টেক্সট মেসেজে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করবেন না যে কারণে

টেক্সট মেসেজে সমস্যা সমাধান
ছবি: সংগৃহীত

আজকাল যোগাযোগের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম টেক্সট মেসেজ। সারাদিনের কাজের ফাঁকে বন্ধু বা প্রিয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার বেশ ভালো একটি মাধ্যম এটি। আর দূরবর্তী সম্পর্কগুলো বেশ অনেকটাই টেক্সট মেসেজ নির্ভর।

তবে যোগাযোগের এই মাধ্যম সম্পর্কে মাঝেমধ্যেই অনেক ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করে ফেলে। বিশেষত কোনো ঝামেলা মেটানোর জন্য টেক্সট মেসেজের সাহায্য নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই টেক্সট মেসেজ যোগাযোগের জন্য জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলেও, এরকম পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি কার্যকর মাধ্যম বলা যায় না।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের নানা প্রচলিত প্রথা আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট্ট একটা হ্যান্ডশেক কিংবা আলিঙ্গন, অথবা একসঙ্গে খাবার খাওয়া যেকোনো সম্পর্কের ঝামেলা সামলাতে যথেষ্ট কার্যকর, যেটা ফোনে কিংবা টেক্সটে বলে বোঝানো অনেক বেশি কঠিন। বিভিন্ন জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, সামনাসামনি আলোচনা হলে তা আমাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং এটা আমাদের মস্তিষ্কের সোশ্যাল কগনিটিভ জায়গাতে কাজ করে। বেশিরভাগ জার্নাল অনুযায়ী, সামনাসামনি আলোচনা একটা সম্পর্কে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

'যোগাযোগের জন্য শুধু মেসেজ আদান-প্রদান কি যথেষ্ট?' জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী লামিসা বলেন, 'আমার মতে, শুধু মেসেজের মাধ্যমে কোনো সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না। যেকোনো সম্পর্কে মাঝেমাঝে দেখা করে সামনাসামনি কথা বললে সম্পর্ক ভালো থাকে। কোনো বিষয়ে আলোচনার জন্য অবশ্যই সামনাসামনি কথা বলে নেওয়া ভালো। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত ফোনে কথা বলা উচিত, টেক্সটে নয়।'

'কোনো বিষয়ে মতবিরোধ বা দ্বন্দ্ব সমাধানে কি টেক্সট মেসেজ একটি ভালো যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে কাজ করে?' এর উত্তরে লামিসা বলেন, 'এই কাজটি ভুলেও করা উচিত নয়। কোনো ঝগড়া সমাধানে টেক্সটে কথা বললে বরং হিতে বিপরীত হয়ে ঝামেলা বাড়তে পারে।'

কেন টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব সমাধান করতে যাবেন না তাই জানব আজ।

ভুল বোঝাবুঝি

মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো ভুল বোঝাবুঝি। ধরুন কোনো বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। তিনি হয়তো তার মেসেজের মাধ্যমে আপনাকে একটি কথা বুঝিয়েছে। কিন্তু আপনি তার কথার অর্থ না বুঝে মন খারাপ করে ফেললেন। যেহেতু মেসেজে একে অপরকে দেখার বা গলার স্বর শোনার সুযোগ নেই তাই অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যায় না অপর মানুষটি কী বোঝাতে চাচ্ছেন। আবার অনেক সময় ভুলভাল ইমোজি ব্যবহারেও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে। সেখান থেকে সৃষ্টি হতে পারে বিরোধ। এভাবে টেক্সট মেসেজে কোন ঝগড়ার সমাধান করতে গেলে সেখান থেকে আরেক ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে।

অন্যের পরিস্থিতি না বুঝতে পারা

যার সঙ্গে আপনি মেসেজের মাধ্যমে কথা বলছেন তিনি হয়তো কোনো অসুবিধায় আছেন। তার হয়তো দিনটি ভালো যায়নি অথবা তিনি ব্যস্ত। সেই সময়ে আপনি কোনো বিষয় আলোচনা করতে চাইলে তার দিক থেকে স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর নাও পেতে পারেন। আপনি হয়তো লম্বা কোনো টেক্সট পাঠাচ্ছেন। অপরদিকে আরেকজন ব্যস্ততার কারণে এক শব্দে উত্তর দিচ্ছেন। এখান থেকে আপনার হতে পারে মন খারাপ এবং তা থেকে সৃষ্টি হতে পারে নতুন আরেক বিরোধ।

উদ্বেগ সৃষ্টি

মেসেজে কোনো বিরোধ নিয়ে কথা বলতে গেলে আপনার মধ্যে অনেক ধরনের চিন্তা আসতে পারে, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। যেহেতু অপরজন আপনার সামনে নেই তাই মেসেজে আপনি বুঝতে পারছেন না তিনি আসলে কী ভাবছেন। আপনি নিজে নিজেই ধারণা করছেন অনেক কিছু। এটি আপনার মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করবে।

মনোযোগের অভাব

একটা সম্পর্কে মনোযোগ খুবই দরকারি একটা বিষয়। আপনার সঙ্গী মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনছেন কি না, সেটা একটা সম্পর্ক সুন্দর হওয়ার জন্য খুবই দরকারি। ফোনে টেক্সট পাঠালে সেই মনোযোগ বা তার গুরুত্ব কোনোটাই ঠিক থাকে না, যে কারণে সম্পর্কে কোনো অশান্তি বা ঝামেলা চললে সেটা টেক্সটে আলোচনা করলে অনেক দরকারি আলোচনা হারিয়ে যেতে পারে, সমস্যা উল্টো বেড়েও যেতে পারে।

তবে তাই বলে কি কোনো দ্বন্দ্বের সমাধান বের করবেন না? অবশ্যই করবেন। তবে তা মেসেজে নয়। সম্ভব হলে সামনাসামনি দেখা করে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবেন। যদি নিতান্তই তা সম্ভব না হয় তবে ভিডিও কল বা ফোন কলের মাধ্যমে সমাধান করবেন। তবে খুব বেশিদিনের জন্য ঝামেলা ফেলে রাখা উচিত নয়। যদি টেক্সটে এ ধরনের আলোচনা শুরু হয়, তবে সেই মুহূর্তেই আলোচনা বন্ধ করে অপরজনকে জিজ্ঞেস করুন তিনি ফোন কলে এ বিষয়ে কথা বলতে চান কি না। সামনাসামনি বা ফোন কলে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে ফেলা উচিত।

 

Comments

The Daily Star  | English

Try Hasina, Awami League

Families of the victims of enforced disappearances, extrajudicial killings, and those martyred and maimed in the July mass uprising yesterday demanded that ousted Sheikh Hasina and her party be brought to book.

1h ago