রক্তে সুগার কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ, কী করবেন

রক্তে সুগার কমে গেলে করণীয়
ছবি: সংগৃহীত

হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে সুগার কমে যাওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা আমাদের অপরিচিত নয়। ডায়াবেটিসের রোগীরা কম-বেশি সবাই এই বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত।

সুগার কেন কমে যায় এবং এ ক্ষেত্রে কী করবেন জেনে নিন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের পুষ্টি, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক ডিজিজ কনসালটেন্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপুর কাছ থেকে।

রক্তে সুগার কমে যায় কেন

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, রক্তে সুগার কমে যাওয়াকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। সারাদিনে বিভিন্ন কারণে মানুষের রক্তে সুগার একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি কমে যায়, তাহলে এটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। রক্তে সুগার ৪ পয়েন্টের চেয়ে কমে গেলে এটা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিভিন্ন কারণে রক্তে সুগার কমতে পারে। যেমন-

১. রক্তে সুগার কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন বা ওষুধ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডোজ হওয়া

২. খাবার কম খাওয়া

৩. ৬৫ এর বেশি বয়স হলে

৪. কিডনির সমস্যা থাকলে

৫. হার্ট বা লিভার অকেজো হলে

৬.  অগ্নাশয়ে টিউমার (ইনসুলিনোমা) থাকলে

৭. এডিসন্স ডিজিজ এবং আরও অন্যান্য রোগের কারণে রক্তে সুগার কমে যেতে পারে।

কাদের এই সমস্যা বেশি হয়

রক্তে সুগার কমে যাওয়ার ঘটনা বেশি দেখা যায় সাধারণত যাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস আছে তাদের মধ্যে। এ ছাড়া টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা ইনসুলিন নেন কিংবা এমন ওষুধ খান যা ইনসুলিন সিক্রেশন বাড়ায়, তাদেরও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগী ইনসুলিন নেন তাদের মধ্যে টাইপ-১ এর বেলায় ৮০% এবং টাইপ-২ এর বেলায় ৫০% রোগীই মাসে কমপক্ষে একবার হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে আক্রান্ত হন।

রক্তে সুগার কমে যাওয়ার লক্ষণ

রক্তে সুগার কমে গেলে প্রথমে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো-

১. শরীরে ক্লান্তিবোধ হওয়া

২. দুর্বল লাগা

৩. মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো

৪. ক্ষুধা লাগা

৫. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

৬. বিরক্ত লাগা

৭. চোখে কম দেখা

৮. শরীর ঘামানো

পরবর্তীতে যদি সুগার আরও কমে যায় তাহলে শরীরে কাঁপুনি হতে পারে, এমনকি জ্ঞান হারাতে পারেন রোগী।

আবার যদি কারো ঘুমের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় তাহলে দুঃস্বপ্ন দেখতে পারেন, অনেক বেশি ঘেমে পোশাক ভিজে যেতে পারে এবং ঘুম ভেঙে গেলে প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ হতে পারে।

রক্তে সুগার কমে গেলে তাৎক্ষণিক করণীয়

১. রক্তে সুগার কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম সুগার অথবা কার্বোহাইড্রেট খেতে হবে।

২. বাসায় কোনো কোলা ড্রিংকস, চকলেট, খেজুর থাকলে খাওয়া যেতে পারে।

৩. চিনি, মধু দিয়ে শরবত বানিয়েও খেতে পারেন।

৪. ১৫ মিনিট পর আবার রক্তে সুগার মেপে দেখতে হবে। যদি এবারও কম থাকে তাহলে আবার ১৫ থেকে ২০ গ্রাম সুগার খেতে হবে এবং ১৫ মিনিট পর আবার সুগার মাপতে হবে।

৫. যদি সুগার স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে তাহলে কিছুক্ষণ পর মাঝারি মাপের নাশতা করে নিতে হবে।

রক্তে সুগার কমে যাওয়ার ঝুঁকি

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, রক্তে সুগার কমে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে যদি সুগার ৩ পয়েন্ট থেকে কমে যায় তাহলে। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না হলে রোগীর জ্ঞান হারানোর আশঙ্কা থাকে। এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। এইসব ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ। হাসপাতালে ডায়াবেটিস অথবা মেডিসিন বা ইমার্জেন্সি বিভাগে এর চিকিৎসা নিতে হবে।

রক্তে সুগার কমে যাওয়া প্রতিরোধ

১. রক্তে সুগার কমে যাওয়া প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো বাসায় সুগার মাপার যন্ত্র রাখা এবং নিয়মিত সুগার মাপা।

২. বিশেষ করে যেসব রোগী ইনসুলিন নেন বা ইনসুলিন সিক্রেটরি মেডিসিন খান, তাদের অবশ্যই নিয়মিত সুগার মাপতে হবে।

৩. তাছাড়া ইনসুলিন এবং ওষুধের পরিমাণের সঙ্গে খাবারের পরিমাণের সামঞ্জস্য যাতে থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

৪. আবার যারা ব্যায়াম করেন তাদেরও ব্যায়ামের আগে সুগার মেপে নিতে হবে।

ডায়াবেটিস চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এবং রোগী হিসেবে ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন বিষয়ক ধারণা বা জ্ঞানলাভ করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানান ডা. জয়নুল আবেদীন।

 

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

54m ago