ফলের রস নাকি পুরো ফল খাওয়া ভালো
ফল অ্যান্টি-অক্সিডেন্টপূর্ণ, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ। ফল খেলে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলসের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়। সেক্ষেত্রে অনেকেই ভাবেন পুরো ফল নাকি ফলের রস খেলে ভালো হবে।
এই সম্পর্কে জানিয়েছেন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি।
পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, পুরো বা সম্পূর্ণ ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী। কিছু কিছু ফলে খুব কম ক্যালরি থাকে। বিভিন্ন উপায়ে ফল থেকে জুস বা রস তৈরি করা হয়। রস তৈরির সময় যেহেতু ছেঁকে নেওয়া হয়, তাই রস শরীরের জন্য ভালো।
ফাইবার বা আঁশ পুরো ফলের তুলনায় রসে অনেক কম পরিমাণে থাকে। অন্যদিকে ফলের রসে ক্যালরির পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। যেমন একটি মাল্টা বা আপেল কেটে পাঁচ থেকে ছয় টুকরো করে সম্পূর্ণ ফলটি খাওয়া সম্ভব। কিন্তু একসঙ্গে তিন থেকে চারটি মাল্টা বা আপেল খাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এক গ্লাস মাল্টা বা আপেলের রস তৈরির জন্য তিন থেকে চারটি মাল্টার প্রয়োজন হয়।
পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, সম্পূর্ণ ফল এবং ফলের রস উভয়েই যথেষ্ট উপকারী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। ফলে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বার বার যাদের ক্ষুধা লাগার প্রবণতা থাকে তারা অনেক সময় হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। যেহেতু ফলে আঁশ থাকে, তাই ক্ষুধা লাগলে আঁশযুক্ত ফল খেলে পেট যথেষ্ট পরিমাণে ভরা থাকে এবং ফুড ক্রেভিং বা খাবার খাওয়ার প্রতি যে তীব্র ইচ্ছা সেটি কমে যায়।
ফলের রস খাওয়ারও উপকারিতা অনেক। ফল থেকে রস তৈরির সময় উপকরণ হিসেবে পানি ব্যবহার করা হয়। আবার রস তৈরিতে পানি না দিলেও সেটি তরল হয়। প্রচণ্ড গরমের সময়, অতিরিক্ত ঘাম কিংবা পানি কম খেলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার ঝুঁকি থাকে। সেক্ষেত্রে পানির চাহিদা পূরণ, ডিহাইড্রেশনে ফলের রস খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলের রস শরীরে এনার্জি লেভেল বাড়াতেও ভূমিকা রাখে। ফলের রস মানেই হাই পটাসিয়াম এবং ইলেক্ট্রোলাইট সম্পন্ন, তাই খাদ্য তালিকায় ফলের রস শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
কীভাবে খাবেন
সব ধরনের ফলই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু ফল রস করে খেলে বেশি খাওয়া যায়। জাম্বুরা, আনারসসহ বিভিন্ন দেশি ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে মসলা, কাসুন্দি, চিনি ও লবণের ব্যবহার প্রচুর হচ্ছে। ফল খোসা ফেলে সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া বেশি ভালো।
যদি এই ফলগুলো আমরা রস করে খেতে পারি তাহলে পরিমাণও বাড়ে, একইসঙ্গে অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও মসলার ব্যবহারও কম হয়। মূলত ফল কিংবা ফলের রসে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ লবণ ও মসলা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা।
সতর্কতা
ফল, ফলের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মানা উচিত। যেমন—
১. কোনোকিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। একইভাবে ফল বা ফলের রস কোনটিই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
২. বদহজম, পেটের বিভিন্ন সমস্যা যাদের আছে, টক জাতীয় বিভিন্ন ফলের রস খাওয়া থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য ডাবের পানি উপকারী।
৩. কিডনির কোনো সমস্যা বা কিডনিজনিত রোগ যাদের আছে, তারা সব ধরনের ফল খেতে পারবেন না বিষয়টা এমন নয়। তবে চিকিৎসকের নিষেধ নেই এবং কম পটাশিয়ামযুক্ত ফল খাওয়া তাদের জন্য ভালো। অল্প পরিমাণে ফলের রস খেতে পারেন যদি নিষেধ না থাকে চিকিৎসকের।
৪. ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে সব ধরনের ফল, ফলের রস খাওয়া নিষেধ নয়। তবে অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় ফল কম খাওয়া বা বিরত থাকাই ভালো।
৫. ওজন বেশি যাদের তাদেরও ফল খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে। মিশ্র ফল রাখা যেতে পারে খাদ্যতালিকায়।
সারাদিনে যারা একটি ফল বা ফলের রস খাদ্যতালিকায় রাখেন না, তারা অবশ্যই দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময় অর্থাৎ সকাল ১১টা নাগাদ শিঙাড়া কিংবা ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে দেশীয় মৌসুমি ফল বা ফলের রস খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। এতে শরীর ভালো থাকবে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
Comments