প্রি-ডায়াবেটিস: লক্ষণ, কী খাবেন ও প্রতিরোধে করণীয়

প্রি-ডায়াবেটিস
ছবি: সংগৃহীত

ডায়াবেটিসকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এ রোগটি হওয়ার পর নানা শারীরিক সমস্যা বাড়তে থাকে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আর ডায়াবেটিস এড়াতে জানতে হবে প্রি-ডায়াবেটিস সম্পর্কে।

এই বিষয়ে জেনে নিন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের পুষ্টি, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক ডিজিজ কনসালটেন্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপুর কাছ থেকে।

প্রি-ডায়াবেটিস কী

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রি-ডায়াবেটিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কারো রক্তে সুগার স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি, কিন্তু ডায়াবেটিসের মাত্রার চেয়ে কম থাকে।প্রি-ডায়াবেটিসে ব্লাড গ্লুকোজ ফাস্টিং অবস্থায় ৬.১ থেকে ৬.৯ mmol/L, খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর ৭.৮ থেকে ১১.০ mmol/L থাকে অথবা রক্তের HbA1C মাত্রা ৫.৭% থেকে ৬.৪% এর মধ্যে হয়।

 ঝুঁকি

যাদের শরীরের ওজন বেশি হয়, যাদের বয়স ৪৫ এর বেশি, বংশে বিশেষ করে যাদের বাবা-মা, ভাই-বোনদের মধ্যে কারো ডায়াবেটিস আছে, যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, যাদের কোমরের পরিধি বেশি এবং যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

 

লক্ষণ

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, সাধারণত প্রি-ডায়াবেটিসের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে কারো কারো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের লক্ষণ থাকে। যেমন- শরীরের কিছু জায়গায় (ঘাড়, বগল, কুচকি) ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়া, বার বার প্রস্রাব হওয়া, দুর্বলতা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, হাত-পা জ্বালা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

প্রি-ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ কিংবা পুষ্টিবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী খাবার ও জীবনাচার মেনে চলা উচিত।

প্রি-ডায়াবেটিস গুরুত্ব দিতে হবে কেন

প্রি-ডায়াবেটিসকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। কারণ প্রি-ডায়াবেটিস থাকা মানে হলো শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকার আশঙ্কা আছে। তাছাড়া নারীদের পিরিয়ডের সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস), বন্ধ্যাত্ব, হরমোনাল সমস্যা ছাড়াও নানাবিধ সমস্যা এর সঙ্গে থাকতে পারে। তাই প্রি-ডায়াবেটিস হলে খাবার ও জীবনাচার পরিবর্তন করা উচিত। নয়তো উপরে উল্লেখ করা সমস্যাগুলোর পাশাপাশি পুরোপুরি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেন ডা. জয়নুল আবেদীন।

কী খাবেন

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রি-ডায়াবেটিস হলে কী ধরনের খাবার খেতে হবে তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির ওজন এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থার ওপর। এই ধরনের রোগীদের ঘন চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার এবং উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার যেমন- চিনি, মিষ্টি ফল, সাদা চালের ভাত ও আটার তৈরি রুটি পরিহার করতে হবে।

বাদামি চাল ও বাদামি আটার রুটি খাওয়া যেতে পারে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন- টক ফলের মধ্যে কাঁচা আম, সবুজ আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি এবং বেশি করে সবুজ শাকসবজি খাবেন। ভালো ফ্যাট ও প্রোটিনের উৎস হিসেবে বাদাম, সামুদ্রিক মাছ, জলপাই, অ্যাভোকাডো, চিয়া সিড, অলিভ অয়েল, ডিম খেতে পারেন এবং এই খাবারগুলো দিয়ে শর্করা খাবারকে প্রতিস্থাপন করতে পারেন।

প্রতিরোধ

প্রি-ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় এবং কার্যকরী উপায় হলো ডায়েট ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। যেমন-

১. শারীরিক ওজন বেশি হলে তা কমিয়ে ফেলতে হবে।

২. নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।

৩. ঘন চিনিযুক্ত খাবার যেমন- মিষ্টি চকলেট, কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, অ্যালকোহল, ধূমপান বাদ দিতে হবে।

৪. মাঝে মাঝে খালি পেটে ও খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে রক্তে সুগার মাপতে হবে।

৫. এ ছাড়া রক্তে HbA1C পরীক্ষা করে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।

আমাদের দেশে অনেক মানুষ জানেন না যে তিনি প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সঠিক সময় প্রি-ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে পারলে এবং প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

 

Comments

The Daily Star  | English

India, Pakistan agree ceasefire: Trump

US President Donald Trump on Saturday said that India and Pakistan have agreed to a "full and immediate ceasefire," amid both countries launching strikes and counter-strikes against each other's military installations

14m ago