নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি নিহত জিম্মির স্ত্রী

নেতানিয়াহুকে 'মৃত্যু্দূত' বা গ্রিম রিপার সাজিয়ে কাট আউট তৈরি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স
নেতানিয়াহুকে 'মৃত্যু্দূত' বা গ্রিম রিপার সাজিয়ে কাট আউট তৈরি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ছয় নিহত জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত জিম্মি আলেক্স লোবানভের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন নিহতের স্ত্রী মিশাল।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

মঙ্গলবার আশকিওনে আলেক্সের বাড়িতে যান নেতানিয়াহু। তার মা ওকসানা ও বাবা গ্রেগরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। দুই দিন আগেই ছেলের শেষকৃত্যে যোগ দেন তারা। তবে নিহতের বিধবা স্ত্রী মিশাল নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকার করেন। এর আগে, তার ফোনও রিসিভ করেননি তিনি।

এ সপ্তাহের শুরুতে চ্যানেল ১২ এর সংবাদে জানানো হয়, বাকি নিহত জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরাও নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেছেন।

যেভাবে আলেক্সের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন

নিহত আলেক্সের স্ত্রী মিশাল। ছবি: সংগৃহীত
নিহত আলেক্সের স্ত্রী মিশাল। ছবি: সংগৃহীত

৭ অক্টোবর আলেক্স যখন হামাসের কাছে জিম্মি হন, তখন মিশাল পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এরপর তিনি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই দম্পতির আরও একটি সন্তান আছে যার বয়স দুই।

তেল আবিবে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সমাবেশ যোগ দিয়ে মিশাল সরকারকে শিগগির যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করার আহ্বান জানান।

রোববার নেতানিয়াহু আলেক্সের বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাদের কাছে সন্তানের মৃত্যুর জন্য ক্ষমা চান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই বিরল ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

ফোনে নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি আপনাদের জানাতে চাই যে আমি খুবই দুঃখিত। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি, কারণ আমি সাশাকে (আলেক্সের ডাক নাম) জীবিত অবস্থায় বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছি।'

নিহত আলেক্স ও তার স্ত্রী মিশাল। ছবি: নিহতের পরিবারের সৌজন্যে
নিহত আলেক্স ও তার স্ত্রী মিশাল। ছবি: নিহতের পরিবারের সৌজন্যে

চ্যানেল ১২ রোববার জানিয়েছে অপর দুই জিম্মির পরিবার নেতানিয়াহুর ফোনকল গ্রহণ করেনি।

৭ অক্টোবর আলেক্স লোবানভকে (৩২) কিব্বুৎজ রে'ইম এর কাছে নোভা সঙ্গীত উৎসব থেকে অপহরণ করে হামাস। ইসরায়েলি ভূখণ্ডে এই নজিরবিহীন হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। হামাসের হাতে আটক হন ২৫১ জন। দ্য রেইভ নামের একটি বারে হেড বারটেন্ডার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন আলেক্স। ইসরায়েলের দাবি, এই বারেই ৩৫০ জন নিহত হন।

রোববার আলেক্স সহ আরও পাঁচ ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইডিএফ।

চাপের মুখে নেতানিয়াহু

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তেল আবিবে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তেল আবিবে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

শনিবার রাফার ভূগর্ভস্থ সুরঙ্গ থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করে আইডিএফ। এর পর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ইসরায়েলের জনগণ। টানা তিন দিন ধরে চলছে নেতানিয়াহু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ। মাঝে সোমবার শ্রম ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে দেশটির অর্থনীতির চাকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।

নিহত জিম্মিদের পরিবারের সদস্য, এখনো যারা বেঁচে আছেন তাদের পরিবার এবং ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের বক্তব্য হল, নেতানিয়াহু তার নিজের স্বার্থে জিম্মি মুক্তি নিয়ে কাজ করছেন না।

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তিতে সাক্ষর করলে উল্লেখিত ছয়জনের এমন করুণ পরিণতি হোত না, এমনটাই ভাবছেন তারা।

সব মিলিয়ে, বেশ চাপের মুখে আছেন নেতানিয়াহু।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলডারের মত, 'নেতানিয়াহুর কাছে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবন বাঁচানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, 'গাজায় ছয় জিম্মির হত্যা একটা বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছে, যা হল, জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে পারব।'

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, 'একটা চুক্তি করার সময় এসেছে। মিশর ও কাতারের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র আগামী দিনে সেই লক্ষ্যে কাজ করবে।'

আলেক্স লোবানভসহ (নিচের সারির মাঝে) ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করে আইডিএফ। ছবি: রয়টার্স
আলেক্স লোবানভসহ (নিচের সারির মাঝে) ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করে আইডিএফ। ছবি: রয়টার্স

এর আগে, নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করেন, জিম্মিদের মুক্ত করার চুক্তি করতে যথেষ্ঠ উদ্যোগ নেননি তিনি।

মঙ্গলবার প্রাক্তন ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ও সরকারি উপদেষ্টা অ্যালন পিনকাস আল জাজিরাকে বলেন, নেতানিয়াহুর 'যুদ্ধবিরতি বা বন্দি বিনিময় করার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই।'

'এতে বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। শুধুমাত্র তার (নেতানিয়াহুর) অনিচ্ছার কারণে এখনো চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি', যোগ করেন পিনকাস।

নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময় ১০৫ জিম্মি মুক্তি পান। এর আগে আরও চার জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। আট জিম্মিকে সেনারা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। আরও ৩৭ জিম্মির মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে হামাস সদস্য ভেবে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েল।

৭ অক্টোবর থেকে শুরু ইসরায়েলি প্রতিশোধমূলক হামলায় প্রায় ৪০ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৯৪ হাজার ২২৪। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

21m ago