নিউমার্কেটের হারিয়ে যাওয়া বইয়ের দোকানের গল্প

নিউমার্কেটের বইয়ের দোকান
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

নীলক্ষেত, মিরপুর কিংবা বাংলাবাজার- বইপ্রেমীদের কাছে এই জায়গাগুলো বেশ পরিচিত। তবে নগরের ব্যস্ততম স্থান নিউমার্কেটের ভেতরে যে বইয়ের বিশাল সাম্রাজ্য, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। যদিও বর্তমানে নিউমার্কেটের বইয়ের গলি অনিশ্চিত সময় পার করছে। ঐতিহ্যবাহী বইয়ের দোকানগুলো ধীরে ধীরে জৌলুশ হারাতে শুরু করেছে।

 

ভুলে যাওয়া বইয়ের গলি

এক সময় নিউমার্কেটের এই অংশটি পরিচিত ছিল 'বইয়ের গলি' হিসেবে, যা একেবারে যথার্থ নাম। এখানে ছিল প্রায় ৫০টিরও বেশি বইয়ের দোকান। নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে বামে দেখা যেত সারি সারি বইয়ের দোকান। নিউমার্কেটের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১ নম্বর গেইট থেকে শুরু করে ২ নম্বর গেইট পর্যন্ত অসংখ্য বইয়ের দোকান ছিল।

উপন্যাস, সেলফ-হেল্প, ক্লাসিক সাহিত্য, আইন বা ধর্মীয় বই- সব ধরনের বই পাওয়া মেলে এখানে। একাডেমিক এবং রেফারেন্স বইয়েরও অভাব নেই। বইগুলো সবই অরিজিনাল কপি, হয়তো প্রকাশক থেকে সরাসরি কেনা হয় অথবা দেশের বাইরে থেকে আনা হয়। তবে ধীরে ধীরে দোকানের মতো বইয়ের সংগ্রহও কমে আসছে।

নিউমার্কেটের বইয়ের দোকান
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

৪০ থেকে ৫০টির বেশি দোকানের জায়গায় এখন টিকে আছে কেবল ১০-১২টি দোকান। তার মাঝে বেশিরভাগ দোকানই এখন ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী স্টেশনারি পণ্য বেশি আনছে। ১৯৬৩ সাল থেকে পাঠকদের মনে জায়গা করে নেওয়া জিনাত বুক সাপ্লাই তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয় ২০২৩ সালে। এখন হাতে গোনা যে কয়টি দোকান টিকে আছে সেগুলোও শুধু ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী চলছে।

কেন এই হারিয়ে যাওয়া

এক সময়ের এত জনপ্রিয় একটি জায়গা কীভাবে জনপ্রিয়তা হারাল? এর উত্তর হলো, গত কয়েক দশক ধরে অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছে এই স্থান।

সত্তরের দশকে যাত্রা শুরু করা এখানকার পুরোনো দোকান, আলিগড় লাইব্রেরির প্রধান মোহাম্মদ জুম্মা বলেন, 'প্রথমত পড়ার অভ্যাসে বিরাট পরিবর্তন এসেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যখন থেকে পাস করা সহজ হয়ে গেছে, তখন থেকে পড়ার মান কমে গেছে। আজকাল আপনি যা খুশি লিখেই পাস করতে পারবেন। বর্তমানে মানুষের মধ্যে থেকে জ্ঞান অর্জনের বা পড়ার ইচ্ছাই চলে গেছে। এই ব্যবসাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ এটি। এ ছাড়াও এর সঙ্গে ছিল কোভিড মহামারি।'

'বুক সিন্ডিকেট' নামের এখানকার আরেকটি পুরোনো দোকানের মালিক মো. রিয়াজুল হাকিম। তিনি তার বাবার কাছ থেকে এই ব্যবসা সামলানোর দায়িত্ব পান, যিনি ১৯৫৪ সালে নিউমার্কেট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এখানে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, 'আমরা মূলত অরিজিনাল বই বিক্রি করি এবং স্বাভাবিকভাবেই সেগুলোর দাম কিছুটা বেশি। অন্যদিকে বাজারে এই বইগুলো প্রিন্ট এবং ফটোকপি করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই পাইরেটেড বইগুলোর দাম অর্ধেকেরও কম।'

বইয়ের গলির অন্ধকার ভবিষ্যৎ

দিনের মধ্যভাগে নীলক্ষেত বই বাজার যখন বেচাকেনায় মুখরিত, তখন নিউমার্কেটের বইয়ের গলি একেবারেই জনশূন্য। বইয়ের গলির এক কোণায় দাঁড়িয়ে আপনি অনুভব করতে পারবেন এক সময় এই জায়গাটি কত জনপ্রিয় ছিল, অথচ এখন তা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বইয়ের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে স্টেশনারি পণ্য, ক্রোকারিজ আর আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র।

২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এখানকার ছয়টি বইয়ের দোকান তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে এই জায়গাটি শুধু একটি স্মৃতি হিসেবেই বইপ্রেমীদের মনে থেকে যাবে। বইয়ের গলি এর আগের অবস্থায় ফিরে যাক আর না যাক, বই ভালোবাসলে এই জায়গাটি ঘুরে আসতে ভুলবেন না।

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

5h ago