লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হামাস উপপ্রধান নিহত, সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

বিশ্লেষকদের মতে, লেবাননে সরাসরি হামলার ফলে প্রায় তিন মাস ধরে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাত গাজার গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরি ও অপর নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরি ও অপর নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ড্রোন হামলা চালিয়ে হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল–আরোরিকে হত্যার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা 'যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত' রয়েছে।

আজ বুধবার এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।

লেবাননের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলায় সংঘাত আরও 'ছড়িয়ে' পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। 

লেবাননের এক উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে সালেহ আল-আরোরির (৫৭) মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে বলেন, এই হামলায় আরোরির দেহরক্ষীরাও প্রাণ হারিয়েছে।

লেবাননের স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ড্রোন হামলায় আরোরির সঙ্গে আরও ছয় জন প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছেন দুই হামাস সামরিক কমান্ডার ও অপর চার সদস্য।

লেবাননের অপর এক কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেন। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল হামাস টিভিতেও আরোরির মৃত্যুসংবাদ প্রচার করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি সরাসরি আরোরির মৃত্যুর বিষয়ে মন্তব্য করেননি। তবে তিনি জানান, এই হামলার পর থেকে সেনাবাহিনী 'আত্মরক্ষা ও আক্রমণ—উভয় দিক দিয়েই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। আমরা যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত।'

গাজায় হামাসের কোনো কমান্ডার নিহত হলে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর থেকে হামাসকে নির্মূলের সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর আরোরিই হলেন সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের হামাস নেতা যিনি ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এবং একইসঙ্গে, এটাই ছিল এই সংঘাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে প্রথম সরাসরি ইসরায়েলি হামলা।

বিশ্লেষকদের মতে, লেবাননে সরাসরি হামলার ফলে প্রায় তিন মাস ধরে চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাত গাজার গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সালেহ আল-আরোরি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
সালেহ আল-আরোরি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

হামাস জানিয়েছে, আরোরি নিহত হলেও এর অর্থ এই নয় যে হামাস পরাজিত হয়েছে।

এই হামলাকে 'লেবাননের বিরুদ্ধে গুরুতর সহিংসতা ও বিপজ্জনক উদ্যোগ' বলে অভিহিত করে। সংগঠনটি অঙ্গীকার করেছে, এই হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি পেতে হবে।

হামলার পর হামাসের অন্যতম প্রধান মিত্র ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, 'বৈরুত শহরের কেন্দ্রে সালেহ আল-আরোরি ও তার সঙ্গীদের হত্যার অপরাধকে লেবানন এবং এর জনগণ নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরোধের বিরুদ্ধে একটি বিপজ্জনক আগ্রাসন বলে মনে করে।'

এই অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের 'প্রতিক্রিয়া ও সাজার' মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গোষ্ঠীটি।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এই হত্যার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, 'এই হামলার লক্ষ্য লেবাননকে এই যুদ্ধের সঙ্গে আরও জড়িয়ে ফেলা'।

হামাসের নির্বাসিত নেতা আরোরির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ, তিনি সংগঠনটির অসংখ্য হামলার নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী।

এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলাকে কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, 'ইসরায়েল লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে ও চলমান সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।'

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপপ্রধান সালেহ আল-আরোরির বয়স ৫৭ বছর। তিনি হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার ছিলেন। তিনি হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। তিনি হামাস ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সমন্বয় করার জন্য লেবাননে অবস্থান করছিলেন।

হামাস নেতৃবৃন্দের বৈঠকে প্রয়াত নেতা আরোরি (বাম থেকে দ্বিতীয়) ও সংগঠনটির প্রধান ইসমাইল হানিয়া (ডান থেকে দ্বিতীয়) এবং অন্যান্য নেতারা। ফাইল ছবি: এএফপি
হামাস নেতৃবৃন্দের বৈঠকে প্রয়াত নেতা আরোরি (বাম থেকে দ্বিতীয়) ও সংগঠনটির প্রধান ইসমাইল হানিয়া (ডান থেকে দ্বিতীয়) এবং অন্যান্য নেতারা। ফাইল ছবি: এএফপি

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায়। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য মতে, এই হামলায় প্রায় এক হাজার ১৪০ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে হামাসের সদস্যরা। তাদের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫০ জন। এ ঘটনার পর একইদিনে হামাসকে নির্মূলের উদ্দেশ্যে গাজার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের নির্বিচার ও নিরবচ্ছিন্ন স্থল ও বিমানহামলায় এখন পর্যন্ত গাজার ২২ হাজার ১৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে আরও অসংখ্য মরদেহ। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনি হতাহতের তথ্য জানায় গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago