ধান চাষে ‘সমলয়’ পদ্ধতি

একটি চমৎকার উদ্যোগ যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল

একটি চমৎকার উদ্যোগ যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে একটি সমলয় কৃষি খামার। ছবি: স্টার

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহায়তায় একসঙ্গে অধিক জমিতে চাষাবাদ জনপ্রিয় করতে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার একটি সরকারি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও গত ২ বছরে তা সফলতার মুখ দেখেনি।

প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল ৫০ থেকে ৬০ একর জমিতে ট্রান্সপ্লান্টার, হার্ভেস্টার এবং অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো এবং খরচ কমানো। এ জন্য কৃষকের খণ্ড খণ্ড জমির আইল ভাঙতে রাজি হতে হবে।

২০২১ সালে সরকার ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্প হাতে নেয়। কীভাবে 'সমলয়' পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করতে হয় কৃষকদের তা দেখানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৬১টি জেলায় ১১০টি ব্লকে হাইব্রিড এসএল-৮ জাতের বোরো ধান চাষ করে। প্রদর্শনীর জন্য মোট ৫ হাজার ৫০০ একর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। 

একটি চমৎকার উদ্যোগ যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল
ছবি: সংগৃহীত

তবে কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষক এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় এ বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

কোনো কোনো জায়গায় কৃষকরা পদ্ধতিটি গ্রহণ করতে রাজি হলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে সক্ষম হয়নি। 

প্রকল্প পরিচালক তারিক মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভর্তুকিসহ ৫০-৭০ শতাংশ ছাড়ে কৃষকদের মধ্যে ৫১ হাজার ৩০০টি মেশিন বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, 'সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ' শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে মাত্র ১৬ হাজার ২৩৬টি মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষককে সমলয় চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করানো এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

তিনি বলেন, 'সরকার যদি আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার জনপ্রিয় করতে পারে তাহলে কৃষিকাজে কম শ্রমিক এবং কম বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।'

২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি চালুর সময় কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক জানান, একটি ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে প্রতি একর জমিতে ১ ঘণ্টায় ধানের চারা রোপণ করা যাবে। এতে শ্রমিক বাবদ খরচ প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টাকা কমে যাবে।

প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যেসব জায়গায় সমলয় চাষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেখানে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও চারা তৈরির জন্য ট্রে দেওয়া হয়েছে। চারা রোপণের জন্য ট্রান্সপ্লান্টারগুলোও বিনামূল্যে ব্যবহার করা হয়েছে। ফসল কাটার কাজও বিনামূল্যে করা হবে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ধনবাড়ী উপজেলায় ৫০ একর করে দুটি ব্লকে এবং দেলদুয়ার উপজেলায় একই আকারের একটি ব্লকে সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে।'

ধনবাড়িতে তৃতীয় বারের মতো এই ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ধনবাড়ীর কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তবে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করতে কৃষকরা নিজে থেকে এগিয়ে আসেননি বা উদ্যোগ নেননি।'

তিনি বলেন, 'একই এলাকার জমির মালিক কৃষকরা একসঙ্গে চাষ করতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না। আবার ছোট ছোট জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা সহজ ও সাশ্রয়ী নয়।'

ধনবাড়ি উপজেলার ভাতকুড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় সমন্বিত চাষে অংশ নিয়েছিলেন। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তাদের ফসল স্বাভাবিকের চেয়ে ভালো হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা এক বিঘা জমিতে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাই, কিন্তু সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে ফলন ২৫ থেকে ২৮ মণ পাওয়া যায়।'

আনোয়ার বলেন, 'আমি এবার এলাকার কয়েকজন কৃষককে সঙ্গে নিয়ে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারেনি।' 

টাঙ্গাইলের আরও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে প্রস্তুত, কিন্তু যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিডিং মেশিনের সংকট রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা চাইলে ম্যানুয়ালি বীজতলা তৈরি করতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার এমন উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা করছে যারা সিডিং মেশিন, ট্রান্সপ্লান্টার এবং হার্ভেস্টারের মালিক হবেন এবং সেগুলো ভাড়া দেবেন।'

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago