২৫ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে

খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দেশের ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ২৫টি ব্যাংক তাদের খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছে। যদিও বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা এ খাতের জন্য এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে এই ২৫টি ব্যাংকের মধ্যে ১১টির খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, খেলাপি ঋণের হার কম থাকা ব্যাংকগুলোতে সুশাসন বজায় আছে, তাদের পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে না- যা এই ব্যাংকগুলোকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছে।

তারা জানান, যদিও শুধু খেলাপি ঋণের হার কম থাকা সবসময় ভালো আর্থিক অবস্থার নির্দেশ করে না। কারণ নতুন ব্যাংকগুলো বড় আকারের ঋণ বিতরণ করতে পারেনি, তাই অন্তত তাদের খেলাপি ঋণের হার কম হওয়াটা স্বাভাবিক।

তারা আরও বলেন, এছাড়া কিছু ব্যাংক ইতিবাচক ব্যালেন্স শিট দেখিয়ে প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন রাখে।

সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণে থাকা ১১টি ব্যাংক হলো- ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ, সিটি ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন।

এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক ও কমিউনিটি ব্যাংক হলো নতুন। এই তিনটি ব্যাংক এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এ কারণে তাদের খেলাপি ঋণের হার সর্বনিম্ন।

কমিউনিটি ব্যাংক ২০১৮ সালে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছিল এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ও সিটিজেনস ব্যাংক ২০২০ সালে নিবন্ধন পেয়েছিল।

এদিকে, দেশে কাজ করা বিদেশি ব্যাংকগুলো সুশাসনের মাধ্যমে কম খেলাপি ঋণের হার বজায় রেখেছে।

অন্যদিকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক) খেলাপি ঋণের হার ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকটি কঠিন তারল্য পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু সোনালী ব্যাংক সম্প্রতি বড় ঋণ বিতরণে ধীরগতির কৌশল অবলম্বন করে খেলাপি ঋণ কমাতে সক্ষম হয়েছে।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা এক বছর আগের ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ থেকে কিছুটা কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ রেকর্ড ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

এর মধ্যে, চলতি এ বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে।

এই তিন মাসে ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক তাদের খেলাপি ঋণ কমাতে পেরেছে।

চলতি বছরের জুনে ব্র্যাক ব্যাংকের খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা এক বছর আগের ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে কম।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসাইন বলেন, 'আমাদের ঋণ পুনরুদ্ধার দল বেশ কর্মঠ। এ কারণেই আমরা খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের নিচে রাখতে পেরেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্র্যাক একটি এসএমই-কেন্দ্রিক ব্যাংক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের আচরণ বড় ঋণগ্রহীতাদের চেয়ে ভালো।'

ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মইনুদ্দিন বলেন, 'ব্যাংকিং খাতে সুশাসনই প্রধান ফ্যাক্টর। কিন্তু, কেউ কেউ যখন সুশাসনের কারণে খেলাপি ঋণের হার কম রেখেছে, তখন অনেকে আবার প্রকৃত পরিসংখ্যান গোপন করে একই সুবিধা ভোগ করছে।'

'সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ অধিকাংশ ব্যাংক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে,' যোগ করেন তিনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'একটি ভালো ব্যাংক গড়ে তুলতে ভালো পরিচালনা পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্ট টিম প্রয়োজন।'

ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'ভালো পরিচালনা পর্ষদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা নিষ্ঠাবান ও দক্ষ ম্যানেজমেন্ট টিম গড়ে তুলতে পারে।'

'বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের হার বেশি থাকা ব্যাংকগুলোতে পরিচালনা পর্ষদ পরিচালনা কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে,' আরও বলেন তিনি

ব্র্যাক, পূবালী ও ইবিএলকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পরিচালনা পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্ট টিমের কার্যক্রম সঠিকভাবে নির্ধারণ করা গেলে খেলাপি ঋণের হার কমানো সম্ভব।'

এ প্রেক্ষাপটে যারা দেশে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চান তাদের তথ্য যাচাইয়ের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বছরের জুন পর্যন্ত ৩৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে। এই  সংখ্যা ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের একটি ইঙ্গিতও দিচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

India bans select jute, fabric imports from Bangladesh via land routes

Today's action by DGFT came a little more than one month after India had imposed port restrictions on the import of certain goods like readymade garments and processed food items from Bangladesh via land routes

43m ago