শীতকালীন সবজির চারার দাম বেড়েছে কয়েক গুণ

সবজি চাষ, সবজি, বগুড়া, সবজি চারা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শীতকালীন সবজি চাষ, ডলার সংকট, বীজ,
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামের কৃষকরা প্রতিকূল আবহাওয়ার থেকে চারা রক্ষায় ছাউনি ব্যবহার করছেন। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় শীতকালীন সবজির চারার দাম বেড়েছে। দেশের প্রধান সবজি চারা উৎপাদন এলাকা বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে শীতকালীন সবজির চারা চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে না পারায় গত বছরের তুলনায় এবার বীজের দাম বেশি ছিল।

দাম বাড়ার আরেকটি কারণ হলো প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ নেই ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে অনেক চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওই এলাকার চারা উৎপাদনকারীরা জানান, অতিরিক্ত গরমে তাদের প্রায় অর্ধেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

চারা বিক্রেতারা জানান, প্রায় ৩৫-৪০টি জেলার কৃষক শীতকালীন সবজির চারা কিনতে শাহনগর এলাকায় আসেন।

কৃষকরা বলছেন, চারার দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেশি হবে। তাই ফলন ভালো না হলে লোকসান গুনতে হবে।

শাহনগর গ্রামে মরিচের চারা কিনতে যান জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কৃষক রাশেদুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ১০ জন এখানে মরিচের চারা কিনতে এসেছি, কিন্তু এ বছর চারার দাম অনেক বেশি। গত বছর প্রতি হাজার মরিচের চারা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাওয়া গেলেও এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা।'

গত বছর বেগুনের চারা প্রতি হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও ফুলকপির চারা প্রতি হাজার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৮০০ টাকা ও ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

গাইবান্ধা থেকে শীতকালীন চারা কিনতে আসা কৃষক ফয়জুল ইসলাম বলেন, গত বছর টমেটোর চারা প্রতি হাজার ৪০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ২৫০ থেকে ৩০০ জন কৃষক বছরে প্রায় ৩০-৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেন।

শাজাহানপুর উপজেলার কৃষক নাদিম ইসলাম বলেন, 'আমার এবার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এছাড়া, চলতি গ্রীষ্মে কৃষকরা সবজির ভালো দাম পাওয়ায় অনেকে চাষের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। তাই এ বছর ফলন কমে গেলে বা দাম কমে গেলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।'

মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বাসিন্দা রেখা দত্ত জানান, তিনি প্রতি বছর শীতকালে পরিবারের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা রোপণ করেন। কিন্তু গত সপ্তাহে বেগুনসহ বেশ কিছু সবজির চারা কিনতে বাজারে গিয়ে দেখেন, প্রতি পিস চারার দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ।

তিনি বলেন, 'এক বছরের মধ্যে দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধির বিষয়টি হতাশাজনক।'

শাহনগর সবজি মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, 'এ বছর পাঁচ কোটি চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু, প্রায় ১৫-২০ দিন আগে তীব্র গরমে ৫০ শতাংশ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বীজ ও পলিথিনের দামের পাশাপাশি শ্রম ব্যয় বেড়েছে।'

'চাহিদা বেশি ও সরবরাহ কম থাকায় দাম দ্রুত বেড়েছে,' বলেন তিনি।

জিল্লুর বীজ ভাণ্ডারের মালিক জিল্লুর রহমান বলেন, 'অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টির কারণে প্রথম দফার চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া এ বছর বেশি দামে বীজ কিনতে হয়েছে।'

চারার দাম বৃদ্ধি সবজির দামে প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমেনা খাতুন বলেন, 'ফলন ভালো হলে কাঁচাবাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না। ফলন ভালো না হলে দাম কিছুটা বাড়বে।'

শাহনগর গ্রামের বোরহান নার্সারির মালিক আব্দুল লতিফ জানান, এ বছর সবজির বীজের দাম কেজিতে ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা বেড়েছে।

ঢাকার বীজ আমদানিকারক ও বিক্রেতা ওমর আল ফারুক বলেন, এ বছর প্রচুর পরিমাণে বীজ আমদানি করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'এখন ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। বীজের দাম বৃদ্ধির পেছনে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ বলে আমার মনে হয়।'

তিনি দাবি করেন, প্রয়োজনীয় বীজের মাত্র অর্ধেক আমদানি করতে পেরেছেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে সবজি বীজের চাহিদা ছিল ২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন এবং উৎপাদিত হয়েছে ৩ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

7h ago