রসমালাই চা: উদ্ভাবন নাকি স্বাদতন্ত্রের ওপর অত্যাচার?

রসমালাই চা
ছবি: সংগৃহীত

আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন আনারস টপিং দিয়ে তৈরি হচ্ছে পিজ্জা, কাঁচামরিচ দিয়ে তৈরি হচ্ছে রসগোল্লা। ঠিক সেই সময়ে মিরপুরের তিন বন্ধু আবিষ্কার করলেন রসমালাই চা, এটি এমন একটি খাবার যার কথা কখনো কেউ ভাবেনি! তিন বন্ধুর কল্যাণে আমরা এখন রসমালাই চা বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশেরও সুযোগ পাচ্ছি।

এখন প্রশ্ন হলো—চায়ের সঙ্গে রসমালাইয়ের মেলবন্ধন কি সফল উদ্ভাবন নাকি স্বাদতন্ত্রের জন্য রীতিমতো অত্যাচার? চলুন জেনে নিই।

অর্ডার দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সামনে হাজির হবে ভাইরাল রসমালাই চা। প্রথম চুমুক দেওয়ার সময় আপনি ভীষণ কৌতূহলী থাকবেন। আপনার চোখে থাকবে ঔৎসুক্য এবং স্বাদটি কেমন তা বোঝার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকবে আপনার মস্তিষ্ক।

রসমালাইয়ের মোলায়েম মিষ্টি স্বাদ গরম চায়ের সঙ্গে এমনভাবে মিশে যাবে যে মুখে দিলে বেশ ভালো লাগে, কিন্তু আবার স্বাদটি অচেনা মনে হয়। কেউ কেউ এটিকে নতুন ধরনের মিষ্টান্ন বলতে পারেন, আবার কেউ চাইলে চায়ের ঐতিহ্যবাহী স্বাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাও বলতে পারেন।

যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য রসমালাই চা হতে পারে গিল্টি প্লেজার। তাদের জন্য এটা এমন একটি খাবার যার স্বাদ জীবনে অন্তত একবার নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু যারা সত্যিকারের চাপ্রেমী, তাদের কাছে বিষয়টা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। মনে হবে, এটা চায়ের স্বাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এটা এমন একটা স্বাদ যা কখনোই হওয়ার কথা ছিল না।

পরীক্ষামূলকভাবেই রসমালাইয়ের সঙ্গে চায়ের এই ফিউশন তৈরি করেছিলেন তিন বন্ধু। যারা পূর্বাচলের বিভিন্ন মিষ্টি বিশেষ করে রসমালাইয়ের দারুণ অনুরাগী ছিলেন। তারা একসঙ্গে একটি চায়ের দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সেখানেই নতুন আইটেম হিসেবে রসমালাই চা সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেন।

সেই তিন বন্ধুর একজন মাহি বললেন, 'হুট করেই রসমালাই চায়ের পরিকল্পনা মাথায় আসে। আর তখনই আমরা এটিকে মেনুতে যুক্ত করে নিই।'

চায়ের স্টলে এই চা যুক্ত করার পর বেশ মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন তারা।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মাহি বলেন, 'এখনো আমাদের সর্বাধিক বিক্রিত ও জনপ্রিয় খাবার হলো মালাই চায়ের সঙ্গে গরম গরম পোড়া রুটি। কিন্তু রসমালাই চায়ের আলাদা একটি ভক্তশ্রেণি আছে। কিছু নিয়মিত গ্রাহক আছেন যারা এটা খুব পছন্দ করেন। অন্যদিকে যারা প্রথাগত চাপ্রেমী তাদের কাছে এর স্বাদ একটু বেশিই অস্বাভাবিক।'

তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও রসমালাই চা মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। এর অনন্য সংমিশ্রণ এটিকে বিশেষ খাবারে পরিণত করেছে। এটির কারণেই যারা খাবারের স্বাদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন, তারা মুহূর্ত কার্টে যাচ্ছেন এবং রসমালাই চা খুঁজে নিচ্ছেন। কিন্তু প্রথাগত চাপ্রেমীরা এর স্বাদ নেবেন কি নেবেন না, সেই দ্বিধায় ভুগছেন।

ফারহানা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'এটি অবশ্যই একটি অনন্য আইটেম। ফিউশন ফুড সবসময়ই দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সবসময় ফিউশন ভালো হয়। আমার কাছে এটা ঠিকঠাক খাবার, কিন্তু আমার জিহ্বার জন্য অনেক বেশি মিষ্টি। আমি হয়তো আরেকবার চেখে দেখতে পারি, এটুকুই।'

আর কাউকে রসমালাই চা খেতে পরামর্শ দেবেন কি না জানতে চাইলে ফারহানা বলেন, 'আমি বন্ধু ও পরিবারের লোকদের একবার স্বাদ নিতে বলতে পারি। স্রেফ অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য। কিন্তু যারা মিরপুর থেকে অনেক দূরে থাকেন, তাদের জন্য বলব, কেবল হাইপ দেখে রসমালাই চা খেতে না এলেও চলবে।'

পরিশেষে বলতে চাই, এই ধরনের ফিউশন খাবারগুলোর স্বাদ সবসময়ই আপেক্ষিক হয়। তবে রসমালাই চায়ের স্বাদ দীর্ঘসময় আপনার মুখে লেগে থাকবে। তা আপনি পছন্দ করুন আর না-ই করুন।

এখানে মজার ব্যাপারটি হলো, মুহূর্তের উদ্যোক্তাদের একজনের বাড়ি কুমিল্লায়, যে জেলা রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত। আর কুমিল্লা থেকেই রসমালাই নিয়ে আসেন তিনি।

এরই মধ্যে মাহি, যার বাড়ি কুষ্টিয়া তিনি ঠিক করলেন তার এলাকার বিখ্যাত পোড়া রুটিও এই চায়ের সঙ্গে যুক্ত করবেন। স্থানীয় ঐতিহ্যকে একত্রিত করে তিন বন্ধু হৃদয় থেকে উৎসারিত ভালোবাসা এই কার্টটির পেছনে বিনিয়োগ করেছেন।

সুতরাং এখানে একটি প্রশ্ন আসে, রসমালাই চা কি খাবারের জগতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করতে পারবে? নাকি অনেক খাবারের মতো এটিও হবে স্বল্পমেয়াদি, যা সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাবে?

এই প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে দিতে সময়ের কিংবা চাপ্রেমীদের হাতে।

রসমালাই চায়ের স্বাদ নিতে যেতে হবে মিরপুর ২ নম্বরের লাভ রোডে, দোকানটির নাম মুহূর্ত। যেখানে এক কাপ রসমালাই চায়ের দাম মাত্র ৫০ টাকা। সঙ্গে যদি পোড়া রুটি নেন, তাহলে দাম পড়বে ৮০ টাকা।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Students suffer as NCTB fails to deliver books

Only 37% of 40.15cr textbooks distributed till first half of Jan

13h ago