সুখ্যাতি-সুস্বাদে শেরপুরের ছানার পায়েস

শেরপুরের ছানার পায়েস
ছবি: সংগৃহীত

মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য ছানার পায়েস বরাবরই বিশেষ আবেদন রাখে। তবে শেরপুরের ছানার পায়েস যেন একটু বেশিই লোভনীয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এর সুস্বাদে মাতছে মানুষ।  

ব্রিটিশ আমলে শেরপুরের ঘোষপট্টিতে প্রথম ছানার পায়েস তৈরি হয়। সে সময়কার জমিদাররা ঘোষপট্টিতে বানানো ছানার পায়েস বিশেষ পদ্ধতিতে নিয়ে যেতেন কলকাতায়। এ ছাড়া আত্মীয়-স্বজন কিংবা অন্য জমিদারের কাছে উপঢৌকন হিসেবেও এ পায়েস পাঠাতেন তারা। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, অতিথি আপ্যায়নসহ সবখানেই ছানার পায়েসের সুখ্যাতি রয়েছে।

শেরপুর ছানার পায়েস
ছবি: সংগৃহীত

এক সময় হাতেগোনা দু-একটি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হলেও এখন জেলার অন্তত ৫০টি দোকানে ছানার পায়েস তৈরি হয়। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ কেজি ছানার পায়েস বিক্রি হয়।

অনুরাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী বাপ্পি দে জানালেন এসব তথ্য।

তিনি জানান, দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ দিয়ে এই প্রসিদ্ধ ছানার পায়েস তৈরি হয়। প্রথমে উচ্চ মাত্রায় দুধ ঘন করে জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটি চিনিমিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে হালকা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু ছানার পায়েস। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচের প্রয়োজন হয় বলে জানিয়েছেন কারিগররা।

কারিগর কালিপদ ঘোষ দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মিষ্টি তৈরির কাজ করেন।

তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় ছানার পায়েস। তাই স্বাদটা একটু ভিন্ন, চাহিদাও ব্যাপক।'

দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী অরুণ ঘোষ জানান, শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েসের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। জেলার বাইরে থেকে কোনো ভ্রমণপিপাসু শেরপুরে আসলে, ফেরার সময় ছানার পায়েস সঙ্গে করে নিয়ে যান।

বিক্রেতাদের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রতিকেজি ছানার পায়েস ৩৮০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জন্মদিন, ঈদ, বিয়েসহ বিভিন্ন পার্টিতে ছানার পায়েসের প্রচুর অর্ডার আসে। জেলার ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতেও পাওয়া যায় এই মিষ্টি।

শেরপুর শহরের চারু সুইটস, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নন্দ গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মা ভবতারা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয়, হোটেল নূর রহমান ও বল্লভ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে ছানার পায়েস পাওয়া যায়। জেলার পাঁচ উপজেলাতেও বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে বিক্রি হয় এই পায়েস।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে ছানার পায়েসের বেশ সুনাম রয়েছে। দেশ-বিদেশে এই মিষ্টির বেশ কদর রয়েছে। ছানার পায়েস তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে অনেকেই জড়িত।

সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মিষ্টান্ন ছানার পায়েস। এতে খুশি মালিক ও কারিগররা। তারা জানান, প্রবাসীরা ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ আমেরিকা ও ইউরোপের বিাভন্ন দেশে শেরপুরের ছানার পায়েস নিয়ে যান।

এর আগে গেল বছর জেলা ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে শেরপুর জেলার স্থানীয় সুগন্ধী চাল তুলশি মালাসহ দুটি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Govt Logo

All 64 DCs protest deputy secy promotion proposal

The Bangladesh Administrative Service Association (Basa) has also issued a statement protesting the proposal

26m ago