এই ৫ ভুল আপনার সম্পর্ককে বিচ্ছেদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না তো

সম্পর্ক, প্রেম, বিচ্ছেদ, ডিভোর্স
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তার তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পর্কগুলো। সম্পর্কের বহু প্রকারভেদ, বহু প্রেক্ষাপট রয়েছে। তবে এরই মাঝে যে সম্পর্কটি আমাদের কাছে জীবনের অন্যতম প্রধান স্থান দখল করে থাকে, তার নাম প্রেম, সাহচর্য। একে অন্যের হাতে হাত রেখে প্রেমের আশ্বাস দিয়ে জীবনটা পার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির নাম প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে 'বিয়ে'।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অনেক ক্ষেত্রেই এই সম্পর্কগুলো তার প্রত্যাশার পারদ ছুঁতে পারে না এবং একটা সময় মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে দেখা দেয় ফাটল, পরিণতি দাঁড়ায় বিচ্ছেদে। সম্পর্কগত বিচ্ছেদ—অর্থাৎ, ডিভোর্স কিংবা ব্রেকআপের সবচেয়ে সাধারণ পাঁচটি কারণ নিয়েই আজকের এই লেখাটি।

বিরামহীন কলহ

ঝগড়াঝাঁটি কোন সম্পর্কে না হয়? কথায় আছে, একসঙ্গে অনেকগুলো বাসন-কোসন থাকলেও খুটখাট লেগে যাওয়া স্বাভাবিক, আর আমরা তো মানুষ। কিন্তু এই খুনসুটিময় খুটখাটের সীমানা পেরিয়ে যখন ঝগড়াগুলো ঘরের চার দেয়ালের বাইরে প্রতিধ্বনিত হয়; দৈনন্দিন জীবনে আমাদেরকে ক্লান্ত করে তোলে, তখন আর তা কোনোভাবেই জীবনে মিষ্টতা ধরে রাখতে পারে না। বিরামহীন কলহের ফলে দুজনের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের তিক্ত আবহ, যা থেকে মুক্তি পেতে তারা হাঁসফাঁস করে, জানলা খুলে তাকাতে চায় বাইরের দিকে—যেখানে তার সঙ্গীটি ছাড়া বাকি সব কিছুই তার কাছে ভালো মনে হয়।

অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। এমনকি যারা দিনের পর দিন ঝগড়াকে নিজেদের সম্পর্কের 'স্ট্রং পয়েন্ট' বলে মজা করছেন, হতেই পারে—একদিন এই ঝগড়াঝাঁটির ফলেই তারা আলাদা পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন।

অমীমাংসিত সমস্যা

যেকোনো সমস্যার সমাধান ঠিক সময়ে না করলে তা আমাদের জীবনে এক অমীমাংসিত রহস্য হয়ে থেকে যায়। আর এর ফলে নিত্যদিনের জীবনে এমন বহু নতুন নতুন বিরূপ প্রভাব পড়ে, যার সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। আপাতদৃষ্টিতে সেই প্রভাবগুলো তেমন কিছুই না মনে হলেও এর শেকড় গাড়া থাকে অমীমাংসিত সেসব সমস্যার গভীরে, যা থেকে আমরা পালিয়ে বেড়াই। ব্যক্তিগত হিসাবেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য। তবে দুজনের মিষ্টিমধুর প্রেম বা বিয়ের সম্পর্কটিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে এর কারণ আলাদা হলেও প্রভাবটা বেশিরভাগ সময়ই নেতিবাচক হয়। হয়তো কারো একটা বিষয় অন্যজনের পছন্দ হয়নি বা তার কোনো আচরণে সে কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু সেই খারাপ লাগার বিষয়টি সে অপরপক্ষকে না জানিয়ে নিজের মধ্যে রেখে দিয়েছে এবং তার ফলে অজানা অনেক অভিযোগ তৈরি হয়েছে।

বিরক্তির মনোভাব

অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর ফলে ব্যক্তির মধ্যে জন্ম নেয় প্রচণ্ড ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ থেকে তৈরি হতে পারে একটি বিরক্তির বলয়। যে মানুষটিকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার কথা ছিল, তার ছোটখাটো সব আচরণই বিরক্ত লাগতে শুরু হয়। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এমন কাউকে দেখতে পাওয়াটা সুখকর হয় না, কেননা তার প্রতি মনের মধ্যে তখন বাজছে শুধুই বিরক্তির ডামাডোল। দুঃখ বা আনন্দের চাইতেও অধিক মাত্রায় ছোঁয়াচে বিরক্তির অনুভূতি। তা ক্রমশ ছড়িয়ে যায় সঙ্গীর মনেও। আর একটি আপাত সুন্দর প্রকৃতির সম্পর্ক নিশ্চয়ই দুজন বিরক্ত মানুষকে দিয়ে খুব বেশিদূর এগোতে পারে না। তাই একদিন বিরক্তি চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে গিয়ে নিয়ে আসে বিচ্ছেদের পয়গাম। আর নয়তো আজীবন চলতে থাকে অভিযোগ, অনুযোগ আর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির সংসার। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিচ্ছেদ যাদের মধ্যে ঘটে না, তারা মূলত জীবন এভাবেই কাটিয়ে দেয়—যা কিনা তাদের আশপাশের মানুষদের জন্যও ভালো কিছু নয়।

যোগাযোগের অভাব

ইংরেজিতে একটি কথা আছে—'কমিউনিকেশন ইজ দ্য কি'। কিন্তু যোগাযোগ কীসের চাবিকাঠি? যোগাযোগ মূলত সবধরনের সম্পর্কের সাফল্যের ক্ষেত্রেই একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে। মনের কথা মনেই না রেখে সামনের মানুষটির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার ফলেই তৈরি হতে পারে সম্পর্কের সুন্দর সেতু। অন্যথায় সে সেতু ভেঙে পড়া, অর্থাৎ বিচ্ছেদের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ভিত্তি হিসেবে উভয় পক্ষের মধ্যকার যোগাযোগকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ যোগাযোগ ঠিকঠাক থাকলে যেকোনো বিরূপ পরিস্থিতিও সামাল দেওয়া সম্ভব।

আবেগীয় চাহিদা পূরণ না হওয়া

মানুষ আদতে অন্য মানুষের কাছে কী চায়? টাকা-পয়সা, সম্মান, কাজের মর্যাদা—এসবই নিজে উপার্জন করা সম্ভব। কিন্তু যখন আমরা অন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে নিজের জীবনটা আপাদমস্তক জুড়ে দিই, তখন এসব বস্তুগত বিষয়ের চাইতে অনেক বেশি জোর দেওয়া থাকে আমাদের আবেগী চাহিদার ওপর। জীবনের চলার পথে সমর্থন যোগানো, মন খারাপের দিনে পাশে থাকা, যেকোনো সুন্দর বিষয় উপভোগ করার মতো যথেষ্ট সময় কাটানো, বিশ্বস্ততা ও নির্ভরতার একটি সম্পর্কে এসবই থাকে আমাদের প্রধান চাহিদার বিষয়বস্তু। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কারো কারো প্রাধান্যের মধ্যে যখন অনেক বেশি ফারাক এসে যায়, আগ্রহ আগের মতো থাকে না—তখন আর সেটি সম্ভব হয় না। আর চাহিদা ও যোগানের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা না হলে কি আর সম্পর্ক টিকে থাকে? অতঃপর বিচ্ছেদই সমাধান হয়।

তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে, বেটার হেল্প, ফোর্বস

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago