে থেকো না কিছু। যে যাবার তাকে চলে যেতে দাও, যে ফেরার সে তো ফিরবেই।'

 

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran’s Araghchi says US attack will have ‘everlasting consequences’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

2h ago