নাক-কান ফোঁড়ানোর পর সংক্রমণ কেন হয়, সমাধান কী

নাক-কান ফোঁড়ানোর পর সংক্রমণ
ছবি: সংগৃহীত

কান ও নাকে গয়না পরার প্রচলন বহু পুরোনো। তবে কান ও নাক ফোঁড়ানো অনেকের কাছেই ভীতিকর, সেইসঙ্গে রয়েছে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা। কান ও নাক ফোঁড়ানো এবং সংক্রমণ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ।

 কান ও নাক ফোঁড়ানোর স্থান ও সংক্রমণের কারণ

অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, কান ও নাক ফোঁড়ানো বা ছিদ্র করার পর সংক্রমণ হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। কানের যে গঠন সেখানে কতগুলো সংবেদশীল টিস্যু আছে। তার মধ্যে কার্টিলেজ একটি টিস্যু যেটিকে নরম হাড় বলা হয়।

কানের বাইরের অংশের নিচের দিকে নরম অংশটিকে ইয়ারলব বা কানের লতি বলা হয়। এই অংশে কার্টিলেজ নেই, রক্তসঞ্চালন ভালো থাকে, নরম হয় এবং কিছু ফ্যাট থাকে। কানের লতি হচ্ছে পিয়েরসিং বা কান ফোঁড়ানোর জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা।

কানের লতির ওপরে কানের ছিদ্রের সামনে ছোট শক্ত অংশটি কানের ট্রেগাস, এখানেও কার্টিলেজ থাকে।

যদি কানের লতিতে ছিদ্র বা কান ফোঁড়ানো হয় তাহলে সংক্রমণের আশঙ্কা কম এবং তাড়াতাড়ি সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যদি কানের কার্টিলেজে ছিদ্র করা হয় তাহলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং সেখানে পেরিকন্ড্রাইটিস নামক এক ধরনের রোগ হয়। পেরিকন্ড্রাইটিস হলে তীব্র ব্যথা হয়, ফুলে যায়, পুঁজ হয়, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ এবং অবহেলার কারণে একটা সময় কানের কার্টিলেজের গঠন নষ্ট হয়ে গেলে কান একদম কোঁকড়ানো হয়ে যায়, কান বিকৃত হয়ে যেতে পারে।

একইসঙ্গে নাকের বিভিন্ন অংশে ছিদ্র করা হয়। নাকের ছিদ্রের ঠিক উপরের অংশটিকে নাকের এলা বলা হয়, এর ত্বকের নিচে কার্টিলেজ থাকে। নাকের বাইরের দিকের বাম ও ডান পাশে নরম অংশে কার্টিলেজে ছিদ্র করা হয়।

এছাড়া নাকের দুই ছিদ্রের মাঝের অংশটিকে সেপ্টাম বলে, সেপ্টাম এবং নাকের সামনের যে জায়গা সেখানের নরম অংশে নোলক পরার জন্য ছিদ্র করা হয়। এই স্থানে ছিদ্র করা নিরাপদ কিন্তু একটু ভেতরে কার্টিলেজে ছিদ্র করলে সংক্রমণ হতে পারে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, কান ও নাকের কোন স্থানে ছিদ্র করা হচ্ছে তার ওপর সংক্রমণ অনেকাংশে নির্ভর করে। কান ফোঁড়ানোর সাধারণ ও প্রচলিত স্থান হচ্ছে কানের লতি, এর বাইরে অন্য জায়গাগুলোতে ছিদ্র করা ঝুঁকির।

এছাড়া কী অবস্থায় কোন পদ্ধতিতে এবং কিসের মাধ্যমে কান ও নাক ফোঁড়ানো হচ্ছে সেটিও সংক্রমণের কারণ হতে পারে।  পেশাদার এবং লাইসেন্স আছে এমন ব্যক্তিদের মাধ্যমে পিয়েরসিং করা হলে ভালো। এক ধরনের সুঁই আছে যেটিকে হলো নিডিল বলে সেটির মাধ্যমে ছিদ্র করা ভালো। কান ও নাক ফোঁড়ানোর আগে ত্বকের ওই স্থানটি জীবাণুনাশকের মাধ্যমে ভালোভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এমনকি যিনি কান ফোঁড়াবেন তার নিজের হাত জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি স্টেরাইল গ্লাভস পরে নিতে হবে। যে সুঁই ব্যবহার করবেন সেটিও নতুন এবং জীবাণুমুক্ত হতে হবে। এসব নিয়ম না মেনে কান ও নাক ফোঁড়ানো হলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কান ও নাক ফোঁড়ানোর জন্য অনেক সময় গান শট পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ গান শট পদ্ধতিতে কান ফোঁড়ানোর সময় টিস্যু অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত  হয় এবং ওই গান সবসময় জীবাণুমুক্ত করা যায় না। একবার ব্যবহারের পর আরেকবার ব্যবহারের মাঝখানের সময়টুকুতে এবং বার বার জীবাণুমক্ত করা সম্ভব হয় না। যে কারণে সুঁই এর তুলনায় গান শট ব্যবহারে সংক্রমণ বেশি হয়।

কান ও নাক ছিদ্র করার পর সুতা পরিধান করা নিরাপদ। এটি সাধারণত অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। সোনার গয়নাও কম প্রতিক্রিয়া করে। তবে নিকেল, ইমিটেশন বা অন্যান্য ধাতুর গয়না বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যার ফলে সংক্রমণ হয়। গ্রানুলোমা হয় আর এর ফলে টিস্যু বেড়ে যায়, টিস্যুগুচ্ছ হয়ে চারিদিকে ফুলে যায়।

কোন বয়সে কান, নাক ফোঁড়াতে হবে

একদম ছোট বয়সে শিশুর নাক-কান না ফোঁড়ানোই ভালো। নাক-কান ফোঁড়ানোর পর কিছু পড়িয়ে দিলে খুলে গিয়ে অসাবধানতাবশত সেটি নাকে বা কানের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে, কাপড়ের সঙ্গে আটকে যেতে পারে, সংক্রমণ হলে কানের গঠন বিকৃত হয়ে যেতে পারে। যখন শিশু বিষয়টি তত্ত¡বধান করতে পারবে, যত্ন নিতে পারবে এমন বয়সে কান ও নাক ফোঁড়ানো উচিত। কান ও নাকের গয়না শক্ত করে রাখতে হবে যাতে খুলে না যায়, অযথা টানাটানি করা যাবে না, ময়লা হাত দিয়ে ধরা যাবে না। এই বিষয়গুলো বুঝতে শেখার পর পিয়েরসিং করতে হবে নয়ত বিড়ম্বনা বাড়বে।

কান ও নাকে সংক্রমণ হলে করণীয়

অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, কান ও নাক ফোঁড়ানোর পর সংক্রমণ হলে আক্রান্ত স্থানে ব্যথা হয়, লাল হয়ে যায়, পুঁজ বের হয়, জ্বর হতে পারে। সংক্রমণ এড়াতে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে-

১. কান, নাক ছিদ্র করার পর প্রতিরোধমূলক হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক, প্যারাসিটামল, অ্যান্টিসেপ্টিক মলম ব্যবহার করা যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শে। ছিদ্রের চারিদিকে অ্যান্টিসেপ্টিক মলম লাগাতে হবে, পানি লাগানো যাবে না, ময়লা হলে লবণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

২.কান ও নাকে সংক্রমণ হয়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে, মলম ব্যবহার করতে হবে। পুঁজ জমে গেলে প্রয়োজনে সার্জারির মাধ্যমে বের করে আনবেন চিকিৎসক।

৩.  কান, নাক ফোঁড়ানোর স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে।

৪. অপরিষ্কার হাত দিয়ে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
IMF sets new loan conditions

Bangladesh needs more time for fully flexible exchange rate, says IMF

Bangladesh is currently going through a transition towards a fully flexible exchange rate regime, and the process may take time, said the International Monetary Fund (IMF).

8h ago