ঘি খাওয়া ভালো না খারাপ

ঘি
ছবি: সংগৃহীত

দুধের স্বর থেকে তৈরি করা ঘি বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় একটি খাদ্য। গরম ভাতের সঙ্গে ঘি লোভনীয় খাবার। শুধু ঘি দিয়েই ভাত খাওয়া শেষ করা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন রান্না, বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ঘি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন খাবারের স্বাদ-গন্ধ বাড়াতে কাজ করে ঘি। কিন্তু এটি শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এতে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও।

আজকে জানব ঘি'র উপকারিতা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পা।

মাহফুজা নাসরিন শম্পা বলেন, ঘি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাদ্য। এতে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি বাচ্চাদের জন্য ভীষণ উপকারী। ঘি'তে কার্বোহাইড্রেট নেই, আছে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাট যেমন: বুটিরিক অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, লিনোলেনিক অ্যাসিড, অ্যারাকিডনিক অ্যাসিড। রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলসও। এই পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয়।

প্রতি ১০০ গ্রাম ঘি'তে আছে—

ক্যালোরি: ৮৭০

ফ্যাট: সাড়ে ৯ গ্রাম

স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৬১ দশমিক ৯ গ্রাম

মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ২৮ দশমিক ৭ গ্রাম

পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ৩ দশমিক ৬৯ গ্রাম

প্রোটিন: দশমিক ৩ গ্রাম

পানি: দশমিক ২৪ গ্রাম

কোলেস্টেরল: প্রায় ২৫৬ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম: ৪ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম: ৩ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম: ২ মিলিগ্রাম

ঘি'র উপকারিতা

  • ঘি'তে প্রয়োজনীয় ফ্যাট দ্রবণীয় ভিটামিন ডি, কে, ই এবং এ রয়েছে। এই উপাদানগুলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ দেহের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। ঘি শরীরকে অন্যান্য খাবার থেকে চর্বিযুক্ত দ্রবণীয় খনিজ এবং ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে এবং আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • নিয়মিত ঘি খেলে ভিটামিন-মিনারেলসের ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণও বাড়ে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিক্যাল বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এতে ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে।
  • ঘি খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে, কারণ এতে আছে বুটিরিক অ্যাসিড। এটি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ফলে বদহজম, গ্যাস-অম্বল হওয়ার আশঙ্কা কমে।
  • ঘি খেলে দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। এজন্য শীতকালে ঘি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের একটি উৎস ঘি। এই উপাদান হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ ছাড়া ঘি খেলে যে হরমোন নিঃসরণ হয়, তা জয়েন্টের জন্য প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি আর্থ্রাইটিস ও হাড়ের যেকোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে। যাদের জয়েন্টের সমস্যা আছে, তারা খাদ্য তালিকায় ঘি রাখতে পারেন।
  • ঘিতে থাকা ওমেগা-৬ ও ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড নার্ভের কার্যক্ষমতা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এই পুষ্টি উপাদান ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমারের মতো মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত ঘি খেলে শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ত্বকের ভেতরে কোলাজেনের উৎপাদনও বেড়ে যায়। ফলের ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়ে। ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে আদ্রতা বজায় থাকে।
  • খালি পেটে ঘি খেলে শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বাড়তে থাকে, যা রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
  • ঘি'তে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের জন্য ভালো। গ্লুকোমা রোগীদের জন্য উপকারী।
  • ঘি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ভাইরাস, কাশি প্রভৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ঘি খেলে কি ওজন বাড়ে

ঘি নিয়ে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে এটি খেলে ওজন বাড়ে। অনেক মানুষ আছেন যারা ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ঘি খেতে চায় না। কিন্তু ঘি ওজন বাড়ায় না, বরং কমাতে সাহায্য করে। ঘি কেবল তখনই শরীরের ক্ষতি করে যখন তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়।

ঘিতে আছে লিনোলেনিক এবং অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড, যা শরীরের জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। এ ছাড়া ঘি খেলে ক্ষুধা ভাবও কম হয়, ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ইচ্ছা কমে। এ ছাড়াও সকালে উষ্ণ গরম পানির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খেলে এটি শরীরের বিপাক হার বাড়িয়ে ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।

কিন্তু যখন নিয়মিত প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘি খাওয়া হয়, উপকারের বদলে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

সতর্কতা

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে দুই চা-চামচের বেশি ঘি খাওয়া উচিত নয়। আবার ঘি খেলে সেদিন অন্যকোনো তেলজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনির গুরুতর সমস্যা আছে, তারা ঘি খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

15h ago