পুরুষের প্রোস্টেট ক্যানসার কেন হয়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
প্রোস্টেট ক্যানসার পুরুষদের এক ধরনের ক্যানসার। বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
প্রোস্টেট ক্যানসার সম্পর্কে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কমিউনিটি বেজড ক্যানসার হাসপাতালের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ও বাংলাদেশ ক্যানসার ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।
প্রোস্টেট ক্যানসার কী
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, পুরুষদের শরীরে একটি গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি থাকে যার নাম প্রোস্টেট গ্রন্থি। এর আকার অনেকটা আখরোটের মতো, যা মূত্রথলির নিচে এবং মূলনালীর চারপাশে অবস্থিত। এর মধ্য দিয়ে মূত্র ও বীর্য প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া প্রোস্টেট গ্রন্থির কাজ হচ্ছে বীর্য তৈরি হয় এখান থেকে এবং বীর্য শুক্রাণুকে বহন করে।
প্রোস্টেট গ্রন্থিতে যদি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হয় অর্থাৎ প্রোস্টেট গ্রন্থির কোষগুলোর যদি অনিয়ন্ত্রিত, অস্বাভাবিক বিভাজন হয় এবং চাকা, পিণ্ড বা টিউমারের মতো হয় যেটি ছড়িয়ে পড়তে পারে আশেপাশে বা দূরে। আর এই ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার থেকেই প্রোস্টেট ক্যানসার হয়।
পুরুষরা যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে অন্যতম প্রোস্টেট ক্যানসার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রোস্টেট গ্রন্থির কোষগুলো বাড়তে শুরু করে। সাধারণত খুব ধীরে ধীরে বড় হয় এবং প্রোস্টেট গ্রন্থির মধ্যই সীমাবদ্ধ থাকে। এটা শরীরের খুব একটা ক্ষতি করে না, তেমন একটা চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোষগুলোর বিভাজন আগ্রাসী রকমের হয়, দ্রুত অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে তখন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
কেন হয়
প্রোস্টেট ক্যানসার কেন হয় তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন-
১. বয়স যত বাড়ে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর প্রোস্টেট ক্যানসার বেশি হয়।
২. জাতিগত কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন- কালো চামড়ার পুরুষদের মধ্যে এই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
৩. প্রোস্টেট ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস যদি থাকে তাহলে তাদের ঝুঁকি বেশি। বিশেষত নিকট আত্মীয়, রক্তের সম্পর্কের কারো যদি প্রোস্টেট ক্যানসার হয় তাহলে ঝুঁকি বেশি।
৪. যদি কারো পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ইতিহাস থাকে তাদের প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ারও ঝুঁকি বেশি থাকে।
৫. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
লক্ষণ
প্রোস্টেট ক্যানসার হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দেয়। রোগের জটিলতা দেখা দিলে এবং ক্যানসার কোন স্তরে তার ওপর ভিত্তি করে লক্ষণ ভিন্ন হয়।
১. প্রস্রাব করতে সমস্যা হওয়া, প্রস্রাবের প্রবাহ ব্যাহত হওয়া, কমে যাওয়া।
২. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
৩. বীর্যের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
৪. হাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, প্রোস্টেট ক্যানসার হাড়ে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি।
৫. ওজন কমে যাওয়া।
৬. ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা যৌনশক্তি হ্রাস পাওয়া।
ক্যানসার বেড়ে গেলে আরও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। যেমন- ক্যানসার বেশি বেড়ে গেলে মূত্রথলিতে ছড়াতে পারে। রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে দূরের অঙ্গে ছড়াতে পারে। তখন অঙ্গ অনুযায়ী কিছু জটিলতা দেখা দেয়। হাড়ে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ব্যথা হয়। প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
চিকিৎসা
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, প্রোস্টেট ক্যানসার যত দ্রুত শনাক্ত করা যাবে চিকিৎসা তত সহজ হবে। লক্ষণ দেখা দিলে বা প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়েছে কি না তার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। মলদ্বারে ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশনের (ডিআরই) মাধ্যমে বোঝা যায় প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়েছে কি না। এ ছাড়া রক্তের একটি পরীক্ষা আছে প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ), এই পরীক্ষা করে প্রোস্টেট ক্যানসার স্ক্রিনিং করা যায়। বায়োপসিতে ক্যানসার নিশ্চিত হলে অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার কতখানি ছড়িয়েছে, কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ণয় করা হয়। ক্যানসারের পর্যায় ও রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ভর করে।
প্রোস্টেট ক্যানসার নির্মূলে প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন বা বিকিরণ চিকিৎসা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া কেমোথেরাপি, শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইমিউন থেরাপি, হরমোনের ঘাটতি পূরণের জন্য হরমোন থেরাপি দেওয়া হয় রোগীকে।
প্রতিরোধ
শরীরের ওজন যাতে না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস ও সুশৃঙ্খল জীবনাচার মেনে চলতে হবে। ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল, শাকসবজি এবং শস্য ও দানা জাতীয় খাবার খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে বিশেষ করে বয়স যদি ৫০ বছরের বেশি হয়। প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত হলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
Comments