যেভাবে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান

এমডি নেই এক ডজন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে!

বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) উচ্চ খেলাপি ঋণের সঙ্গে লড়াই করছে। বলতে গেলে এই খাতটি ধুকছে। তারপরও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।

সুশাসন, ভালো গ্রাহক বেছে নেওয়া ও যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে বলে মত দিয়েছেন ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ৩৫টি এনবিএফআইয়ের গড় খেলাপি ঋণের অনুপাত বেড়ে ৩৩ শতাংশের বেশি ছিল। কিন্তু আটটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের কাছাকাছি বা তার কম ছিল।

আবার এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাঁচটির খেলাপি ঋণের অনুপাত প্রায় পাঁচ শতাংশ বা তার কম।

যেমন স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের অনুপাত শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ও অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের (আগের লঙ্কান অ্যালায়েন্স) খেলাপি ঋণের অনুপাত যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ ও এক দশমিক ২২ শতাংশ।

অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের ঋণ পোর্টফোলিও ছিল ৪৮৮ কোটি টাকা ও ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের ঋণ পোর্টফোলিও ছিল চার হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।

অন্যদিকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের অনুপাত ছিল যথাক্রমে চার দশমিক ৭১ শতাংশ ও পাঁচ দশমিক ১৩ শতাংশ।

আইডিএলসি ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ঋণ পোর্টফোলিওর পরিমাণ যথাক্রমে ১১ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও দুই হাজার ১৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

আইপিডিসি ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের অনুপাত ছয় দশমিক ৪১ শতাংশ এবং বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছয় হাজার ৮৯৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

লংকা বাংলার খেলাপি ঋণের অনুপাত ছিল সাত দশমিক ৪২ শতাংশ এবং ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের খেলাপি ঋণের অনুপাত ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং কোম্পানিটির ঋণ পোর্টফোলিও ১০ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) ভাইস চেয়ারম্যান কান্তি কুমার সাহা বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে ভালো গ্রাহক নির্বাচন, যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত শিল্প জ্ঞান, কমপ্লায়েন্স নীতি এবং সর্বোপরি প্রশিক্ষিত কর্মী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার যৌথ প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় পেশাদার লোকজন নিয়োগ দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'এই ব্যক্তিদের বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এছাড়াও ব্যবসায়ের পাশাপাশি আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।'

এছাড়া তাদের পরিচালকরা দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষিত ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার ভাষ্য, তারা সুশাসনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় এবং উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রিমিয়ার ও টেকসই ফাইন্যান্স কোম্পানি গড়ে তুলতে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে না।

বিশিষ্ট ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের পেশাজীবী আনিস এ খান দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান হিসেবে ছয় বছরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

তিনি সুশাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, 'আমার সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের চর্চা ছিল। কার্যকর সুশাসনের চর্চা ও প্রয়োগ ছিল তাদের সাফল্যের মূল ভিত্তি।'

তিনি বলেন, 'সবার আগে ও সর্বাগ্রে বোর্ড সদস্যদের অবশ্যই স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি করে এমন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন তাদের নামে ঋণ নেওয়া বা সন্দেহজনক ব্যবসায়িক প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থাকা।'

দ্বিতীয়ত তিনি দুবাইয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে তার কাজরে অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে শক্তিশালী ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, কঠোর ঋণ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ও সাইট ভিজিটসহ নিয়মিত ঋণগ্রহীতা পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।

তৃতীয়ত তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, পণ্যমূল্যের ওঠানামা বা অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোর মতো বাহ্যিক কারণে সত্যিকারের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া ঋণগ্রহীতাদের সহায়তা করতে হবে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। মূলত তাদের ব্যবসা পুনরুদ্ধার ও টিকিয়ে রাখতে এই সহায়তা করা দরকার।

তিনি বলেন, 'এই তিনটি উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

চতুর্থত, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও সম্পদ বিক্রিসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

July 5, 2024: Nationwide protests persist despite holiday

Even on a holiday, the quota reform protests show no sign of slowing. Students across Bangladesh take to the streets, block roads, form human chains, and voice their rejection of the reinstated quota system in government jobs.

7h ago