গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪ হাজার শিশু নিহত

ইসরায়েলি বিমানহামলায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ হাতে শোকাহত পরিবারের সদস্যরা। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি বিমানহামলায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ হাতে শোকাহত পরিবারের সদস্যরা। ছবি: এএফপি

গাজা চলমান সংঘাতে অন্তত চার হাজার আট শিশু নিহত হয়েছে। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাহামলায় নিহতের সংখ্যা নয় হাজার ৭৭০ ছাড়িয়েছে।

গতকাল রোববার এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আল-আকসা হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, রোববার বিকেলে গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত বুরেজি শরণার্থীশিবিরের এক স্কুলের কাছে একাধিক বাড়িতে ইসরায়েল বিমানহামলা চালালে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

এই শিবিরে প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ বাস করেন। বৃহস্পতিবারেও এখানে হামলা চালায় ইসরায়েল।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোট তিনটি শরণার্থীশিবিরে হামলা চালায় ইসরায়েল।

এসব হামলায় গাজার আল-মাঘাজি ও জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে ৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।

আল-মাঘাজি শিবিরের বাসিন্দা আরাফাত আবু মুশাইয়া আল-জাজিরাকে জানান, ইসরায়েলের বিমানহামলায় বেশ কয়েকটি বহুতলবিশিষ্ট দালান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এই দালানগুলোতে গাজার অন্যান্য অংশ থেকে পালিয়ে আসা পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েল বিমানহামলা চালানোর পরের দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স
মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েল বিমানহামলা চালানোর পরের দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

রোববার ভোরে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আরাফাত বলেন, 'এটা (ইসরায়েলের হামলা) গণহত্যার শামিল'।

'এখানে যারা ছিলেন, তারা সবাই শান্তিকামী। আমি সবার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি। পারলে প্রমাণ করুন, এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে কোনো (হামাসের) যোদ্ধা আছেন', যোগ করেন আরাফাত।

ইসরায়েলের বাহিনী উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে দক্ষিণে আসার নির্দেশ দিলে অসংখ্য মানুষ আল-মাঘাজি শিবিরে এসে উপস্থিত হয়। একটি আবাসিক এলাকায় এই শিবির নির্মাণ করা হয়, যেটাকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর থেকে আগতদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও, এই শিবির হামলামুক্ত থাকেনি।

সাঈদ আল-নেজমা (৫৩) জানান, বিস্ফোরণের সময় তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন।

'সারা রাত আমরা ভাঙা পাথরের নিচ থেকে মৃতদের টেনে বের করি। আমরা শিশু ও বড়দের মরদেহ খুঁজে পাই, যাদের শরীর থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও মাংস খুলে আলাদা হয়ে গেছে', যোগ করেন তিনি।

রোববার আবারও ইসরায়েলি বিমান থেকে লিফলেট ফেলে উত্তর গাজার বাসিন্দাদের চার ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণে চলে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। এরপর উপত্যকার মূল উত্তর-দক্ষিণ মহাসড়কে পায়ে হেঁটে অসংখ্য মানুষকে দক্ষিণের দিকে যেতে দেখা যায়। হাতে করে যতটুকু সহায়-সম্বল নিতে পেরেছেন, তাই নিয়ে তারা অজানার পথে পাড়ি দেন। কারো কারো সঙ্গে গাধায় টানা ছোট কার্ট দেখা যায়।

এক ব্যক্তি আল-জাজিরার সাংবাদিককে জানান, তিনি আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দুই হাত উপরে তুলে প্রায় ৫০০ মিটার রাস্তা হেঁটেছেন, কারণ সড়কের পাশে ইসরায়েলি সেনারা বসে ছিলেন।

অপর এক ব্যক্তি জানান, চলার পথে সড়কে বিধ্বস্ত গাড়িতে অসংখ্য মরদেহ দেখেন তিনি।

এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিলিস্তিনি বলেন, 'শিশুরা প্রথমবারের মতো ট্যাংক দেখেছে। হে বিশ্ব! আমাদের ওপর দয়া কর।'

আল জাজিরার হামি মাহমুদ খান ইউনিস এলাকা থেকে জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ধারণা করা যাচ্ছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোর ওপর পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'গাজার কেন্দ্রে ও দক্ষিণে শরণার্থী শিবিরে বারবার বিমানহামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। যার ফলে, দক্ষিণে যেয়ে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যাবে, ইসরায়েল এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও মানুষ তাতে আস্থা পাচ্ছে না।'

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ২৩ লাখের মধ্যে ১৫ লাখ এখন বাস্তুচ্যুত।

রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক অঘোষিত সফরে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরে এসে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে বিমানহামলার পর আগুন নেভাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে বিমানহামলার পর আগুন নেভাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

এই বৈঠকে ব্লিঙ্কেন আবারও ওয়াশিংটনের অবস্থান পরিষ্কার করেন। যুক্তরাষ্ট্র চায় গাজায় 'মানবিক বিরতি' চালু করে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ও বিদেশী পাসপোর্টধারীদের নিরাপদে বের করে আনতে।

কিন্তু একইসঙ্গে, পুরোপুরি অস্ত্রবিরতির বিপক্ষেও অবস্থান নিয়েছে দেশটি। এমন কোনো উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাসী নয়, যার ফলে ইসরায়েল হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়।

মিশর ও জর্ডান যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে। অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এই দুই দেশ গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও হামলা বন্ধ করতে অস্বীকার করেছেন।

মাঘাজি শরণার্থীশিবিরে বিমানহামলার পর আপনজনদের মরদেহ খুঁজে বের করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
মাঘাজি শরণার্থীশিবিরে বিমানহামলার পর আপনজনদের মরদেহ খুঁজে বের করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

নেতানিয়াহু রবিবার দক্ষিণ ইসরায়েলের রামোন বিমানঘাঁটিতে স্থল ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, 'আমাদের জিম্মিরা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। আমি এই কথা আমাদের বন্ধু ও শত্রু, উভয়ের উদ্দেশে বলছি। আমরা তাদেরকে পরাজিত না করা পর্যন্ত (হামলা) চালিয়ে যাব।'

ইসরায়েলের দাবি, তারা শুধু হামাসের যোদ্ধা ও অবকাঠামো লক্ষ করে হামলা চালাচ্ছে। দেশটি অভিযোগ করেছে, হামাস বেসামরিক ব্যক্তি ও স্থাপনাকে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েলের হামলা বাছবিচারহীন, কারণ এতে প্রতিদিনই অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছেন।

Comments

The Daily Star  | English

'Shoot directly': Hasina’s order and deadly aftermath

Months-long investigation by The Daily Star indicates state forces increased deployment of lethal weapons after the ousted PM authorised their use

1d ago