একই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদ

লালমনিরহাট শহরে একই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদ। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

৮০ বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে একই আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে আছে মন্দির ও মসজিদ। সম্প্রীতির এ দৃষ্টান্ত রয়েছে লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ী এলাকায়। আলাদা ধর্মের মানুষের আলাদা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দুটির অবস্থান মাত্র ৬ ফুট ব্যবধানে। মন্দিরটির নাম কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী শ্রীশ্রী দূর্গা ও কালী মন্দির আর মসজিদটির নাম পুরান বাজার জামে মসজিদ।

একই সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন মন্দিরে পুজার্চনা করেন আর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন মসজিদে নামাজ আদায় করেন। মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় মন্দিরে বন্ধ রাখা হয় বাদ্যযন্ত্র বাজানো। ৮০ বছর ধরে একই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদে পৃথক ধর্মের মানুষ নিজনিজ ধর্মচর্চা করে আসছেন কিন্তু কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি কোনো বিবাদ।

ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক একই আঙ্গিনার মন্দির-মসজিদ দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। তারা স্থানটি ঘুরে দেখেন। মন্দিরে আসা পূজারী আর মসজিদে আসা মুসল্লিদের সাথে কথা বলেন। এখানে এসে তারা ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনকে মানবতার বন্ধন হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।

ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী মেহের আলী (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি একই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদ থাকার কথা শুনে তা দেখতে আসেন। এটি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। কয়েক যুগ ধরে একই আঙ্গিনায় দুটি পৃথক ধর্মের পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে কিন্তু কোনো দিনই কোনো ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতির ঘাটতি হয়নি।

'এই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদ মানবতার চিরন্তন বন্ধন হিসেবে উদাহরণ তৈরি করেছে,' তিনি বলেন।

মন্দির ও মসজিদ কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদ থাকলেও আঙ্গিনাটির মালিক অন্যজন। মন্দিরটি রয়েছে আট শতাংশ জমিতে আর মসজিদটি রয়েছে পাঁচ শতাংশ জমিতে। আঙ্গিনার জমির পরিমান ১২ শতাংশ। মন্দিরটি স্থাপিত হয় ১৮৩৮ সালে আর মসজিদ স্থাপিত হয় ১৯৪৩ সালে।

মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা এখানে সম্প্রীতির সাথে অবস্থান করছি। আমাদের মাঝে কোনো দিনই কোনো হিংসা জন্মায়নি। উভয় ধর্মের মানুষের মাঝে কোনোদিনই কথা কাটাকাটি পযর্ন্তও ঘটেনি।'

'আমরা এখানে খুবই ভালো আছি। বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এবং আমাদের সাথে মতিবিনিময় করেন,' তিনি বলেন।

মন্দির কমিটির সভাপতি ও পুরোহিত শঙ্কর চক্রবর্তী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মন্দিরে পূজার্চনা করতে আমরা কখনো বাঁধার সম্মুখীন হইনি। নামাজ চলাকালীন আমরা সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো বন্ধ রাখি।'

'প্রতিবছর এই মন্দিরে দূর্গা ও কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মন্দিরে প্রতিদিন নিত্যপূজা করা হয়ে থাকে। পূজা চলাকালীন মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন,' তিনি বলেন।

শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, মন্দির-মসজিদের আঙ্গিনার জমির মালিক অন্যজন। তারা সম্প্রতি জমিটি বিক্রির প্রন্তুতি নিয়েছে। 'জমি কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। সরকার জমিটুকু কিনে মন্দির-মসজিদকে দান করলে আমরা উপকৃত হবো। এতে একই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদ ইতিহাস অনন্তকাল ধরে উদাহরণ হয়ে থাকবে,' তিনি বলেন।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম দুলাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে মন্দিরে নির্বিঘ্নে ধর্মচর্চা করতে আমরা সবসময়ই সহযোগিতা করে থাকি। একই আঙ্গিনায় মন্দির-মসজিদ শুধু লালমনিরহাটের জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ নয়, এটি সারাদেশের ধর্মীয সম্প্রীতির উদাহরণ। আমরা এখানে উভয় ধর্মের মানুষ ভালো আছি, সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছি।' 'আঙ্গিনার জায়গাটুকু সরকারি ব্যবস্থায় ক্রয় করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে দান করলে ধর্মীয় সম্প্রীতির এই জায়গাটি অনন্তকাল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে,' তিনি বলেন।

'মন্দির-মসজিদের আঙ্গিনার জায়গাটুকু নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। শুধু সরকারই পারে আমাদেরকে দুশ্চিন্তামুক্ত করতে,' তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

5h ago