গাজা ঘিরে ফেলার পর সুড়ঙ্গপথে হামাসের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

হামাসের প্রকাশ করা এই ছবিতে বেইত হানৌনে তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথের অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
হামাসের প্রকাশ করা এই ছবিতে বেইত হানৌনে তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথের অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের স্থল বাহিনী আজ বুধবার হামাসের যোদ্ধাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের সুনির্দিষ্ট অবস্থান চিহ্নিত করে একে অকার্যকর করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে।

আজ বুধবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

এই উদ্যোগকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের পরবর্তী পর্যায় হিসেবে অভিহিত করেছে।

৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধার ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালালে এক হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৪০ জন। এর পর থেকে টানা ৩২ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। শুরুতে বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের সঙ্গে ২৮ অক্টোবর থেকে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনী। স্থল ও বিমানবাহিনীর সমন্বিত হামলায় গাজাকে দুই ভাগে ভাগ করার দাবি জানিয়েছে ইসরায়েল।

এসব হামলায় ইতোমধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েল দাবি করেছে, এ অঞ্চলে হামাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান, গাজা শহরকে (গাজা সিটি) তারা চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। ইসরায়েল আরও দাবি করছে, তাদের সেনাবাহিনী এই জনবসতিপূর্ণ শহরের একেবারে কেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে।

অপর দিকে, হামাস জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা 'হানাদার বাহিনীর' ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে।

হামাসের প্রকাশ করা এই ছবিতে বেইত হানৌনে তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
হামাসের প্রকাশ করা এই ছবিতে বেইত হানৌনে তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট জানান, 'ইসরায়েলের লক্ষ্য একটাই, সেটা হল গাজায় অবস্থানরত হামাসের যোদ্ধা, তাদের অবকাঠামো, কমান্ডার, বাংকার ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করা।'

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি জানান, ইসরায়েলের কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পস এর সদস্যরা বিস্ফোরক উপকরণ ব্যবহার করে হামাসের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করছে। তিনি জানান, এই সুরঙ্গ নেটওয়ার্কটি গাজার মাটির নিচে কয়েকশো কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।

হামাস ও ইসলামি জিহাদের সূত্ররা জানান, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত স্থল হামলায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ থেকে হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ট্যাংকগুলোকে অকার্যকর করেছে বলে সূত্ররা দাবি করেন।

রয়টার্স যুদ্ধক্ষেত্রের এসব দাবি যাচাই করতে পারেনি।

ইসরায়েলিরা আশংকা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের সামরিক অভিযানে জিম্মিদের জীবনের ওপর আরও হুমকি নেমে আসতে পারে, কারণ ধারণা করা হয়, তাদেরকেও এই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে আটকে রাখা হয়েছে।

ইসরায়েল ইতোমধ্যে জানিয়েছে, জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা হামাসের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখবে। হামাস জানিয়েছে, গাজার ওপর যতক্ষণ হামলা আসবে, ততক্ষণ তারাও যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গাজি হামাদ আল জাজিরা টিভিতে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, 'আমি ইসরায়েলের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলতে পারি, এখন পর্যন্ত স্থল হামলায় বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করা ছাড়া আর কোনো অর্জনের কথা তারা জানাতে পারবে না।'

গাজার এক বিনোদন পার্কের এই গর্তটিকে হামাসের সুড়ঙ্গের অন্যতম প্রবেশপথ হিসেবে দাবি করেছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স
গাজার এক বিনোদন পার্কের এই গর্তটিকে হামাসের সুড়ঙ্গের অন্যতম প্রবেশপথ হিসেবে দাবি করেছে ইসরায়েল। ছবি: রয়টার্স

'গাজাকে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয় এবং এটা সারা জীবনই আমেরিকান ও জায়নবাদীদের গলার কাঁটা হিসেবে টিকে থাকবে', যোগ করেন তিনি।

এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন ইসরায়েলের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধে বিরতি নিলে হামাস লাভবান হবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল মঙ্গলবার জানান, তিনি নেতানিয়াহুকে যুদ্ধে সাময়িক বিরতি নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

হামাস পরাজিত হলে ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে এখনো দেশটি পরিষ্কার করে কিছু বলেনি।

তবে গতকাল নেতানিয়াহু জানান, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েল গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে।

তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েল গাজার শাসনভার নিতে আগ্রহী নয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট জানান, যুদ্ধের পর হামাস বা ইসরায়েল, কেউই গাজা শাসন করবে না।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

14h ago