বইমেলা বিশেষ-৩

'জনপ্রিয়তার সঙ্গে পণ্ডিতদের একটা আড়ি আছে'

চলছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রকাশ হয়েছে গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের- প্লাবনভূমির মহাকাব্য: পলাশী থেকে পাকিস্তান, প্রকাশ করেছে প্রথমা। নতুন বই, গবেষণা ও বইমেলা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

দেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার ৩৯৯ জন। সংখ্যা হিসেবে তাদের বই প্রকাশ খুব চোখে পড়ে না। তারা কী সৃজনশীল না গবেষণায় নেই?

মহিউদ্দিন আহমদ: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেকেই শিক্ষকতার চাকরি করেন। তাছাড়া মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ হয় না। তারা ছাত্রদের জন্যও লেখেন না। কেননা বর্তমানে গবেষণা বা লেখালেখির ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক দায়ও নেই। দায় না থাকলে লেখা বা প্রকাশের বিষয় আসবে কেন! 

তরুণরা বই পড়ে না এই অভিযোগ বড়দের। বড়োদের কি বই পড়ে?

মহিউদ্দিন আহমদ: তরুণরা বই পড়েন না, এটা একটা 'সুইপিং রিমার্ক'। আমার পাঠকদের বেশিরভাগ তরুণ। প্রবীণরা তো আরও কম পড়েন বলে মনে হয়। দেশটা তরুণরা চালান না। আর যারা দেশ চালান, তারা বইপত্র পড়লে তার আচর পড়ত তাদের কথা ও আচরণে। সে-রকম তো দেখি না।

অভিযোগ আছে আপনি হাল্কা/ জনপ্রিয় বিষয় গবেষণা করেন। যা গভীর না। কীভাবে দেখেন? 

মহিউদ্দিন আহমদ : জনপ্রিয় মানে পাঠকপ্রিয় হওয়া। সেটা তো দোষের নয়। লেখকের স্বপ্ন থাকে যত বেশি সম্ভব পাঠকের কাছে পৌঁছানো। জনপ্রিয়তার সঙ্গে পণ্ডিতদের একটা আড়ি আছে। পণ্ডিতরা সাধারণত জনপ্রিয় হন না। কারণ, তাদের লেখা সবাই বোঝেন না। তার মানে এই নয় যে তারা ভালো লেখেন না।

আমি জ্ঞান দিই না। পাঠক নির্বোধ নন। তিনি জ্ঞান দেওয়া পছন্দ করেন না। তিনি চান তথ্য। আমার লেখায় তথ্য থাকে, গল্প থাকে। সেজন্য আমি অনেক পাঠিকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি।

২০২৪ নির্বাচনের আগে ১৯৭৩ সালের নির্বাচন নিয়ে বই প্রকাশ করলেন তেহাত্তরের নির্বাচন। সময়টা কী আমাদের জন্য খুব প্রাসঙ্গিক? 

মহিউদ্দিন আহমদ : তরুণরা তেহাত্তরের নির্বাচন দেখেননি, ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালেরগুলো দেখেছেন। এ বইটি পড়লে তাঁরা বুঝতে পারবেন, সময়ের অনেক ব্যাবধান সত্ত্বেও নির্বাচনের গুনগত মান বদলায়নি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সবসময় এরকমই হয়। এটা হলো অনেকটা ফিরে দেখা, ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যাওয়া পাঁচ দশক আগে।

আমাদের বইমেলাকে অনেকে প্রাণের মেলা বলেন। আপনি কি বলেন? 

মহিউদ্দিন আহমদ : আমরা অনেকেই বেশি বেশি 'শুদ্ধতাবাদী'। সবকিছু পারফেক্ট চাই। তরুণরা যেভাবে মেলায় ভীড় করেন, তা দেখে মনে হয়, তারা এটা এনজয় করেন। অবশ্য কিছু কিছু বিষয় ও ঘটনা দৃষ্টিকটু ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাও বাঙালি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। মেলা মাঠ তো সমাজের বাইরে নয়। তবে ব্যাবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ ও পেশাদার হলে মেলা অনেক বেশি সুন্দর হবে।

Comments