তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরের জনপদ

রোববার সকালে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে ছুটেছেন মানুষ। ছবিটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়

কয়েকদিন ধরে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে তীব্র ঠাণ্ডা ও ঘন কুয়াশা অব্যাহত আছে। ফলে, ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না কৃষিজীবী মানুষ। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, গঙ্গাধর, জিঞ্জিরাম ও ধরলা নদীর তীরবর্তী গ্রাম ও চরের কষ্ট বেড়েছে।

এছাড়া শীত নিবারণের প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতে না পেরে দুর্ভোগে আছেন নিম্ন-আয়ের মানুষ। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে অনেকে শুকনো খড় বা পাতায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের কৃষক কুতুব উদ্দিন (৬০) জানান, তারা যখন ফসলের খেতে কাজ করতে যান। তখন এত শীত লাগে যে, কাজ না করে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। কিছুক্ষণ বাইরে থাকলে হাত-পা অসাড় হয় যায়।

তিনি বলেন, 'হামরাগুলা যখন ফসলের জমিত কাজ করি তথন খ্যাতের বগলোত খড়-কুঠাত আগন ধরে দিয়া রাখি। থেতোত কাজ কইরবার সময় মাঝেমাঝে আসি শরীর গরম করি।'

লালমনিরহাট শহরের শহীদ শাহজাহান কলোনির ভ্যানচালক মমিনুল ইসলাম (৪৪) বলেন, 'জারের ঠ্যালায় হামরা ঘর থাকি বাইরাত যাবার পাবার নাইকছি না। জার ও কুয়াশা ঠেলিয়া হামাকগুলাক বাইরোত যাওয়া নাগে। বাইরোত না গেইলে হামাক কাই কাজি দিবে।'

তিনি আরও বলেন 'বিশেষ করি সকালেঅত ও রাতোত হামাকগুলাক খুব জার নাগে। এত জার পরে যে হামরাগুলা সহ্য কইরবার পাই না।'

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জোড়গাছ গ্রামের খেতমজুর মণীন্দ্র নাথ বর্মন (৫৫) জানান, সংসার চালাতে তারা শীত ও কুয়াশার মধ্যে মাঠের কাজ করছেন। শীতের তীব্রতা এত বেশি যে, প্রতিদিন বাইরে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেকে দৈনিক মজুরিতে না গিয়ে চুক্তিতে কাজ শুরু করছেন।

গরম হোক বা ঠাণ্ডা, তার মতো অনেক শ্রমিকের কাজ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'ঠাণ্ডার দিনোত হামারগুলার কষ্ট বেশি হয়। হামারগুলার তেমন গরম কাপড়চোপড় নাই। বাজার থাকি গরম কাপড় কিনবার সাধ্যও হামারগুলার নাই।'

একই গ্রামের নাজির হোসেন (৫০) জানান, এখন তার বেশিরভাগ দিন কাটছে শুকনো পাতায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে। কারণ তার কোনো শীতবস্ত্র নেই।

তিনি বলেন, 'ঠাণ্ডার কারণে হামারগুলার কামাইও কমি গ্যাইছে। মাইনসের কাছোত হাওলাদ করি সংসার চালবার নাইকছোং।'

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার সকাল ৯টায় লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কুড়িগ্রামে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তীব্র শীতে শ্রমিকরা ফসলের মাঠে কাজ করতে না পারলে কৃষক ও ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তাই শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে অনেক কৃষক খেতে কাজ করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Over 102,000 annual deaths in Bangladesh linked to air pollution

Study also finds air pollution behind 266 million sick days every year hurting the economy

1h ago