চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমে কেন, কতটা কমলে উদ্বেগজনক

ওজন
ছবি: সংগৃহীত

অনেক সময় হঠাৎ করেই কমে যেতে পারে শরীরের ওজন। দুয়েক মাস পর যখন আবিষ্কার করেন ওজন বেশ খানিকটা কমে গেছে, তখন সেটা বেশ দুশ্চিন্তার কারণ বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমছে কেন এবং করণীয় কী, এই সম্পর্কে জেনে নিন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের পুষ্টি, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক ডিজিজ কনসালটেন্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপুর কাছ থেকে।

হঠাৎ ওজন কমার কারণ

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, চেষ্টা ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে যাওয়া সাধারণত কোনো অন্তর্নিহিত শারীরিক বা মানসিক সমস্যার লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। এর সম্ভাব্য কারণগুলো হলো—

শারীরিক কারণ

১. হাইপারথাইরয়েডিজম: থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তা বা হাইপারথাইরয়েডিজমের ফলে শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া বেড়ে যায়, ফলে শরীর দ্রুত ক্যালরি বার্ন করে বা পোড়ায়।

২. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসের কারণে শরীর রক্তের গ্লুকোজ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে ওজন কমে যেতে পারে।

৩. ক্যানসার: বিশেষত ফুসফুস ক্যানসার, পাকস্থলী বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের কারণে ওজন কমে যেতে পারে।

৪. পরজীবী সংক্রমণ: খাদ্যনালী বা অন্ত্রে প্যারাসাইট থাকলে ওজন কমতে পারে।

৫. জীবাণু সংক্রমণ: বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ, যেমন: যক্ষ্মা, এইচআইভি ইনফেকশন। এই ধরনের রোগ হলে শরীরের পুষ্টি ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং ওজন কমে যায়।

৬. পাকস্থলী বা অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ: পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগ আছে যেমন—সিলিয়াক ডিজিজ, ক্রোনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস। এগুলোর কারণে ওজন কমে যেতে পারে।

মানসিক কারণ

ক্রনিক ডিপ্রেশন বা উদ্বেগ ব্যক্তির মধ্যে ক্ষুধামান্দ্য বা খাবারে অরুচি তৈরি করে। এতে শরীরের ওজন কমে যায়। খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত ব্যাধি, যেমন—অ্যানোরেক্সিয়ায় ওজন কমতে পারে। অ্যানোরেক্সিয়া রোগে ভুল খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে, ক্ষুধা কমে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে অনেক বেশি ওজন কমে যেতে পারে।

কতটা ওজন কমলে তা দুশ্চিন্তার কারণ

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, সাধারণত ছয় মাসের মধ্যে শরীরের মোট ওজনের পাঁচ শতাংশ বা তার বেশি কমে গেলে তা উদ্বেগজনক। যেমন: কারো ওজন ৬০ কেজি হলে ছয় মাসে তিন কেজি বা তার বেশি কমে যাওয়া উদ্বেগজনক। বিশেষত যদি এর সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ, যেমন—ক্লান্তি, খাবারে অরুচি বা ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর, শারীরিক দুর্বলতা থাকে।

করণীয়

প্রথমত একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি মানসিক কোনো কারণ থাকলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরও পরামর্শ নিতে হবে।

যদি হঠাৎ ওজন কমে যায় এবং এর কারণ অজানা থাকে, সেক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।

রক্ত পরীক্ষা করে শারীরিক কোনো সমস্যা আছে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। এর জন্য থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, সংক্রমণ পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া ইমেজিং টেস্ট হিসেবে আলট্রাসাউন্ড, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান করানোর প্রয়োজন হতে পারে।

একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার, যেমন: প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাবারে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত করার জন্য স্ন্যাকস বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করা উচিত। মানসিক চাপ, হতাশা, উদ্বেগ থাকলে কাউন্সিলিং করাতে হবে।

স্বাস্থ্যের প্রতি নিয়মিত নজরদারি ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে হবে। সপ্তাহে একবার ওজন মাপা উচিত এবং অন্য কোনো শারীরিক লক্ষণ থাকলে সেগুলো লিখে রাখতে হবে। যদি ওজন কমার পাশাপাশি আরও কোনো উপসর্গ থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council set to hold emergency meeting this evening

The meeting will be held tonight at 8:00pm at the State Guest House, Jamuna

1h ago