নতুন ঘরানার রোমান্টিক সম্পর্ক ‘সিচুয়েশনশিপ’

সিচুয়েশনশিপ
ছবি: সংগৃহীত

মানব সম্পর্কের রহস্য মহাকাশের নক্ষত্ররাজির চেয়ে কম দুর্বোধ্য নয়। এ কথা শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্র থেকে এবং সর্বোপরি মানুষ জেনেছে তার নিজের জীবন থেকেই। যতই দিন কাটছে, আমরা জ্ঞানে-বুদ্ধিতে-প্রযুক্তিতে বেড়ে চলেছি, আমাদের জীবনের জটিল রাস্তাগুলোতেও অলিগলি বাড়ছে। ঠিক তেমনি বাড়ছে সম্পর্কের শ্রেণিকরণ।

আগে যে সম্পর্কটা সহজ বাংলায় 'প্রণয়' বা 'প্রেম' বলে চালিয়ে দেওয়া যেত, এখন তা অতটা সহজ আর নেই। রোমান্টিক সম্পর্কের নাম দেওয়া কিংবা বেনামেই রেখে দেওয়াটা এখন অনেকটা পরিস্থিতি বা সিচুয়েশনভিত্তিক। আর তাই পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে নতুন এক টার্মের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হচ্ছে এই হাল জমানায়, যার নাম সিচুয়েশনশিপ।

সিচুয়েশনশিপ আসলে কী

এ ধরনের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দায়হীনতা। প্রচলিত জীবনযাত্রায় আমরা যেকোনো রোমান্টিক সম্পর্কে পরিণতি কিংবা পরিণতির দিকে যাওয়ার চেষ্টা, একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু এই সম্পর্কে পরিণতির দিকে যাওয়ার চেষ্টা বা কারো প্রতি কারো দায়বদ্ধ থাকার কিছু নেই।

অক্সফোর্ড ডিকশনারির ভাষ্যমতে, সিচুয়েশনশিপ বলতে এমন রোমান্টিক সম্পর্ক বোঝায়, যার আদতে কোনো প্রতিষ্ঠিত রূপ নেই। কেউ কেউ মজা করে একে 'বন্ধুর চেয়ে কিছু বেশি, প্রেমিক-প্রেমিকার চেয়ে কিছু কম' বলেও সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এ ধরনের সম্পর্ককে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 'অসংজ্ঞায়িত'ই রেখে দেওয়া হয়।

কীভাবে বুঝবেন সিচুয়েশনশিপে আছেন

ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নেই, আজকের মুহূর্ত উপভোগই বড় কথা মনে হচ্ছে এবং কেউ কাউকে আগামীতে একসঙ্গে থাকবেন কি না সেই কথা দিচ্ছেন না। 'যা হবে, দেখা যাবে' ভেবে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। আপনাদের সম্পর্কের জাহাজ পরিস্থিতির হাল ধরে বয়ে চলেছে, এর দিক-নির্দেশনা নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাভাবনা কারো মনে নেই। ঠিক প্রেমও করছেন না, আবার বিষয়টা বন্ধুত্বের গণ্ডিতেও আটকে নেই। দুজনের কারোরই নেই সম্পর্কটাকে প্রতিষ্ঠিত করার বা কোনো নাম দেওয়ার তাগাদা। তাহলে ধরে নিতে হবে, এটি সিচুয়েশনশিপ।

ভালো-মন্দ

সমালোচনা যতই থাকুক, এ কথা তো সত্য যে পণ্য হোক বা সম্পর্কের ধরন– সবকিছুরই উদ্ভাবন কোনো না কোনো প্রয়োজনীয়তা থেকে। জীবনযাত্রার গতি-প্রকৃতির সঙ্গে চাহিদার রূপ পাল্টায়। আমাদের আগের কিংবা তারও আগের প্রজন্মের চাহিদা থেকে প্রায় ক্ষেত্রেই আমাদের চাহিদা ভিন্ন। ঠিক তেমনি, কোনো কোনো মানুষ একসময় হয়তো একটা দায়হীন, ঝামেলাবিহীন, ভারমুক্ত রোমান্টিক সম্পর্কের চাহিদা অনুভব করেছে এবং এরপরই সিচুয়েশনশিপের মতো ধারণার জন্ম হয়েছে।

তবে হাল আমলে বহুলচর্চিত বা লেবেলিং করা হয়েছে বলে যে শুধু আজকের যুগেই এ ধরনের সম্পর্ক হালে পানি পেয়েছে, এমনটাও না হতে পারে। হয়তো জনপ্রিয়তা বা আলোচনা এখন বেশি হচ্ছে।

অন্য যেকোনো বিষয়ের মতোই সিচুয়েশনশিপের বেশ কিছু সমান্তরাল সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে এবং ব্যক্তিভেদে, ব্যক্তির চাহিদা ও জীবনে সামলে নেওয়ার ভঙ্গিমা অনুযায়ী তা ভিন্ন হয়।

লেখক ও মনস্তাত্ত্বিক সুজান আলবার্স মনে করেন, যদি এক পক্ষের প্রত্যাশা অপর পক্ষ থেকে আলাদা হয় এবং তা এক বিন্দুতে না মেলে তবে এসব ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

এখানে তিনি সম্পর্কে 'পাওয়ার ডাইনামিকে'র কথা উল্লেখ করেন। যদি একজন নিয়ন্ত্রক আর অপরজন নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, তাহলে সিচুয়েশনশিপ তিক্ততার দিকে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাই সিচুয়েনশিপের মতো অসংজ্ঞায়িত ব্যবস্থাই হোক বা প্রেম-বিয়ের মতো অপেক্ষাকৃত প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক, সম্পর্কের সীমারেখা সম্পর্কে উভয় পক্ষের সমান সচেতন হওয়াটা খুব জরুরি। একে অন্যের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারবে কি আদৌ পারবে না, সে নিয়ে স্পষ্ট যোগাযোগ থাকা উচিত। নয়তো যেকোনো সময় দোষারোপের বিষয় চলে আসে এবং বহু মধুর থেকে মধুরতম সম্পর্কেও জন্ম নেয় এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষাক্ত আবহ।

এবার আসি সিচুয়েশনশিপের ভালো দিক বিষয়ে। অনভ্যস্ত অনেকেই হয়তো কপাল কুঁচকে তাকাবেন। কিন্তু এই ধরনের সম্পর্কের কিছু ভালো দিক যে আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

এতে মানুষ নিজের পছন্দ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। কারো কোনো ক্ষতি না করে ব্যক্তিস্বাধীনতা চর্চার ভালো উদাহরণ হতে পারে এটি। ব্যক্তি সবসময় সার্বিকভাবে কোনো রোমান্টিক সম্পর্কে নিজের পুরোটা দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকে না, কিন্তু তারপরও তার মধ্যে থাকা একাকিত্ব বা চাহিদার বশেই তার সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। সে সঙ্গীর প্রয়োজন যে একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যেই থাকতে হবে, এমনটা নয়। সেক্ষেত্রে সমমনা, একই গতি-প্রকৃতির কারো সঙ্গে যদি মিলে যায়, তাহলে সিচুয়েনশিপের মতো অস্থায়ী-অনিশ্চিত পদ্ধতিও বেশ কার্যকর মনে হতে পারে। তবে এখানে জড়িয়ে না পড়তে চাওয়া থেকে শুরু করে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটাও অদ্ভুত কিছু নয়। সেক্ষেত্রে 'সিচুয়েশন' সেই 'শিপ'কে কদ্দূর নিয়ে যায়, নাকি মাঝ-দরিয়ায় রেখে ডুব দেয়, তা দেখার বিষয়।

 

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

BNP to sue election officials, CECs of last three polls

A three-member BNP team, led by its Standing Committee Member Salahuddin Ahmed, will file the complaint

38m ago