সাক্ষাৎকার

ব্যবসায়ীদের শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে দিতে হবে

আওয়ামী লীগ
মোহাম্মদ আমিরুল হক। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ব্যবসায়ীদের সরকারের কথা মতো চলতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক।

সম্প্রতি তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায়ীরা সমস্যার কথা কখনো বিগত সরকারকে বলতে পারেনি। যারা বলার চেষ্টা করেছিলেন তাদেরকে দমন করা হয়েছিল। ফলে, ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুসরণ করেছিলেন। এটাই ছিল আসল সত্য।'

শিল্প কারখানায় ইউটিলিটি সংযোগ পেতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসায়ীদের শান্তিতে ব্যবসা করতে দেওয়া উচিত।'

তার মতে, 'কোনো রাজনৈতিক দল ব্যবসায়ীদের সংসদ সদস্য বানালে তারা নিজেদের স্বার্থে আইন করবেন। দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে না।'

তার দৃষ্টিতে, বিগত সরকার কিছু ভালো উদ্যোগ নিলেও বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নিলেও সব সময় তা ভালো ছিল না।

তিনি মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প পার্কে সহজে যাওয়া-আসার জন্য কর্ণফুলী টানেল তৈরির উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও পানি পেতে বিনিয়োগকারীদের আরও অন্তত পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হলেও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল অবশ্যই ভালো পরিকল্পনা।'

'তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে সহজে প্রবেশের জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ ভুল পরিকল্পনা ছিল। কারণ এটি বর্তমানে খুব কার্যকর নয়। দেশের জন্য বোঝা।'

তিনি আরও বলেন, 'কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের পর যদি তা কাজে না আসে, তাহলে তাকে উন্নয়ন বলা যায় না। বরং তা অর্থের অপচয়। শুধু সুনাম ও খ্যাতির জন্য উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলে জনগণের উপকার হবে না বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা অবদান রাখবে না।'

তিনি মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত প্রতিটি অংশীদারের সঙ্গে কথা বলে জনগণের কথা শোনা, যাতে তারা প্রয়োজনীয়তাগুলো বুঝতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন।

'আমাদের দেশে সাধারণত গণশুনানি বা সরকারি সিদ্ধান্তে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয় না। ফলে সরকার জনগণের চাহিদা বোঝে না। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।'

গত সরকারের আমলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, 'এটা আসলে কোনো কাজে আসেনি। শুধু কাগজে-কলমেই আছে।'

মোহাম্মদ আমিরুল হক জানান, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রতি বছর পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

'আমি কীভাবে সহজে ব্যবসা করতে পারি? কোথাও একজন ভদ্রলোক পাইনি যিনি বিনিয়োগকারীদের নিরাপদে ব্যবসা করতে সহায়তা করতে পারেন। কোনো সরকারই ট্রেড লাইসেন্স নবায়নসহ ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র সহজ করেনি।'

'এই সরকারও এটা করছে না। ভবিষ্যতে কোনো সরকার তা করবে কিনা জানি না।'

বিগত সরকারের আমলে কাগজে-কলমে উন্নয়ন দেখানো হয়েছিল।

'বাস্তবে অবস্থার খুব উন্নতি হয়নি। সরকারের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব পরিসংখ্যান করেছিলেন। তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখালেও প্রকৃত প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সত্যিকারের প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন হলে শিক্ষিত বেকারত্ব থাকবে না। দেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা আর হয়নি।'

তিন বছর আগে সুদের হার ছিল নয় শতাংশ। এখন তা ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

তার প্রশ্ন, 'এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে কীভাবে মুনাফা অর্জন সম্ভব?'

'যারা ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন এবং ব্যবসা না করে টাকা পাচার করেছেন তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তাহলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। টাকা পাচারের আশঙ্কা কমে আসবে।'

ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে চাইলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ভূ-রাজনীতিতে আর্থিকভাবে অসম পরিস্থিতির কারণে ঋণ খেলাপি হতে পারেন। 'তারা পরিস্থিতির কারণে খেলাপি হয়েছেন, নাকি স্বেচ্ছায় খেলাপি হয়ে টাকা পাচার করেছেন তা খতিয়ে দেখতে হবে,' মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Abu Sayed murder case

Abu Sayed murder: ICT probe agency finds evidence against 30 including cops

ICT investigators told The Daily Star that they submitted their probe report to the prosecution on June 24.

25m ago