কানে পানি ঢুকলে কী করবেন, কী করবেন না
গোসল কিংবা সাঁতার বা অন্য যেকোনোভাবে কানে পানি ঢুকতে পারে। সেক্ষেত্রে কী করবেন, কী করবেন না আর কানে পানি ঢুকলে সেটি কাদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে সেই সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন।
কী করবেন
ডা. হাসানুল হক বলেন, কানে পানি ঢুকলে আতঙ্কিত হয়ে নানাভাবে কান থেকে পানি বের করার চেষ্টা করেন অনেকেই। যাদের কান সুস্থ স্বাভাবিক তাদের কানে যদি পানি ঢুকে যায় তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার বা ভয়ের কিছু নেই। এই পানি এমনিতেই বের হয়ে যাবে অথবা শুকিয়ে যাবে। এটার জন্য কোনো ক্ষতি হবে না।
যেদিকের কানে পানি ঢুকেছে সেটা একটু নিচু করে কানের লতি একটু টেনে মাথা ঝাঁকি দিলে পানি এমনিতেই বের হয়ে যায়। এ ছাড়া হেয়ার ড্রায়ার মেশিনের মাধ্যমে বাইরে থেকে বাতাস দিয়ে কানের পানি শুকানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে খুব সাবধানে এটি করতে হবে। আর কানের পানি যদি বের না হয় এবং কানে সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কানে পানি ঢুকলে ঝুঁকি কাদের ও চিকিৎসা
ডা. হাসানুল হক বলেন, সুস্থ স্বাভাবিক কান বলতে বোঝায় যাদের কানে কোনো ছিদ্র নেই, ওয়াক্স নেই, ফাঙ্গাল ইনফেকশনসহ কোনো ধরনের ইনফেকশন নেই। তাদের কানে পানি ঢুকলে ভয়ের বা চিন্তার তেমন কিছু নেই। কিন্তু সমস্যা হবে যাদের কানে এই ধরনের কোনো সমস্যা আছে। যেমন-
১. যাদের কানে ওয়াক্স আছে অর্থাৎ কানে অনেক বেশি ময়লা জমে আছে তাদের কানে যদি কোনোভাবে পানি ঢুকে যায় তাহলে ওয়াক্স পানি শুষে নেয়। এরপর ভেতরে ওয়াক্স আরও বেশি বিস্তৃত করে কানের দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে কানে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, ওয়াক্স নরম করে কান থেকে বের করে আনলে সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।
২. যাদের কানে আগে থেকেই কোনো ছিদ্র আছে তাদের কানে যদি পানি ঢুকে যায় তাহলে বহিঃকর্ণ থেকে পানি মধ্যকর্ণে চলে যায়। মধ্যকর্ণে যদি পানি দীর্ঘদিন থাকে তাহলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কান পেকে গিয়ে পুঁজ আকারে বের হতে পারে। এরকম কিছু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রপ অথবা অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে। পরে কান সুস্থ স্বাভাবিক হলে তাদের কানের পর্দা লাগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. হাসানুল হক। নয়তো কানে ছিদ্র থাকার জন্য ঘন ঘন পানি ঢুকবে এবং কান সংক্রমিত হতেই থাকবে।
৩. যাদের কানে ফাঙ্গাল ইনফেকশন আছে তাদের কানে পানি ঢুকলে ফাঙ্গাস আরও বেড়ে যাবে এবং কানের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়াও যাদের কানের বাইরের অংশে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন আছে তাদেরও সমস্যা হতে পারে।
যাদের কানে এই ধরনের সমস্যা আছে তাদেরকে অবশ্যই গোসল করার সময়, সাঁতার কাটার সময় সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে তারা সাঁতার বা গোসল করার সময় পরিষ্কার তুলো সরিষার তেল, অলিভ অয়েল অথবা ভ্যাসলিনের সাথে মিশিয়ে কানের ভেতর প্লাগের মত ব্যবহার করতে পারেন। আর্টিফিসিয়াল প্লাগ কিনেও পরিধান করতে পারেন৷
কানে পানি ঢুকলে যা করা যাবে না
ডা. হাসানুল হক বলেন, কানে পানি ঢুকলে বের করার জন্য যা ইচ্ছে তাই করা যাবে না। অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-
১. কানের পানি বের করার জন্য অনেকে কটন বাড ব্যবহার করেন, এটি করা ঠিক নয়। এতে কানের আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
২. কানের পানি বের করার জন্য অনেক বেশি ঝাঁকুনির দরকার নেই। এতে করে পানি তো বের হবেই না ,বরং আরও সমস্যা হতে পারে।
৩. অনেকেই আবার কানের ভেতর অতিরিক্ত পানি ঢুকিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করেন, এটি করা যাবে না। এতে করে কানের পর্দায় ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. কানের ভেতর তেল দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. অনেকে নাক চেপে ধরে কান দিয়ে বাতাস বের করার চেষ্টা করেন, ভাবেন যে কানে চাপ দিলে হয়তো পানি বের হয়ে আসবে। কিন্তু আমাদের বহিঃকর্ণ এবং মধ্যকর্ণের মাঝখানে টাইমপ্যানিক মেমব্রেন নামক পর্দা আছে। এই পর্দার কারণে নাকে যত চাপ দেই না কেন তা পানি বের হতে সাহায্য করবে না বরং বেশি চাপ দিলে কানের মধ্যকর্ণের যে ছোট ছোট তিনটি অস্থি আছে ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আরও বেশি চাপ দিলে যাদের টাইমপ্যানিক মেমব্রেন বেশি পাতলা তাদের সেটা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে।
Comments