আপনাকে কেউ ব্যবহার করছে, বুঝবেন যে ৫ লক্ষণে

আপনাকে কেউ ব্যবহার করছে কি না বুঝবেন যে লক্ষণে
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা গড়ে তোলার পেছনের গল্পটা যেমন সুন্দর, তেমনি দরকার সম্পর্ক চলাকালীন দ্বিপাক্ষিক তালমিল বজায় রাখা। কিন্তু কখনো কখনো সম্পর্কের ব্যাকরণের পাল্লাটা যেকোনো একদিকে ঝুলে পড়ে, অন্য পক্ষ তাতে শুধু লোকসানের মুখই দেখেন– তা সে ব্যক্তিগত জীবনে হোক বা পেশাদার পরিসরে।

বন্ধুত্ব হোক বা প্রেম, অফিসের বস কিংবা সহকর্মী, অথবা পরিবারেরই কোনো সদস্য– তাদের মধ্যে কেউ আপনাকে নিজের সুবিধামতো ব্যবহার করছে কি না, তা বুঝতে সম্পর্কের গতিবিধির দিকে একটু নজর দিলেই হবে।

নিজের প্রয়োজনমতো যোগাযোগ

এ ধরনের মানুষজন শুধু তখনই যোগাযোগ করবে, যখন তার কোনো কিছুর প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন ছাড়া তাদের জন্য আপনার সঙ্গে যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ তেমন জরুরি কিছু নয়। এ কথা সত্যি যে মানুষ আদতে প্রয়োজনের ভিত্তিতেই চলাফেরা করে। কিন্তু যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখাটাও খুব গুরুত্ববহ। কেউ যদি বারবার শুধু তার সুবিধামতোই যোগাযোগের নকশা এঁকে নেয় এবং আপনার প্রয়োজনের সময় আর তাকে পাওয়া যায় না, তাহলে বুঝতে হবে– ভারসাম্য এরই মধ্যে বিগড়েছে।

'না' বলা যাবে না

কিছু সম্পর্ক আছে, যেখানে 'না' বলা যায় না। কথাটি প্রথমে শুনতে খুবই মিষ্টি মনে হলেও আদতে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে মানব সম্পর্কের এক তিক্ত রসায়ন। যেকোনো প্রস্তাবে 'না' বলার অধিকার সবারই রয়েছে। কিন্তু এই অধিকারটিও খর্বিত হয় কারো কারো কাছে। তারা যখন কিছু চায়, তখন তারা ধরেই নেয় অপর পক্ষ থেকে ইতিবাচক উত্তর আসবে।

একটা সময় তারা নিজেদেরকে এতটাই অভ্যস্ত করে ফেলে এ বিষয়ে যে, যৌক্তিক কোনো পরিস্থিতিতেও 'না' শুনতে পারাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ ভুগতে হয় অপর পক্ষকে। খোঁচা দিয়ে কথা বলা, অভিমানের আবরণে অভিযোগ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মানসিক শোষণের মুখোমুখি হতে হয়। সম্পর্ক কতটা খাঁটি, তা বুঝতে একবার প্রিয় বন্ধু বা প্রেমিক-প্রেমিকাকে 'না' বলে দেখুন, তাদের প্রতিক্রিয়া কী। কারণ শুধু সব কথা মেনে নিচ্ছেন বলে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার সত্যি কোনো মানে নেই।

কথা দিয়ে কথা না রাখা

এই ব্যক্তিরা যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, তাদের মধ্যে কথা দিয়ে কথা না রাখার স্বভাব লক্ষণীয়। তারা জানে যে এই পরিকল্পনাগুলো কখনো পূরণ হবে না, তবু শুধু সম্পর্ককে জিইয়ে রাখতে তারা এ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা আশ্বাস দেয়। মজার বিষয় হচ্ছে, কথা দিয়ে কথা না রাখা হলেও তাদের মধ্যে কোনো রকম আফসোস দেখা যায় না। তাদের ভাবটা এমন থাকে যে, 'এটাই তো স্বাভাবিক!'

কিন্তু একই বিষয় যদি অপর পক্ষ থেকে আসে, তাহলে তাদের ভাবসাবই আলাদা থাকে। তখন পৃথিবী উল্টে যাওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া আসে। আর সম্পর্কের এই বৈষম্য থেকেই বোঝা যায়, কে কাকে ব্যবহার করছে এবং কতটা বাজেভাবে এই শোষণের চক্র এগিয়ে চলেছে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বালাই নেই

এ ধরনের একতরফা সম্পর্কে বেশিরভাগ সময় এক পক্ষ ঝামেলায় পড়ে, অন্য পক্ষ এগিয়ে আসে সাহায্য করতে; এক পক্ষের সমস্যার সমাধানে অপর পক্ষকে সদা সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু এতকিছুর পরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মতো মৌলিক অনুভূতিও আশা করা যায় না তাদের কাছ থেকে। একটা সময় মনে হয়, এসব তো আপনার দায়িত্বই, তাই শুধু পালন করে যাচ্ছেন।

কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে, সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কখনো যেকোনো এক পক্ষের দায়িত্ব নয় এবং অন্য কাউকে সার্বক্ষণিক সেবাদানও কারো কাজ হতে পারে না, যদি না সেটি তার পেশাদারি কাগজে ছাপার হরফে লেখা থাকে। তাই অফিসের বস যদি বাড়তি সময় খাটিয়ে বাড়তি কোনো সুবিধা না দেন, এখনই সময় তাকে 'না' বলে দেওয়ার।

আমিত্বের আস্ফালন

সম্পর্ককে যারা একতরফা প্রয়োজন মেটানোর উৎস হিসেবেই দেখে যান, তাদের কাছে অপর পক্ষের চাওয়া-পাওয়া, প্রয়োজন-প্রত্যাশা কিছুই গুরুত্ব পায় না। তাদের গল্পে 'আমরা' শব্দটা কখনো সত্যিকার অর্থে স্থান পায় না, থাকে শুধু 'আমি, আমি এবং আমি'। তাই নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যদেরকে ক্রমশ ব্যবহার করে যাওয়ার বেশ ভালোরকম প্রবণতা দেখা যায়।

সম্পর্কের যেকোনো বিন্দুতে যদি আপনি বুঝতে পারেন যে অপর পক্ষ নিয়মিত আপনাকে 'ডাম্পিং বিন' বা 'টিস্যু পেপারের' মতো ব্যবহার করে যাচ্ছে এবং তার বদলে আপনি যা পাচ্ছেন তা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়, তাহলে সে সম্পর্কে সীমারেখা টেনে দেওয়াটাও এখন সময়ের দাবি। লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হোন এবং প্রয়োজনমতো এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসুন।

 

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago