ফার্স্ট সিকিউরিটির ৫৬ শতাংশ ঋণ এস আলম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দখলে

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা শরিয়াহভিত্তিক ছয় ব্যাংকের অন্যতম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবি) মোট বিতরণ করা ঋণের ৫৬ শতাংশ নিয়েছে এই শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট  প্রতিষ্ঠানগুলো।

ব্যাংকটির একটি অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুসারে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণ ছিল ৬০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েছে ৩৩ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশ।

এসব ঋণ চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৪টি শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এই ব্যাংকটিরও চেয়ারম্যান ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকসহ ১১ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন পর্ষদের অধীনে গত ১০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগ পরিদর্শন পরিচালনা করা হয়।

নিয়ম লঙ্ঘন করে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ, অতিমূল্যায়িত জামানত, ঋণ পুনঃতফসিলে অনিয়ম ও খেলাপি ঋণকে নিয়মিত হিসেবে শ্রেণিভুক্তকরণসহ ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পায় পরিদর্শক দল।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামে ব্যাংকটির ২৪ শাখা থেকে ৩৩ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটি গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছে।

এতে আরও বলা হয়, এসব অনিয়মের ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। গ্রাহকদের আস্থা কমেছে।

এসব অনিয়মের কারণে ব্যাংকের সব কর্মকর্তা ও অংশীদারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

ব্যাংকটির চট্টগ্রাম শাখাগুলো হলো—জুবিলী রোড, আন্দরকিল্লা, কদমতলী, পাহাড়তলী, ফতেহাবাদ, খাতুনগঞ্জ, হাটহাজারী, খুলশী, রাহাত্তারপুল, হালিশহর, বন্দরটিলা, দোভাষী, কুমিরা, সদরঘাট, চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, বোয়ালখালী, মোহরা, আগ্রাবাদ, চন্দনাইশ, পটিয়া, পটিয়া মহিলা, পাঁচলাইশ ও বদ্দারহাট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিদর্শন দলের এক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব শাখা শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে। যদিও অধিকাংশ ঋণই ফেরত পাওয়ার মতো অবস্থায় নেই।'

পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়—মেসার্স বাণিজ্য বিতান, মেসার্স ডিলাক্স ট্রেডিং করপোরেশন, ইকো ট্রেড কর্নার, গ্লোব ট্রেডার্স, ইমেজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আবদুল আউয়াল অ্যান্ড সন্স, মুরাদ এন্টারপ্রাইজ, সুপ্রিম বিজনেস সেন্টার, মোমেন্টাম বিজনেস সেন্টার, অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল, প্রেসাইস ট্রেড সেন্টার, রয়েল এন্টারপ্রাইজ, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, শাহ আমানত ট্রেডার্স, কে এন্টারপ্রাইজ, সাগর করপোরেশন ও মিনহাজ করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ পেলেও ঋণ আদায় হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিদর্শন দলের সদস্য।

এসব প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করা বেশিরভাগ ঋণ এখন খেলাপি। ফলে বেড়েছে ব্যাংকের সামগ্রিক খেলাপি ঋণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকায়। এর আগের বছর ছিল দুই হাজার ১৫ কোটি টাকা।

এস আলম গ্রুপের ঋণ অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে গত নভেম্বরে চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৪ শাখার ব্যবস্থাপকসহ ১৯৪ কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। পরে তাদেরকে ঢাকায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

শিগগিরই তাদের বরখাস্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা।

এসব অনিয়মের দায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীও এড়াতে পারে না বলে মত তাদের।

সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর সঙ্গে ডেইলি স্টার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্থলাভিষিক্ত হওয়া মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

১৯৮৫ সালে মোহাম্মদ সাইফুল আলম এস আলম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও তার ছেলে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের আত্মীয়। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।

শুধু ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক নয়, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত এই শিল্পগোষ্ঠীটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে হাজারো কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে মুহাম্মদ সাইফুল আলমের নম্বরে ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এই শিল্পগোষ্ঠীর নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিকের সঙ্গে কিছু্দিন আগে যোগাযোগ করা হলে তিনি বর্তমানে গ্রুপটির সঙ্গে নেই বলে জানান।

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

43m ago